Farmers Protest  : কৃষকদের দিল্লি চলো ঘিরে তুমুল সংঘর্ষ, আহত ৬০ , আজ ফের ‘মার্চ টু দিল্লি’

0
156

কৃষক আন্দোলনে ফের উত্তাল দেশ। মঙ্গলবারই দিল্লি চলো  অভিযানের ডাক দিয়েছিল আন্দোলনকারী কৃষকরা। রাতটুকু পদযাত্রা বন্ধ রাখলেও, আজ বুধবার সকাল থেকেই ফের দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবে কৃষক সংগঠনগুলি। এদিকে, মঙ্গলবার পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধুন্ধুমার হয় পুলিশের। বিক্ষোভকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করা হয়। সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন বলেই জানা গিয়েছে।

দেশের সময় ,ওয়েবডেস্ক : অনুরোধ-বৈঠক কোনওটাতেই কোনও কাজ হয়নি। ফলে নিজেদের একাধিক দাবি নিয়ে ‘দিল্লি চলো’ অভিযান শুরু করেছেন পাঞ্জাব-হরিয়ানা-উত্তরপ্রদেশের ২৫ হাজার কৃষক। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে পাঁচ হাজার ট্র্যাক্টর। মঙ্গলবার তাঁরা মিছিল শুরু করার পরেই পাঞ্জাব-হরিয়ানা শম্ভু সীমানায় পুলিশের সঙ্গে প্রবল ধস্তধস্তি হয় আন্দোলনকারীদের। এক সময়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ড্রোন থেকে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। উত্তর ভারতে এখনও যথেষ্ট ঠান্ডা, তা সত্ত্বেও তাঁদের উপর বারবার জলকামান চালানো হয়। লাঠি উঁচিয়েও অনেক জায়গায় তেড়ে গেছেন উর্দিধারীরা। তবে তাঁদের হতদ্যোম করা যায়নি। তাঁরা ক্রমশ দিল্লির দিকে এগোচ্ছেন।

রাত ন’টা নাগাদ কৃষক নেতারা ঘোষণা করেন, ‘এই রাতের জন্য সিজ়ফায়ার (যুদ্ধবিরতি) ঘোষণা করা হলো। আমরা কাল (বুধবার) আবার আমাদের গন্তব্যের দিকে যাব।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই সিজ়ফায়ার শব্দটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের অন্নদাতারা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এই আন্দোলন তাঁদের কাছে যুদ্ধের থেকে কম কিছু নয়। এর পাশাপাশি তাঁরা এ-ও বলেছেন, ‘অন্তত আগামী ৬ মাসের রসদ ও ডিজ়েল আমরা নিয়ে এসেছি। আমরা দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। মনে রাখবেন আগের বার ১৩ মাস আমরা দিল্লি অবরুদ্ধ করে রেখেছিলাম।’ এই আন্দোলনকে ঘিরে কার্যত দুর্গের চেহারা নিয়েছে রাজধানী দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকা। এ দিকে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা বলেছেন যে, সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ না করে শস্যের উপর ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের (এমএসপি) গ্যারান্টি দেয় এমন একটি আইন তাড়াহুড়ো করে আনা যাবে না এবং প্রতিবাদী কৃষক গোষ্ঠীগুলিকে এই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একটি সদর্থক আলোচনার জন্য বলেছেন তিনি।

এ দিকে, এ দিন শম্ভু সীমান্তে পুলিশের সঙ্গে কৃষকদের সংঘর্ষের পরে দিল্লি পুলিশ টিকরি সীমান্ত সিল করে দিয়েছে। দু’দিকেই পাঁচ ফুট লম্বা সিমেন্ট ব্লক এবং বহুস্তরীয় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা রাজধানী দিল্লিরও। সোমবার রাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লালকেল্লাতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ। মোতায়েন করা হয়েছে বিশেষ সুরক্ষা বাহিনী। এ দিন সারাদিনই বন্ধ ছিল দিল্লি মেট্রোর প্রায় দশটি এনট্রি গেট। এয়ারপোর্ট অথরিটির পক্ষ থেকেও যাত্রীদের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে প্রবেশ বাধ্যতামূলক জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের সাথে রাজস্থানের সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সাতটি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । হরিয়ানা পুলিশ খানাউরিতে পাঞ্জাবের কৃষকদের উপর লাঠিচার্জও করেছে।

