
দেখুন ভিডিও
কলকাতা : ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ। তবে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামরার মাঝে ‘ল্যান্ডফল’-এর পর সেই ‘ডেনা’ স্থলভাগের দিকে এগোতেই বৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে কলকাতায়। শুক্রবার সকালে ধামরা থেকে ১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরে বালেশ্বরে যত বৃষ্টি হয়েছে, ওই ধামরা থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (সাড়ে তিন গুণ) দূরে কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে অনেক বেশি।

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র গতিবিধি নজরে রাখতে রাতভর নবান্নে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, দুর্যোগ পরিস্থিতির উপরে নজরে রাখতে সারা রাত পুরসভাতেই ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। রাতের দিকে একবার পুরসভার ছাদে উঠেও আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করেন তিনি।

মধ্যরাত থেকে কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলছে। শুক্রবার সকালেও থামেনি বর্ষণ। যার জেরে শহর এবং শহরতলির একাধিক জায়গা জলমগ্ন, বহু জায়গায় ভেঙেছে গাছ।

বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ও শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টির ফলে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের বেশ কিছু জায়গায় জল জমেছে। এ ছাড়া মহাত্মা গান্ধী রোড, পার্ক স্ট্রিট, থিয়েটার রোড, ক্যামাক স্ট্রিটে জল জমেছে।

উত্তর বন্দর থানার কাছে স্ট্র্যান্ড রোডের একাংশ জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। জল জমেছে সায়েন্স সিটির কাছেও। বেলঘরিয়া রোড, বর্ধমান রোড এবং আলিপুরের কিছু কিছু রাস্তায় জল জমেছে। হলদিরামের কাছে ভিআইপি রোডের উপরও জল জমতে শুরু করেছে। ধীর গতিতে চলছে যানবাহন।

চারশোর বেশি পাম্প চালিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জল নামানোর কাজ করছে কলকাতা পুরসভা। আর যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আগামী ৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর কলকাতার বুকে কোথাও জল থাকবে না। এমনই আশ্বাস দিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

কলকাতার মেয়র আরও জানান, জল জমার পর দ্রুত কাজে নেমেছেন পুরকর্মীরা। শহরের বেশির ভাগ অংশেই জল নেমে গিয়েছে। শুধু নিচু অংশে জল জমে রয়েছে।

জল জমার কারণে কিছু রাস্তায় ধীর গতিতে চলেছে গাড়ি। এমনিতে শুক্রবার রাস্তায় মানুষজন ছিলেন কম। অনেক দফতরই বাড়ি থেকে কাজের অনুমতি দিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের স্কুলগুলি হয় বন্ধ ছিল, নয়তো অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। রাস্তায় লোকজন কম থাকায় যানজট তেমন হয়নি।

তাঁর কথায়, ‘কালীপুজোর জন্য ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় আলোর রোশনাই দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আজ থেকে সব বন্ধ থাকছে। যতদিন না পর্যন্ত একেবারেই শুকনো হবে ততদিন পর্যন্ত সব বিদ্যুতের রোশনাই বন্ধ থাকছে।’

দানার দাপটে ঝড় হয়নি। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। মেয়র বলেন, ‘দুপুর ১২টা পর্যন্ত বালিগঞ্জ এলাকায় ১১৯ মিলিমিটার, মোমিনপুরে ১০৪ এবং চেতলায় ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চারিদিকে ব্যাপক জল হয়েছে। ঘণ্টায় ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত জল নামাতে পারে কলকাতা পৌরসভা। এর থেকে বেশি হলে ৩- ৪ ঘণ্টা লাগে।

ফিরহাদ আরও বলেন, ‘ঠনঠনিয়াতে আজ নয় ৫০ বছর ধরে জল জমে। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করে জল যাতে নেমে যায় তার জন্য আমরা লক গেট খুলতে পারিনি। লো-টাইডে বিপদ সীমার উপর জল ছিল। ফুল ফেজে পাম্পিং করেছি। এসএসকেএম-এ জল ছিল। পাম্পিং এর মধ্যে নামানোর ব্যবস্থা করেছি। এখন জল নেই। নতুন করে বৃষ্টি না হলে তিন ঘণ্টার মধ্যে জল নেমে যাবে শহরে। এখন লক গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।’

পুরসভা সূত্রে খবর, ৮৭টি পাম্পিং স্টেশনে ৪৮৩টি বড় ক্যাপাসিটির পাম্প চলছে। মেয়র জানান, ‘একটাও গাছ পড়েনি। বর্ষার আগে আমরা ল্যাম্প পোস্ট অডিট করেছিলাম, তাই বিদ্যুৎস্পৃষ্টও হয়ননি কেউ।’

