ফুল ভালবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর শীতকাল মানেই নানারকম ফুলের সমাহার। যারা গ্রামের বাস করেন তাদের অনেকে বাড়ি সামনে উঠোনে কিংবা রাস্তার ধারে ফুলগাছের চাষ করে থাকেন। তবে শহুরে জীবনে এক্ষেত্রে টবই একমাত্র ভরসা। শীতের ফুলের মধ্যে গাঁধা, ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। এছাড়া কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবেনা, হেলিক্রিসাম, অ্যান্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, অ্যাস্টার ইত্যাদি ফুল ফোটে। সেই সব ফুল দেখতে-
ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে নদীয়ার পুরাতন চাপড়া অনেক আগেই ফুল প্রেমীদের কাছে এক এবং অদ্বিতীয় শীতকালীন পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন প্রচুর লোকের আগমন হয় এখন এখানে। তবে এ বছর যারা বড়দিনে এখানে বেড়াতে আসবেন তাদের স্বাগত জানাতে পুরাতন চাপড়ার মাঠের ফুলের বাহার প্রায় নেই বললেই চলে৷ পূর্ণনগরথেকে চাপড়ার রাস্তায় প্রবেশ করলে রাস্তার দুই ধারেই ফুলের চাষ দেখতে পাওয়া যায় ৷
গাঁদা,রজনীগন্ধা,চন্দ্রমল্লিকা,বেবী,পমপম,গ্লাডিওলাস,ডালিয়া,সূর্যমুখী,জারবেরা,এস্টার,গোলাপ ছাড়াও কত রঙ বাহারি ফুলের দেখা মেলে এখানে যা দেখে মুগ্ধ হন সকলেই ।
আর উপরি পাওনা হিসাবে পাবেন পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা আর সন্ধ্যার আগে পাখিদের ঘরে ফেরার কিচিরমিচির।
শহুরে ইঁট,কাঠ,পাথরের, একঘেয়ে নাভিশ্বাস ওঠা ইঁদুর দৌড়ের জীবনের বাইরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে অবশ্যই আপনার গন্তব্য হতে পারে নদীয়ার অন্যতম ও ব্যস্ততম শহর রানাঘাট থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরের গ্রাম পুরাতন চাপড়া তে। ফুলের বাগিচায় পিকনিকের মজাও নিতে পারবেন। কিন্তু এবছর বড় দিনের আগের দিন রবিবার পুরাতন চাপড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল সামান্য কিছু রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা ছাড়া আর তেমন কোন ফুল নেই ৷ চারিদিকে খাঁ খাঁ করছে মাঠ ৷ ফুল চাষিরা জানালেন শীতের প্রথমেই অকাল বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে বিঘা- বিঘা জমির ফুলের ফলন ৷ পড়ে আছে ধূধূ মাঠ ৷ এখন ফের নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করেছেন তাঁরা৷ ফুল চাষিদের কথায় আগামী মাঘ মাসের শেষের দিকে ফের ফুলের দেখা মিলবে এখানে৷ বড়দিন বা নতুন বছরে এবার বেশির ভাগ ফুলই অধরা থেকে যাবে বলে মনে করছেন তারা৷ দেখুন ভিডিও
ফুলপ্রেমীরা তাঁদের প্রিয় ফুলেরবাহার দেখতে হলে আসতে হবে আগামী মাঘ মাসে ৷ এখানে আসতে হলে শিয়ালদা ,লালগোলা অথবা বনগাঁ থেকে প্রথমে রানাঘাটের স্টেশনে আসুন ৷এরপর স্টেশনের বাইরে ৩০ টাকা জন প্রতি টোটো ভাড়ায় অথবা রথতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে পূর্ন নগর হাই স্কুল নেমে সেখান থেকে টোটো বা ভ্যান রিক্সায় পৌঁছে যান ফুলের রাজ্যে ৷ তাছাড়া যদি মনে করেন রথ তলা বাস স্ট্যান্ড থেকে চাপড়া গ্রামে আসার অনেক টোটো পেয়ে যাবেন ৷ রানাঘাট স্টেশনে নেমে টোটো রিজার্ভ করেও চাপড়ার ফুলের বাগানে যেতে পারেন। খরচ বেশি হলেও টোটো রিজার্ভ করে আসাটাই সব চেয়ে বেশি সুবিধাজনক। গাড়ি নিয়ে গেলে পার্কিং-এর জায়গা আছে। এবছর জানুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ফুল দেখতে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ফুলচাষীরা।
শীতের ভোরে ধূসর কুয়াশা নেমেছে ফুলের ক্ষেতে। প্রাকৃতিক মসলিনের সে নেকাব সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে হলুদ গাঁদার দল, গুটিসুটি মেরে শিশিরে ভিজছে চন্দ্রমল্লিকারা আর ডালিয়া? ঋজু গ্রীবায় মাথা দুলিয়ে সগর্বে যেন বলছে সে- ওঠো, জেগে ওঠো সব ফুল।