দেশের সময় , কলকাতা : আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক আদৌ হবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। আলোচনায় রাজি হলেও তাঁদের শর্ত মানতে হবে এমন দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের। তবে সেই শর্ত আপাতত মেনে নেয়নি রাজ্য। তাই আলোচনাও হয়নি। প্রতিবাদী ডাক্তাররা বুধবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন, দাবি মানা না পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের কাজে ফেরার বার্তা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে সেই নির্দেশ মানতে হত জুনিয়র ডাক্তারদের। কিন্তু তাঁরা তা মানেননি। তাঁদের স্পষ্ট কথা, শুধু জুনিয়র ডাক্তাররা কাজ না করলে যদি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ে তাহলে তার দায় তাঁদের নয়, সরকারের। পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা বলেছেন, ৯৩ হাজার ডাক্তার রয়েছে যাঁদের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার জুনিয়র ডাক্তার। এতেই যদি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য বিভাগের কী বেহাল দশা। যদিও জুনিয়র ডাক্তাররা এও বলেছেন, আলোচনায় বসতে তাঁরা রাজি। এখনই তাঁদের দাবি মানা হলে, পর মুহূর্ত থেকেই তাঁরা কাজে যোগ দেবেন।
নবান্নের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের বুধবারই আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের বেশ কয়েক দফা শর্ত রেখে এদিনই নবান্নে আলোচনায় যোগ দিতে যাননি। পরে সাংবাদিক বৈঠক করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ বলেন, আলোচনায় কোনও শর্ত থাকে না। চন্দ্রিমা আরও বলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হচ্ছেন।
সন্ধ্যা ছটার পর একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ডিজি রাজীব কুমার। সেখানে রাজ্যের মুখ্যসচিব বলেন, ‘কোনও শর্ত রেখে আলোচনা করা যায় না। আমরা চাইছিলাম খোলামনে আলোচনা হোক, তাঁদের উদ্বেগের বিষয়গুলি যাতে শুনতে পারি।’ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও জুনিয়র ডাক্তাররা কেন কর্মবিরতি তুলে নিচ্ছেন না? সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
রাজ্যের মন্ত্রীর এই মন্তব্য মোটেই ভালভাবে নেননি প্রতিবাদী ডাক্তাররা।
রাজনীতির প্রসঙ্গে তাঁদের সাফ কথা, ”যারা রাজনীতির কথা বলছেন, তাঁরাই রাজনীতি করছেন। আমরা প্রথম দিন থেকেই পাঁচ দফা দাবি করেছি। আমাদের দাবি এখনই মানা হলে আমরা কাজে ফিরব।” একই সঙ্গে তাঁরা এটাও বলেন, তাঁরা যা চাইছেন সেটা অধিকার, জেদ নয়। খোলা মনে সবার সামনে আলোচনা হোক এটাই তাঁরা চান। জেদ বললে তাঁদের আন্দোলনের বিষয়টি ছোট করা হয় বলে ব্যাখ্যা তাঁদের।
নবান্নকে জুনিয়র ডাক্তারদের পাঠানো ইমেলের সময়ের ইস্যুতে রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠেছে। কারণ সেই মেল করা হয়েছিল ভোর সাড়ে ৩টের কিছু পড়ে। এদিকে নবান্ন তার উত্তর দেয় দুপুর ৩টেয়। জুনিয়র ডাক্তাররা বলছেন, ”ভোর বেলা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ইমেল করায় কোনও রাজনীতি ছিল না। যে ভাবে রোগীদের জন্য আমরা ভোর চারটেয় ছুটে যাই, সে ভাবেই ইমেলটি করা হয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই পাঠানো হয়েছিল সেটি।”
সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ কি তাহলে বন্ধ? লাগাতার আন্দোলন যেমন চলছে, তেমন চলবে? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠে গেছে এখন। এই প্রেক্ষিতেই জুনিয়র ডাক্তারদের সাফ কথা, এইভাবে টানা কাজ বন্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী কেউ নয়। কিন্তু যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য যতক্ষণ না অপরাধীদের ধরা হচ্ছে, ততক্ষণ কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তাঁরা।