DRAMA: ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় নাটকের টানে মোসারফ করিম এলেন কামাখ্যাগুড়ি আওয়াজ সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংস্থার নাট্যমেলার উদ্বোধনে

0
761

দেশের সময়: মুখ্য সচিবের আদেশনামা মেনে কামাখ্যাগুড়িতে ৭ই জানুয়ারী ২০২২ কামাখ্যাগুড়ি আওয়াজ সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংস্থার নাট্যমেলা উৎসবের সূচনা হল। এবছর  নাট্য উৎসব উদ্বোধন করেন এপার বাংলা এবং ওপার বাংলা তথা সমগ্র বিশ্বের আপামর বাঙালির মন জয় করা নাট্য ব্যাক্তিত্ব মোসারফ করিম(Mosharraf Karim)৷

তিনি এই নাট্যমেলার ত উদ্বোধন করতে এসে বলেন, কামাখ্যাগুড়ি আওয়াজ সাংস্কৃতিক ও নাট্য  সংস্থা যে ভাবে নাট্য উৎসব পরিচালনা করছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।  এই নাট্য উৎসবের টানেই তিনি এই দেশে এসেছেন । এই উৎসবের দর্শকদের সাথেও কথা বলে ভালো লেগেছে।  তাদের উচ্ছ্বাস মোসারফ করিমের ভালো লেগেছে।  ভবিষ্যতে এই উৎসবে আবারো তিনি আসবেন কথা দিয়েছেন। 

প্রথম দিন প্রথম প্রদর্শন করেন বালিগঞ্জ ব্রাত্যজন বিজয় মুখার্জি নিবেদিত নাটক ” অপত্য ” । এই নাটকটিতে শিল্পীরা প্রত্যেকেই অনবদ্য অভিনয় করেছেন।  নিজ সন্তানের ওপর সমাজের দুষ্কৃতীকারীরা জঘন্য পৈশাচিক লালসায় আক্রমণ করে তখন পিতা হয়ে কী কর্তব্য পালন করা উচিত তা পরিষ্কার ভাবে সুন্দর অভিনয়ের মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়েছে। 

প্রথম দিনের দ্বিতীয় নাটক কোলকাতা বরানগর ভূমিসূত থিয়েটারের নাটক ” উজান পারী” নির্দেশনায় সমাদৃতা পাল ( সেনগুপ্ত)। এই নাটকের নির্দেশনা অসাধারণ,  নাটকের পরিকল্পনা, ডিজাইন , আলোর ব্যবহার,  শব্দের ব্যবহার দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে । দল হিসেবে তাদের ব্যবহারও অতুলনীয়দ্বিতীয় দিনে তিনটি নাটক প্রদর্শিত হয়েছে। 

প্রথম নাটক কোচবিহারের বর্ননা নাট্য গোষ্ঠীর নাটক লেনদেন, নির্দেশনায় ছিলেন বিদ্যুত পাল । মঞ্চ পরিকল্পনা খুবই সুন্দর হয়েছে।  আলো এবং শব্দের ব্যবহার দর্শকদের আকৃষ্ট করেছেদ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় নাটক হাওড়া সৃষ্টি সালকিয়ার নাটক ” ভগবানও ভূল করে ” রচনা এবং নির্দেশনায় ছিলেন হরপ্রসাদ চক্রবর্তী । অত্যন্ত বাস্তব পরিস্থিতিকে জীবন্ত করে তুলেছেন এই নাটকের কুশীলবরা।  সকল দর্শকদের হৃদয়ে হাসির বন্যা ছুটেছে। অসুরের কাহিল অবস্থা এবং বিধাতার করুন অবস্থা  দর্শক মনকে আকৃষ্ট করেছে । দর্শকদের আব্দার  আগামী বছরেও যেন নিয়ে আসা হয়।

দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় নাটক অশোকনগর নাট্য মুখের নাটক ” টু সোলস্ ” । ও হেনরির কাহিনি অবলম্বনে নাটক। নির্দেশনায় অভি চক্রবর্তী।  দুর্দান্ত নির্দেশনা মঞ্চ পরিকল্পনা এবং শব্দের ব্যবহার,  সঙ্গীতের ব্যবহার দর্শক মনকে আকৃষ্ট করেছেউৎসবের তৃতীয় দিন অর্থাৎ শেষ দিনে প্রথম নাটক ছিল জলপাইগুড়ি মুক্তাঙ্গন নাট্য গোষ্ঠীর নাটক ” দ্রোহ ” ।

