কলকাতা : বৃষ্টি উপেক্ষা করে তৃতীয়া থেকেই দক্ষিণ কলকাতায় পুজো মন্ডপের সামনে ভিড় জমালেন অসংখ্য মানুষ। দেখুন ভিডিও
প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় বৃষ্টির অঝোর ধারা নামছে যখন- তখন। সেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় দুর্গাপ্রতিমা দর্শনে বেড়িয়ে পড়েছেন পুজো প্রেমীরা। এদিন অধিকাংশ বড় পুজোর প্যান্ডেল প্রতিমা দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে যে সব প্যান্ডেলের দ্বার তখনও উন্মোচিত হয় নি তার সামনেও উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বহু দর্শককে। দূর থেকেই ছবি তোলেন অনেকে ।
দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের পুজো প্যান্ডেলের সামনে এরকম দৃশ্যেরই দেখা মেলে। গড়িয়াহাট অঞ্চলে একেবারে থিকে থিকে ভিড়। একদিকে পুজোর শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা আর অন্যদিকে বড় বড় পুজো আগেভাগেই দেখে নেওয়ার প্রয়াস। সবমিলিয়ে বাঙালির প্রাণের উৎসবের আমেজের ছোঁয়া পাওয়া গেল তৃতীয়ার সন্ধ্যে থেকেই।
‘সিংহি পার্ক সর্বজনীন দুর্গাপুজো’ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার জানান, ‘ এ বছর আমাদের ৮৩ তম বর্ষ। এই বছরের ভাবনা সাতমহলার অন্তপুরে। অর্থাৎ পুরোনো দিনের জমিদার বাড়ি অথবা কোন বর্ধিষ্ণু পরিবারের বাসস্থানের নানা আসবাবপত্র ও তাদের তখনকার জীবনযাপনের একটা ছবি আমাদের প্যান্ডেলে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
এই প্যান্ডেল তৈরির ভাবনা সুদীপ্ত মাইতির। প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে মূলত বেত এবং বাঁশ দিয়ে। প্রতিমা শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পাল। আবহ সঙ্গীত করেছেন পন্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায়।’ বাংলার বর্তমান সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ মুখরতা নিয়ে বলেন, ‘ঘটনাটা খুবই ধিক্কারজনক ব্যাপার।
এটা কোন মতেই সমর্থন করা যায় না। তবে গ্রাম বাংলার অজস্র তিলোত্তমার মুখের হাসির দিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে। কারণ সেখান থেকে প্রচুর মানুষ আসেন প্যান্ডেলসহ নানা কাজ করতে। তারা সারা বছর এই রোজগারের দিকে তাকিয়ে থাকে।’
‘মুদিয়ালী’ ক্লাবের সদস্য সুমিত সাউ এ বছরের পুজোর প্রসঙ্গে বলেন, ‘ আমাদের ৯০ তম বর্ষের পুজো। এবারের পুজোর থিম হলো ত্রি- মাত্রিক বা থ্রি- ডায়মেনশন। যার অর্থ ব্রক্ষ্মা- বিষ্ণু- মহেশ্বর। আমরা জানি ব্রক্ষ্মা হলে সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু পালক আর মহেশ্বর ধ্বংসকারী। এই তিন শক্তি যখন একসাথে মিলিত হয় তখন আদি শক্তির জন্ম হয়। যিনি হলেন মা দুর্গা। এই প্যান্ডেলের মধ্যে আমরা সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছি।
আমরা প্রতিমার সাবেকিয়ানার ওপর জোর দিলেও, প্রতি বছর প্যান্ডেলেও কিছু অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করি। প্রতিমা আজ দীর্ঘ বছর ধরে একই ভাবনায় তৈরি হয়ে আসছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও একই থাকবে। প্যান্ডেল করেছেন বিমান সাহা। প্রতিমা শিল্পী অসিত পাল। এবার পুজোর পাশাপাশি প্রতিবাদও রয়েছে তবে পুজো আছে পুজোর জায়গায়। তার আভাস পাওয়া গেল, তৃতীয়ার দিন সন্ধ্যা ছটায় আমাদের প্যান্ডেল খুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দর্শকদের চাহিদায় সাড়ে চারটের মধ্যেই খুলে দিতে হয়েছে ।’
‘অজয় সংহতি’ পুজো কমিটির সদস্য দেবাঙ্কুশ গাঙ্গুলির কথায়, ‘আমাদের পুজোর ভাবনা হচ্ছে ঈক্ষন বা দৃষ্টি। এখানে আমরা দেখাতে চেয়েছি, মা মনসা আর দেবী দুর্গার যে একটা মতবিরোধ ছিল। সেই মতবিরোধ একটা জায়গায় গিয়ে মিলিত হয়। আমরা এখানে সেদিকটি তুলে ধরেছি।
যেমন চাঁদ সওদাগরের চৌদ্দ ডিঙা ছিল সেটা অনেকেই জানে না। সবাই সাত ডিঙার কথাই জানে। আমরা মন্ডপে এই চৌদ্দ ডিঙার ব্যাপারটি তুলে ধরেছি। পুরানের অনেক তথ্যও রয়েছে। দেবী মনসার যারা গান গায়, সেই রোহিনীর লাইভ পারফরম্যান্স থাকবে। চাঁদ সওদাগরের কাহিনীও এখানে পাওয়া যাবে। এটা আমাদের ৬৪ বছরের পুজো।’