শুক্রবার বিকেলে ঘরোয়া এবং অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে
বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন দিলীপ ঘোষ। বিকেল সাড়ে ৫টায় বিবাহের সময় স্থির হয়েছে। দিলীপের জননী-সহ অন্য পরিজন এবং পাত্রী রিঙ্কু মজুমদারের পরিজনেরা থাকবেন। দু’-একজন বন্ধুবান্ধবও থাকবেন। ওই সময়টুকু বাদ দিলে বিবাহের কারণে দিলীপের কর্মসূচির কোনও অদলবদল হচ্ছে না।
চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে থেকেই রাজ্য বিজেপিতে খানিক কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। অমিত শাহর সঙ্গে কোনওকালেই তাঁর তেমন সখ্য ছিল না। রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর উত্থান প্রায় আগাগোড়াই সঙ্ঘ পরিবারের সৌজন্যে। লোকসভা ভোটের পর এহেন দিলীপ কার্যত প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছিলেন।
ডানপন্থী রাজনীতিতে এমনই হয়। ক্ষমতায় যাঁরা থাকেন তাঁদের ঘিরেই ভনভন করেন কর্মীরা। সংগঠনে দিলীপের কোনও পদ নেই। আর সাংসদ নন, তাই দিল্লিতেও তেমন দাম নেই। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছিলেন দিলীপ কি তবে হারিয়ে যাচ্ছেন!

সেই তিনি, দিলীপ ঘোষ, বৃহস্পতিবার সন্ধেয় তাঁর নিউটাউনের বাসভবনে টেবিল চাপড়ে বললেন, ‘তবে রে! দিলীপ ঘোষ হারিয়ে যাচ্ছে! এই দ্যাখ সাত দিন ধরে এখন এই খবর চলবে!’
তার পর থেকে তামাম সংবাদমাধ্যমে সেই খবর চলতে থাকে। রাজ্য রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষ একটা বর্ণময় চরিত্র। তাঁর বিয়ে নিয়ে যে কৌতূহলের স্রোত বয়ে যাবে, তা সঠিক অনুধাবন করেছিল সংবাদমাধ্যমগুলি। হয়েছেও তাই। আর সেটাই নাকি বাড়িতে বসে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন দিলীপ।

তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, দিলীপ বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে খুব একটা ফোন ধরেননি। তবে হ্যাঁ, তাঁর কাছের কয়েকজনকে ফোন করেছেন। এমনকি ভিডিও কলও করেছেন। তাঁর এক বন্ধু তাঁকে বলেন, আপনার বিয়ে নিয়ে এত ফোন আসছে যে বিরক্ত লাগছে। সূত্রের দাবি, জবাবে দিলীপ বলেন, বিরক্ত হচ্ছো কেন, উপভোগ করো! এরাই বলছিল না, দিলীপ ঘোষ হারিয়ে গেছে… এখন দেখো না, সাত দিন ধরে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে খবর চলবে।
অনেকেরই স্ত্রীর ভাগ্যে মঙ্গল হয়। দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে বিয়ের পর প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির রাজনৈতিক কেরিয়ারে উত্থান হয়েছিল। কংগ্রেস রাজনীতিতে এর পর ক্রমশই উপরের দিকে ওঠেন প্রিয়রঞ্জন। তিনি শয্যাশায়ী না হলে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে আরও বড় মন্ত্রকের দায়িত্ব পেতেন। প্রিয়কে বিয়ে করে রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল দীপারও। কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন দীপা। এখন তিনি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য।

শিখা মিত্রকে বিয়ে করার পর সোমেন মিত্ররও রাজনৈতিক জীবনে গতি এসেছিল। পরবর্তী কালে ডায়মন্ড হারবার থেকে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন সোমেন মিত্র। আবার সোমেনকে বিয়ে করার দৌলতে বিধায়ক হয়েছিলেন শিখা মিত্র।
এখন দেখার, এই বিয়ে দিলীপ ঘোষকে রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে দেয় কিনা। কারণ, বিয়ে নিয়ে হইচই মানেই রাজনৈতিক ভাবে দিলীপের জীবনে নতুন ফুল ফুটবে, এমন নয়। আবার এও দেখার, এই বিয়ে রিঙ্কুর রাজনৈতিক জীবনেও নতুন কোনও অধ্যায় রচনা করে কিনা।
এদিকে দিলীপ ঘোষের বিয়েউপলক্ষেই শুক্রবার সকালে নিউটাউনে তাঁর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতাকর্মী সদলবলে চলেছেন বিয়েতে হাজির হতে। রয়েছেন দিল্লির তত্ত্বাবধানে বাংলার বিজেপি পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলও।
গতকাল, বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের টুইটে প্রথম সামনে আসে, দিলীপ ঘোষ বিয়ে করতে চলেছেন। এর পরে একদিকে যখন ঝমঝমে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গ, তখনই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই বিয়ের খবর এবং তাকে ঘিরে নানা জল্পনাও।
শেষমেশ যা জানা যায়, দিলীপ ঘোষের মা পুষ্পলতা দাবীর ইচ্ছে ও উদ্যোগেই নাকি বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন তাঁর আদরের নাড়ু, অর্থাৎ ৬১ বছর বয়সি বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। পাত্রী রিঙ্কু মজুমদার, দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি নেত্রী। অনেক বছরই পরিচয় রয়েছে তাঁদের।
প্রথমে শোনা গেছিল, দিলীপের বিয়ে নিয়ে আপত্তির মেঘ ঘনিয়েছে বিজেপির অন্দরে। আরএসএসের তরফেও নাকি দিলীপকে বারণই করা হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত নিতে। শোনা যায়, জেপি নাড্ডা পর্যন্ত বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছেন তাঁর আপত্তির কথা। যদিও এতে দিলীপের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বদলায়নি। তবে আজ বিয়ের দিন সকাল থেকে বিজেপি নেতাদের বিয়েতে হাজির হওয়া বুঝিয়ে দিল, তাঁরা অন্তত দিলীপ ঘোষের পাশেই আছেন। এই বিয়ে নিয়ে তেমন কড়া আপত্তির জায়গা তাঁদের তরফে নেই।

তবে দিলীপ ঘোষের বিয়ের খবর রটতেই অনেকের কৌতূহল তৈরি হয়, যে সঙ্ঘের প্রচারকরা তো বিয়ে করেন না। দিলীপ তবে বিয়ে করছেন কীভাবে?
এই কৌতূহল নিরসন করতে গিয়েই জানা গেছে, কোনও প্রচারক যদি জনপ্রতিনিধি হয়ে গিয়ে বেতন পেতে শুরু করেন, তখন তিনি আর প্রচারক থাকবেন না। দিলীপ ঘোষ আগেই খড়্গপুর থেকে বিধায়ক হয়েছেন। পরে তিনি মেদিনীপুরের সাংসদ হয়েছেন। দিলীপবাবু বিধায়ক ও সাংসদ হিসাবে বেতন পেয়েছেন। তাই তিনি আর প্রচারক নন। সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করতে বা বিয়ে করতে তাঁর আর কোনও বাধা নেই।
দিলীপ ঘোষ এখন নিউটাউনের বাড়িতে মাকে নিয়ে থাকেন। জানা গিয়েছে, তাঁর মায়েরই রিঙ্কুকে পছন্দ হয়ে যায়। রিঙ্কুর স্বামী মারা গেছেন। ছেলে সৃঞ্জয় দাশগুপ্তও বিজেপির সক্রিয় সদস্য। শুক্রবার এই রিঙ্কুর সঙ্গেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন দিলীপ ঘোষ।
