অর্পিতা বনিক , বনগাঁ : দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে বেরিয়ে এসেছে ইট। সেই ইটেও ধরেছে ক্ষয়। মাথার উপর খোলা আকাশ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে কোনও দিন ছাদ ছিল। আগাছা গজিয়েছে দেওয়াল জুড়ে। জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। বিষাক্ত সাপের আস্তানা হয়েছে এখন। এমনই অবস্থা নীলদর্পণ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্রের গোপালনগরের চৌবেড়িয়ার বাড়ির।
১৮২৯ সালের ১০ এপ্রিল ওই বাড়িতে জন্মেছিলেন দীনবন্ধু মিত্র। তাঁর শৈশব এবং বাল্যশিক্ষা হয়েছিল এখানেই। পরবর্তী সময়ে তিনি বাবা কালাচাঁদের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। কিন্তু এখানে ফিরে এসেছেন বারবার ।
অভিযোগ, ইতিহাসের সাক্ষী এই বাড়িটির সংরক্ষণ নিয়ে বহুদিন ধরেই উদাসীন থেকেছে প্রশাসন। কয়েক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ভগ্নদশা বাড়িটির সামনে দীনবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়। এর বাইরে বাড়িটি সংস্কার বা সংরক্ষণের কোনও সরকারি প্রচেষ্টা চোখে পড়েনি। দেখুন ভিডিও:
পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, জরাজীর্ণ বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার। বছর কয়েক আগে খাতা কলমে সরকারি ভাবে বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা হয়েছে ঠিকই, তবে বাস্তব বাড়িটি আজও অবহেলায় পড়ে আছে। এ নিয়ে স্থানীয়বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাড়িতেই এসেছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি ঈশ্বর গুপ্ত এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । এই বাড়িতে বসেই লেখা হয়েছিল নীলদর্পণ নাটকের কিছুটা অংশ। পরাধীন ভারতে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপলেখা তৈরি হয়েছিল এখানেই।
সারা বছর ধরে দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ নাট্যকারের বাড়িতে আসেন। কিন্তু ভগ্নদশা বাড়িতে দেখে তাঁরা দুঃখিত হন। এখানে এলে নাট্যকার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতেও পারেন না বা দেখতেও পারেন না তাঁরা।
সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করুক তার জন্য পরিবারের লোকজন অনুমতি দিয়েছেন বহুদিন আগেই। নাট্যকারের বংশধর সঞ্জিত মিত্র বলেন, ‘‘আমরা চাই সরকার বাড়িটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক। কয়েক বছর আগে একবার হেরিটেজ কমিশন থেকে প্রতিনিধিরা বাড়িতে এসে মাপজোক করেছিলেন। তারপর আর কিছুই এগোয়নি। আমরা অনেক দিন আগেই সরকারকে লিখিত ভাবে সম্মতি দিয়ে দিয়েছি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘২০১০ সালে হেরিটেজ কমিশিন বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। ওদের একটি ফর্ম পূরণ করে এখানে গ্রন্থাগার পাঁচিল-সহ নানা দাবি করেছিলাম। তারপর আর কিছু হয়নি।’’
বনগাঁর তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘হেরিটেজ কমিশন এখন বিষয়টি দেখছে। বাড়িটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রে তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে সরকারীভাবে , তবু প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে বাড়িটি যাতে সংরক্ষণ করা যায় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’