Durga Puja 2024 রবিবারের বাজারই বলছে, দুয়ারে পুজো

0
79
পার্থ সারথি নন্দী , দেশের সময়

ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসছেন এক যুবক। তাঁর  দু’হাতে ধরা দু’টি আইসক্রিম! কিছুটা দূরেই অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে এক তরুণী। তাঁর দু’হাতে আবার বড় বড় কয়েকটি ব্যাগ। আকুল নয়নে তিনি তাকিয়ে আছেন আইসক্রিম  দু’টির দিকে। বেশ কিছুটা কসরতের পরে সেখানে পৌঁছতে পারলেন যুবক। মুখে তখন যুদ্ধজয়ের হাসি। নতুন রুমাল শুষে নিল কপালের ঘাম। তৃপ্তির কামড় পড়ল আইসক্রিমে।

এরপর পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটছিলেন যুগল। হঠাৎই যুবকের হাত ছাড়িয়ে লোকজনকে রীতিমতো ডজ করে দৌড়তে শুরু করলেন যুবতী। আকস্মিক ধাক্কাটা সামলে যুবক যতক্ষণে তাঁর পিছু নিয়েছেন, ততক্ষণে যুবতী পৌঁছে গিয়েছেন ফুটপাথের ধারে এক গয়নার স্টলের সামনে। হাত বাড়িয়ে তুলে নিয়েছেন এক জোড়া কানের দুল। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আর এক তরুণীর তখন মুখ চুন। আবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে যুবতী বললেন, ‘‘ঠিক দেখেছিলাম ওই মেয়েটা তক্কে তক্কে আছে। কেমন দিলাম বল?’’

পুজোর দু’সপ্তাহ আগের রবিবার পড়ন্তবেলায় এমনই নানা দৃশ্য চোখে পড়ল নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাটের মতো ব্যস্ত বাজার চত্বরে।  ভিড় ঠেলেও আপনজনের জন্য পুজোর বাজার করতে বিরক্তির চিহ্নমাত্র দেখা গেল না সাত থেকে সত্তর কারওর মুখে। বরং খুশির আমেজ বুঝিয়ে দিল, ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।

এ দিন সকাল থেকেই ধর্মতলা, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগান চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। তাঁদের চোখেমুখে যেন পুণ্যার্থীর আকাঙ্খা। যেন পণ করেছেন, খালি হাতে ফিরবেন না কিছুতেই। তাই জামা থেকে জুতো, ব্যাগ থেকে গয়না – সবই ছিল বিকিকিনির তালিকায়। কেউ কেউ তো আবার ছুটির দিনে কুমোরটুলি , ভিক্টোরিয়া, জাদুঘর ঘুরে ফেরার পথে ভিড় জমিয়েছেন নিউ মার্কেটে।

বারাসত থেকে গড়িয়াহাটে এসেছেন অর্ণব সেন এবং মধুপর্ণা দাসগুপ্তা। পাকা কথা  হয়ে গিয়েছে তাঁদের। অর্ণব জানালেন, বিয়ের আগে এই প্রথম বার এক সাথে  পুজোর বাজার করতে তাঁরা এসেছেন গড়িয়াহাটে। হাসতে হাসতে মধুপর্ণার দিকে তাকিয়ে অর্ণব বলেন, ‘‘এ বারের পুজোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাস কয়েক বাদেই তো ও বৌ হয়ে যাবে। প্রেমিকাকে এটাই শেষ পুজোর উপহার।’’