কৃষকদের সংগঠন এখনও দিল্লিতে পৌঁছতে পারেনি। যদিও আন্দোলনের ‘উত্তাপ’ এবং প্রভাব বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীতে। ২০২০ সালের কৃষক আন্দোলন ফিরতে পারে আবার – গোয়েন্দাদের এই রিপোর্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্ট মঙ্গলবার কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’-র সংক্রান্ত দায়ের করা দুটি আলাদা আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকার এবং হরিয়ানা ও পাঞ্জাব সরকারকে নোটিস জারি করেছে। সেখানে সব পক্ষকেই অনুরোধ করা হয়েছে, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তবে তা নিয়ে কোনও পক্ষই কিছু বলেনি। বরং আন্দোলন দীর্ঘ মেয়াদি হতে চলেছে আন্দাজ করে এ দিন হরিয়ানা পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) তাঁর ফোর্সকে নির্দেশ দিয়েছেন যে কৃষকরা যদি ‘আক্রমণাত্ম’ হয়ে ওঠেন তা হলে সংযম দেখানোর কোনও প্রয়োজন নেই। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা আক্রমণ করতে হবে। লাঠি ব্যবহার করতে তিনি বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষক নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ করেছে। এর প্রত্যুত্তরেই শম্ভু সীমানায় ট্র্যাক্টর দিয়ে পুলিশের তৈরি অত্যাধুনিক ব্যারিকেড ভেঙে দেন।

যদিও সংযুক্ত কিষান মোর্চার মতে, এই আন্দোলন তো কিছুই নয়। আসলটা শুরু হবে ১৬ ফেব্রুয়ারির পর, যেখানে কৃষকদের সঙ্গে অংশ নেওয়ার কথা সারা দেশের প্রায় ২০ কোটি কৃষকের! এই বিক্ষোভে দেশের সমস্ত গ্রামে আন্দোলন শুরু করা হবে। সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতা এবং কেরালার প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণপ্রসাদ বলেছেন যে, ‘গ্রাম বন্‌ধ’-এর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সকলে। কৃষকদের আন্দোলনে এই প্রথমবারের মতো সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে বন্‌ধের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

কৃষ্ণপ্রসাদ জানিয়েছেন, তাঁদের সংগঠনেরই প্রায় দুই কোটি সদস্য এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। মোর্চার দাবি, সারা দেশের বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এবং দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মানুষও ১৬ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে যোগ দিতে চলেছেন। জানা গিয়েছে, একদিনের ‘গ্রাম বন্‌ধ’ আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রামের সব স্বাভাবিক কার্যক্রম ওই দিন বন্ধ থাকবে। মোর্চার তরফে কৃষ্ণপ্রসাদ বলছেন, সরকার তাদের দাবি না মানলে এই আন্দোলন আরও চলবে। তাঁদের সংগঠনের দাবি, কেন কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের উন্নতির জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পূরণ হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিয়ে আইন সহ একাধিক দাবি নিয়েই ফের পথে নেমেছে কৃষকরা। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যের কৃষকরা ২০০টিরও বেশি কৃষক সংগঠনের নেতৃত্বে দিল্লি চলো অভিযানের ডাক দিয়েছে।

সোমবারই কৃষক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ঘণ্টাখানেক ধরে বৈঠক চললেও, শেষ অবধি ব্যর্থ হয় সেই বৈঠক। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, কয়েকটি দাবি নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে দুই পক্ষ। বাকি দাবিগুলি নিয়ে আলোচনার জন্য কমিটি গঠন করা হবে।

Previous articleWriters’ Buildingকালস্রোতে বাড়তি নির্মাণের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মহাকরণের ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনছে নবান্ন, মিলছে ইতিহাসের খাজানার ভান্ডার
Next articleWILDLIFE PHOTOGRAPHER OF THE YEAR হিমশৈলের উপর ঘুমন্ত এক মেরু ভল্লুকের এই ছবি পেল ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here