
ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে চাপানউতোর চলছেই। একাধিক জেলা থেকে আসছে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। নেতাজি ইন্ডোর থেকে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে সুর চড়িয়েছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকায় ‘ভূত’ ধরতে যে শুক্রবার থেকেই অ্যাকশনে নামবে সে কথাও আগেই জানা গিয়েছিল। তৈরি হয়েছে বিশেষ কমিটি। অবশেষে অভিযান শুরু করে দিল তৃণমূল। হয়ে গেল বৈঠক।
সূত্রের খবর, শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বৈঠক করল ঘাসফুল শিবির। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের ভোটারদের উত্তর ২৪ পরগনায় নিয়ে আসার অভিযোগ করেন মমতা। সতর্ক করা হয়েছিল দলের সমস্ত স্তরের নেতাদের। এরপরেই শুক্রবার বৈঠকে বসলেন জেলার তৃণমূল নেতারা। এদিন বারাসত সাংগঠনিক জেলা নিয়েই মিটিং হয়।
সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে দলীয় এজেন্টরা শহরাঞ্চলে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবেন। পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্যরা যাবেন মানুষের বাড়িতে। ঠিকানা, এপিক কার্ড ধরে ডেটাবেস তৈরি করা হবে। তারপরে বিডিও’কে জমা দেওয়া হবে দলের তরফে। এদিনের বৈঠকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রথীন ঘোষ, তাপস চ্যাটার্জি-সহ, ব্লক ও টাউন সভাপতিরাও ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
সাত দিন অন্তর অন্তর রিপোর্ট নেবেন বারাসাত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি কাকলি ঘোষ দস্তিদার। শনিবার একইভাবেই বৈঠক হবে দমদম ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলায়। সেখানে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নাকি নতুন কোনও বিষয়ে আলোকপাত করা হয় সেটাই দেখার।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই কাজ শুরু হয়। ‘ভূতুড়ে ভোটার’ ধরতে শনিবার থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার স্ক্রুটিনি করবেন ফিরহাদ হাকিম । স্ক্রুটিনি করে কে প্রকৃত ভোটার, তা চিহ্নিত করবেন তৃণমূল কর্মীরা। তারপর তা পাঠানো হবে কমিশনের কাছে, এমনটাই জানিয়েছেন মেয়র।
বৃহস্পতিবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে কর্মীসভার বৈঠক থেকে উস্কে দিয়েছিলেন ভূতুড়ে ভোটার প্রসঙ্গ। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন “ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে। ভোটার তালিকা থেকে ভূতুড়ে নাম বাদ দিতে হবে।”
বেলা গড়াতেই সন্ধে নাগাদ খোদ দলনেত্রী নিজের বাড়িতে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও আট জন কাউন্সিলরকে ডেকে এ ব্যাপারে আরও একপ্রস্থ বৈঠক করেন। তাঁর বিধানসভা এলাকায় ভোটার তালিকায় নতুন নাম সংযোজনে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, কত ‘ভূত’ হানা দিল ভোটার তালিকায়, তা অক্ষরে অক্ষরে লিখে রিপোর্ট আকারে ফিরহাদের হাতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন কাউন্সিলরদের। সময় বেঁধে দেন মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত।
বস্তুত, অনলাইন পদ্ধতিতে ভোটার লিস্টে নাম তোলার সুযোগ নিয়ে, কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ভোটার লিস্টে ভূতুড়ে ভোটার ঢুকিয়ে দিচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পদ্ধতিতেই পদ্ম শিবির মহারাষ্ট্র, দিল্লি দখল করেছে বলেও দাবি করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
এ ব্যাপারে নেতাজি ইনডোরের সভা থেকে রীতিমতো তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরার পাশাপাশি, বইয়ে পড়া দাগানোর মতো করে দলের নেতা-কর্মীদের ‘টাস্ক’ও বেঁধে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিও তৈরি করেন। সময় নষ্ট না করে শনিবার থেকেই ভোটার তালিকা থেকে ভূত তাড়াতে রাস্তায় নামছেন মেয়র।