Dilip Ghosh: ‘তৃণমূল নেতাদের পেছনে পেট্রল দিন, দেখবেন কেমন দৌড়বে’, দিলীপের বিতর্কিত মন্তব্যের পাল্টা দিল তৃণমূল

0
437

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলার রাজনৈতিক নেতাদের মুখে নর্দমার ভাষা অনেক কাল আগেই জায়গা করে নিয়েছে। কোনও দলই এই সংক্রমণ থেকে বাদ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে এ ব্যাপারে নিজের রেকর্ড নিজে বারবার ভেঙেছেন দিলীপ ঘোষ । বুধবার বাঁকুড়ায় একটি সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলকে নিশানা করতে গিয়ে ফের একবার কুৎসিত মন্তব্য করে বসলেন মেদিনীপুরের সাংসদ।

পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূল নিয়ম করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপির সমালোচনা করছে। এদিন তাই নিয়েই দিলীপ বলেন, “পেট্রল তো অনেক দূরের কথা। এরা আলু, পটল, ঝিঙের দাম কমাতে পারছে না। দিদিমণির যোগ্যতা আমাদের জানা আছে। হয় ভিক্ষে করে সরকার চালাচ্ছে নয় তো চোখ রাঙিয়ে।”

বিতর্কিত এই মন্তব্যের জন্য তৃণমূল তীব্র সমালোচনা করেছে দিলীপের। 

বুধবার বাঁকুড়ায় ‘ভয় মুক্ত বাংলা ও হিংসা মুক্ত রাজনীতি’র দাবিতে পদযাত্রা করেন দিলীপ। তারপর শহরের মাচানতলায় আকাশ মুক্তমঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে তুলোধোনা করে কর্মীদের জন্য অদ্ভুত নিদান দিলেন তিনি। তাঁর দাবি, পেট্রলের দাম বাড়লে তেমন কিছু সমস্যা হয় না। কারণ, মানুষ তো পেট্রল খায় না। কিন্তু মানুষ যে আলু খায় তার দাম এখন আকাশছোঁয়া। তাই তৃণমূল নেতাদের ‘পিছনে পেট্রল’ দিয়ে ‘মজা’ দেখতে বললেন দিলীপ।

তাঁর কথায়, ‘‌আগে আলুর দাম ছিল কিলো প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। এখন সেই আলুর দাম এসে দাঁড়িয়েছে, কিলো প্রতি ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা। আলু তো আর রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে আসে না!’ তাঁর কটাক্ষ, ‘আলুর দাম দ্বিগুণ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। সেখানে ৯০ টাকার পেট্রল মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১১৫ টাকা।’ এরপর দিলীপের যুক্তি, ‘পেট্রল তো কেউ খায় না। আলু সবাই খায়।

আমরা ছোটবেলায় বদমায়েশি করে কুকুরের পিছনে পেট্রল দিয়ে দিতাম। এখন তৃণমূলের নেতাদের ধরে তাঁদের পিছনে একটু পেট্রল দিয়ে দিন। কেমন দৌড় দেবে দেখুন। তারপর তাদের জিজ্ঞাসা করুন, ‘কেমন মজা?’ এরপরই দিলীপের সংযোজন, ‘‌তোমাদের কোনও যোগ্যতা নেই। আলু, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙের দাম কমাতে পারছ না। আর পেট্রল তো অনেক দূর।’

দিলীপের এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল। রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রাক্তন রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শ্যামল সাঁতরা বলেছেন, ‘বিজেপি নেতাদের এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য বাংলার মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা উচিত।’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‌এটি সুস্থ রাজনীতিকের মন্তব্য হতে পারে না। পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই না। রোজ সকালে আয়নায় যে প্রাণীর মুখ দেখেন তেমনই কথা বলেছেন দিলীপ ঘোষ।’‌ 

সেইসঙ্গে কুণাল আরও বলেন, “পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে কে? কেন্দ্রীয় সরকার। তার ফলে পণ্য পরিবহণে খরচ বাড়ছে। মজুতদারদের তো কালোবাজারি করার সুযোগ করে দিয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যে রাজ্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার।”

বাম জমানায় অনিল বসু থেকে বিনয় কোঙার, তৃণমূল জমানায় অনুব্রত মণ্ডল থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিজেপির দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু—যুগে যুগে নেতারা অবলীলায় কুকথা বলে চলেছেন। শত সমালোচনাও তাঁদের সেসব থেকে সরাতে পারে না।

অনেকের মতে, প্রতিটা দলেই এমন কিছু সমর্থকবৃত্ত তৈরি হয়েছে তারা চায় এগুলো নেতারা বলুক। কারণ, দেখা গিয়েছিল অনিল বসু যখন আরামবাগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ওই কুকথা বলেছিলেন তখনও কিছু লোক হাত তালি দিয়েছিল।

আবার প্রয়াত তাপস পাল যখন বলেছিলেন বিরোধীদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেবেন, তখন হাততালির শব্দ শোনা গিয়েছিল। এদিন যখন দিলীপ ঘোষ বাঁকুড়ায় এই কথা বলছেন তখনও কেউ হাততালি দিলেন আবার কেউ চেঁচিয়ে বললেন জয় শ্রীরাম।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সামাজিক যে অবক্ষয় চলছে তা থেকে রাজনীতিও বাইরে নয়। কিন্তু মুশকিল হল নেতাদের যখন কাজ হওয়া উচিত সেই অবক্ষয়কে ঠেকিয়ে সুষ্ঠু একটা পরিমণ্ডল বজায় রাখা তখন তাঁরাই সেসব ভেঙে দিচ্ছেন। দিলীপ ঘোষ বোধহয় এ ব্যাপারে কিংবদন্তী।

Previous articleRipe Rice: মাঠে পাকা ধান, চিন্তায় ঘুম ছুটেছে কৃষকদের
Next articleMamata Banerjee: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না নিলে সরকার ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হবে ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here