রানাঘাট থেকে নিউ মার্কেটে এসেছেন দীপ জ্যোতি  এবং সেমন্তী চক্রবর্তী। তাঁদের হাত ভর্তি ব্যাগ। রীতিমতো খুঁড়িয়ে হাঁটছেন সেমন্তী। জানালেন, নিউ মার্কেট এলাকার এক দোকান থেকে বেশ কয়েক জোড়া জুতো কিনেছেন পুজোর উপলক্ষে। তারই একটি গলিয়েছেন পায়ে। সেই সকাল থেকে ঘুরছেন। অগত্যা ফোসকা। কিন্তু তার পরোয়া করে কোন সে ভীরু? বললেন, ‘‘পুজোর বাজারটা নিউ মার্কেট থেকে না হলে জমে না। এই ভিড়টা দেখলেই মনে হয়, পুজো এসে গিয়েছে।’’

রবিবার সকাল থেকে পসরা সাজিয়ে বসলেও বিক্রিবাটায় কিন্তু তেমন খুশি নন দোকানিরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, আরজিকর এর ঘটনার রেশ কাটেনি এখনো ,খুব মনখারাপ কলকাতার । ভিড় যত বেশি, বিক্রি যেন ততটা নেই। গত কয়েক বছর ধরেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা যত না জামাকাপড় কেনে, ‘সেলফি’ তোলে তার পাঁচ গুণ। এঁদের ভিড়টাই বেশি।’’ অন্য এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ইদানীং ‘অনলাইন শপিং’ চলে আসায় যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে বাজারে।’’ গড়িয়াহাটের এক শাড়ি ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, আগে পুজোর সময়ে প্রচুর শাড়ি বিক্রি হত। যত দিন যাচ্ছে, সে চাহিদাও কমছে। তিনি বলেন, ‘‘বাঙালি মেয়েরা আজকাল আর শাড়ি পড়তে চায় না। বিদেশিনিরা আমার দোকান থেকে এসে শাড়ি কিনে নিয়ে যান আর বাঙালি মেয়েরা ছুটছে ‘ওয়েস্টার্ন আউটফিটের’ দিকে। পুজোর ক’টা দিন তো শাড়ি পড়তে পারে!’’

তবে নিউ মার্কেট, হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের সব ব্যবসায়ী এক বাক্যে জানাচ্ছেন, দোকানের তুলনায় ফুটপাথে ভিড় অনেকটাই বেশি। সাধারণত পুজোর সময়ে এই সব অঞ্চলে একটু বেশিই সক্রিয় থাকে ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশ জানায়, এ দিনও ভিড় সামলাতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বারবার করে মাইক বাজিয়ে পথচারীদের বলা হয়, ‘পকেটমার হইতে সাবধান, অসাধু ব্যবসায়ী হইতে সাবধান’।

তবু এত সাবধানতা সত্ত্বেও বরাবরের মতো বিকিকিনির সময়ে কেউ কেউ ঠকে গিয়েছেন বেমালুম। শ্যামবাজার থেকে হাতিবাগানে বাজার করতে এসেছিলেন অভিনন্দন শীল। দুটো জামার বদলে একটা জামা দিয়ে ঠকিয়ে দিয়েছেন দোকানদার। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বান্ধবী হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা আইসক্রিম। পুজোর সময়ে মন খারাপ করলে চলে! এরপর অভিনন্দনের মন ভালো করতে তার প্রেমিকা হাত ধরে বললেন চলো তোমাকে কুমেরটুলি থেকে মৃণময়ী মায়ের রূপটান দেখিয়ে নিয়ে আসি । অভিনন্দন একটু থেমে মিচকি হেসে  বলল ,  তুমি যখন বলছ যেতেই পারি , তবে আমার দুর্গা আমার সাথেই আছে ।

Previous articleFlood Situation in Bengalএবার ‘জলযুদ্ধে’ মমতা , ডিভিসির কমিটি থেকে প্রতিনিধি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর , পদত্যাগ রাজ্যের ২ কর্তা
Next articleRG Kar: ‘ময়নাতদন্ত তাড়াতাড়ি করতে হবে না হলে রক্ত গঙ্গা বয়ে যাবে,’চাপ দেয় কাউন্সিলর বললেন ডাক্তার অপূর্ব বিশ্বাস দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here