দেশের সময়, বনগাঁ: ভুলটা করেছিলেন একটি রাজনৈতিক দল। এলাকার মৎস্য জীবি মানুষকে দুর্গাপুজোয় শামিল হতে দিতেন না তাঁরা। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগের সেই ভুল শুধরে নিলেন এখনকার প্রজন্ম। বনগাঁর কালুপুর গ্রামের কয়েকশো জেলে সম্প্রদায়ের মানুষকে বাড়ি গিয়ে পুজোর আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন তাঁরা। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এই মানুষগুলি, বিশেষ করে মহিলারা যাতে নতুন শাড়ি পরে মহাষ্টমীর অঞ্জলি নিবেদন করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বনগাঁ শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে কালুপুর গ্রাম ৷ যশোর রোডের পাশে এলাকার সর্বজনীন দুর্গাপুজো ৪৯ বছর ধরে হয়ে আসছে। ওই এলাকার ‘ কালুপুর সেবাসমিতি’ পুজোর আয়োজন করে বাঁশের মণ্ডপ নির্মাণ করে। ষষ্ঠীর সকালে মণ্ডপে প্রতিমা আনা হয়েছে। পুজোর এক উদ্যোক্তা শ্যামল সরকার জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামের বহু মৎস্য জীবি মানুষ রাজনৈতিক চক্রান্তের জেরে এই পুজো থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন।

তাঁদের কথা ভেবে এ বছর পুজোর দিন কয়েক আগে গ্রামবাসী এবং কালুপুর সেবাসমিতির সদস্য সোমেন সরকার সহ অন্যান্য সদস্যরা মিলে আর্থিক সহায়তা করে অন্যবারের মত এবারও পুজো শুরু করলেন। এই পরিস্থিতিতে পুজো উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পুজোয় সামাজিক ভেদাভেদ রাখা হবে না। সেই মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় “অতীতের ভুল শুধরে নিয়ে এলাকার মৎস্য জীবি সম্প্রদায়ের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সকলে মিলে আনন্দ উৎসব মেতে উঠব।”

শ্যামল, সোমেন -সহ পুজো কমিটির আরও অনেকে পুজোর অনেক আগে থেকেই বেশ কয়েকদিন ধরে মৎস্য জীবি সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি গিয়ে পুজোর নিমন্ত্রণ করে এসেছেন।

যশোর রোডের পাশে মঞ্চ বেঁধে সকলকে নতুন শাড়ি দেওয়া হয়েছে সেখানেই রক্তদান শিবিরের ব্যাবস্থাও ছিল এবছর। প্রায় ১৫০ জন এবারে রক্তদান করেন বলে জানান পুজোর উদ্যোক্তারা। রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন, জ্যোতি চক্রবর্তী (উত্তর ২৪পরগনা জেলা কর্মাধক্ষ্য), এবং বি এমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা।

স্থানীয় এক বয়স্ক মহিলা গ্রামবাসী বলেন,“ এই গ্রামে আমার শশুর বাড়ি, বিয়ের বছর থেকে দেখেছি এখানে মণ্ডপ তৈরি করে পুজো হয় কিন্তু আমাদের কে কেউ নিমন্ত্রণ করত না , কারণ টাও জানতামনা কিন্তু এ বছর সোমেন , শ্যামল এবং গ্রামের ছেলেরা বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণ করে এসে ছিল তাই খুব খুশি হয়েছি এবং আমাদের অনেকেই রক্ত দান ও করেছে।”

পুজোয় শামিল হওয়ার আমন্ত্রণে খুশি হয়েছে যেমন মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মানুষ তেমনই তাঁদেরকে কাছে পেয়ে খুশি পুজোর উদ্যোক্তারাও ৷ কালুপুর সেবা সমিতির সদস্য দের কথায়, এবার পুজোয় গ্রামের সবাই এক সঙ্গে পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে কাটানোর পাশাপাশি অঞ্জলি দেওয়া রক্তদান করায় সকলে যেন এক হয়ে গিয়েছি আর কোন ভেদাভেদ নেই খুব আনন্দ হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here