বিজয়া দশমী হয়ে গেলেও উৎসবের রেশ এখনও কাটেনি। বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় পুজোর কার্নিভাল হয়েছে। আর শুক্রবার কলকাতায় পুজোর কার্নিভাল। দুর্গাপুজোর মেগা কার্নিভালের জন্য সেজে উঠেছে রেড রোড। শহর ও শহরতলির প্রায় একশোটি পুজো কমিটি এবার অংশ নিচ্ছে রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে। রেড রোডের দু’ধারে প্রায় ১৮ হাজার দর্শকের বসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
দুর্গা পূজার পরও থাকে অপেক্ষা, কার্নিভালের। শুধু কলকাতা নয়, এখন জেলায় জেলায়ও কার্নিভালের ধুম। বেশ কিছু জেলায় বৃহস্পতিবার কার্নিভাল হয়েছে। শুক্রবার খাস কলকাতার বুকে কার্নিভাল। তারজন্য গত কয়েকদিন ধরে প্রস্তুতিও ছিল একেবারে তুঙ্গে। নির্দিষ্ট সময়েই রেড রোডে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত রয়েছেন সমাজের সকল ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, অতিথিরা।
অনুষ্ঠানের সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখা ও সুরারোপিত গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ডোনা গাঙ্গুলি। কার্নিভালে একে একে আসছে পুজো কমিটিগুলি। কমিটিগুলি নৃত্য-গীত পরিবেশন করছে, তুলে ধরছে বাংলার সংস্কৃতির নানা দিক। রেড রোডের কার্নিভালে থাকবে প্রায় ১০০টি পুজো কমিটি।
প্রত্যেক পুজো কমিটিকে রেড রোড থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়া হবে। নিরাপত্তা দেখভালের জন্য ৮ জন যুগ্ম কমিশনার এবং ১৬ জন ডিসি দায়িত্বে রয়েছেন। রেড রোড ও তার আশপাশে আড়াই হাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এবছর কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার পুজো কমিটি অংশ নিচ্ছে কার্নিভালে। কার্নিভালের জন্য আজ শহরের একাধিক পথে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধে না হয়, সেই কারণে আগেই সেসব রাস্তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
কলকাতা শহরের বহু পুজো যেন তাঁদের পুরনো পরিচয় হারাচ্ছে। বরং ব্যক্তির নামে অনেকের কাছে পরিচিত হয়ে গিয়েছে সেই সব পুজো। যেমন শ্রীভূমি স্পোটিং ক্লাব মানেই অনেকে বলেন সুজিত বসুর পুজো। আবার চেতলা অগ্রণী মানেই ববি হাকিমের পুজো। এক সময়ে এভাবেই নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো বলে পরিচিত ছিল।
সেই ধারা বজায় রেখে গড়িয়াহাটের হিন্দুস্তান ক্লাবের পুজো এখন কারও কারও কাছে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পুজো বলে পরিচিত। শুক্রবার দেখা গেল, কার্নিভালে স্থান হয়েছে হিন্দুস্তান ক্লাবের প্রতিমার। আর সেই পুজোর শোভাযাত্রার পুরোভাগে রয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। পরনে গোলাপি পাড়ের হলুদাভ সোনালি রঙের শাড়ি। খোপায় ফুল। আর হাতে গাঁদা ফুল সহ পুষ্পপত্র নিয়ে গানের তালে নাচছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বাংলায় ঘরে ঘরে নাচ গানের তালিমের রীতি বহু পুরনো। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ছোটবেলায় নাচ শিখেছেন কিনা জানা যায়নি। হতে পারে এদিনের শোভাযাত্রার জন্যই নাচ প্র্যাকটিস করেছেন তিনি।
দেখা যায়, চন্দ্রিমা যখন নাচছেন তখন মঞ্চে বসে বড় হাতপাখায় হাওয়া দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই হাওয়া করার ব্যাপারটা অবশ্য ছিল প্রতীকী। যাঁরা শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন তাঁদের হাওয়া বাতাস দিয়ে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। বার্তা এটাই।
রেড রোডে এদিনের কার্নিভালে আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। একে আবহাওয়া ছিল খুবই মনোরম। হাল্কা হাওয়াও বইছিল। তার সঙ্গে বহুবর্ণে সাজানো ট্যাবলো ও শোভাযাত্রা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। পুলিশের হিসাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল সেখানে।