এই নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন রীনা ভারতী । খুব সুন্দর নির্দেশনা এবং মঞ্চ পরিকল্পনা তথা সঙ্গীতের প্রয়োগ নাটকটি প্রাণবন্ত করে তুলেছে । দর্শক মনে খুবই সারা পড়েছে । তবে ভাষা প্রয়োগে আর একটু যত্ন নিলে আরও ভালো লাগবে ।নাট্য উৎসবের শেষ দিনের শেষ নাটক ছিল জলপাইগুড়ি কলাকুশলীর নাটক ” গনশা রে ” ।

এই নাটকটিও সুনিপুণ নির্দেশনা এবং সঙ্গীতের প্রয়োগ দর্শক মনে সারা ফেলেছে । গনশা এবং তার বন্ধুর চরিত্রে দুই শিশু শিল্পীর সাবলিল অভিনয় দর্শকদের কাছে খুব ভালো লেগেছে।এবার আসছি উৎসবের কথায় । পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক জনপদে এত সুশৃঙ্খল এবং সুনিপুণ দক্ষতার সাথে নাট্য উৎসব পরিচালনা করা যে সম্ভব তা কামাখ্যাগুড়ি আওয়াজ সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংস্থার আয়োজনে এই নাট্যোৎসব দৃষ্টান্ত রাখে ।

বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের রেস্ট্রিকশন্ অর্ডারের 8 নং সিরিয়ালের আদেশনামা অনুযায়ী এই উৎসবের আয়োজন হয়েছে।  নিয়মিত ভাবে মঞ্চ,  দর্শকাসন,  গ্রিনরুমে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে স্যানিটাইজ করা হয়েছেনিয়মিত ভাবে মঞ্চ,  দর্শকাসন,  গ্রিনরুমে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে স্যানিটাইজ করা হয়েছে। 

প্রত্যেক দর্শককে উৎসবে প্রবেশের মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রয়োগ করা হয়েছে। যারা মাস্ক পরে আসেনি তাদের প্রত্যেককে মাস্ক দেওয়া হয়েছে।  শুধু তাই নয় নাটক চলাকালীন সময়ে কেউ মাস্ক না পড়ে আছেন কি না তারও নজরদারি স্বেছ্বাসেবকেরা করেছেন। দলের স্বেছ্বাসেবকেরা নাট্য দলগুলোর খাবার পরিবেশনে অত্যন্ত যত্নবান ছিল । সকালের টিফিন, দুপুরের খাবার,  সন্ধ্যায় টিফিন, রাতের খাবার সঠিক সময়ে পরিবেশন করেছে । কোনোরকম অসতর্কতা পরিলিক্ষত হয়নি । রেল স্টেশন থেকে নাট্য দলগুলোকে রিসিভ করা আবাসন স্থলে পৌঁছে দেওয়া আবার নাটক শেষে ট্রেনের টাইম ধরে আবাসন স্থল থেকে স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া ট্রেন না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা সব কিছুতেই সুশৃঙ্খলতার ছাপ স্পষ্ট ছিল। 

এই উৎসবের আয়োজকদের প্রশংসা করেছেন আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাননীয় শ্রী অম্লান ঘোষ এবং কুমারগ্রাম ব্লকের বিডিও মাননীয় শ্রী মিহির কর্মকার। 

সবশেষে কামাখ্যাগুড়ি আওয়াজ সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংস্থা র সম্পাদক বিষ্ণু পদ চক্রবর্তী এই সর্বাঙ্গীন সুন্দর ভাবে রূপায়িত করতে সাধারণ প্রশাসনের এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করেন । প্রশংসা করছেন সকল দর্শকদের যাঁরা রাজ্য সরকারের কোভিড বিধি মেনে এই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বলে । সকল নাট্য দলের প্রতিও প্রশংসা জ্ঞাপন করেন যাঁরা অত্যন্ত সুনিপুণ দক্ষতার সাথে কোভিড বিধি মেনে তাদের নাটক মঞ্চস্থ করেছেন ।

Previous articleWeather in West Bengal: কনকনে শীতের আমেজ পেতে আরও দু’দিন,নামছে তাপমাত্রা, আর বৃষ্টি হবে?
Next articleঅশোকনগরে নয়ানজুলীতে ট্রাক উল্টে মৃত্যু চালক ও খালাসীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here