দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ টিকোলো নাক। মুখের অবয়বের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উন্নত চিবুক। উন্নত বক্ষ আর শরীরী খাঁজ। তবেই যেন তিনি বিনোদনের ঝলমলে দুনিয়ার লাস্যময়ী অভিনেত্রী। এমন এক দীর্ঘকালীন ধারণার মধ্যে দিয়েই বয়ে চলেছে বলিউডের ইতিহাস। এই মানসিকতার বশবর্তী হয়ে একাধিক নায়িকা অস্ত্রোপচারে নিজেদের স্তনের আকারে পরিবর্তন এনেছেন। কারও ঠোঁট বদলেছে, কারও নাক। স্তন প্রতিস্থাপনে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিলেন কোন বলি নায়িকারা? খোঁজ নিল দেশের সময়৷
পাতলা ঠোঁটকে পুরু বানানো, চ্যাপ্টা নাককে টিকোলো করে তোলা, থুতনির গড়ন বদলে ফেলা– প্লাস্টিক সার্জারির দাপটে কিছুই অসম্ভব নয়। বলিউডের বহু নায়িকাই শরীরে একাধিক ছুরি-কাঁচি চালিয়ে সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছেন বহু বছর ধরে। শুধু তাই নয়, অনেকেই করেছেন ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট বদলেছেন নিতম্বের আকার ও আয়তন।
এমনই এক পরামর্শ পেয়েছিলেন বলি নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন । কোনও এক ব্যক্তি তাঁকে বলেছিলেন, স্তন প্রতিস্থাপন করতে। এখন দীপিকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ আসমুদ্র হিমাচল, তাঁর অভিনয়ও সুপ্রশংসিত দেশ জুড়ে। তবে যখন এ কথা তাঁকে শুনতে হয়েছিল, তখন অবশ্য নায়িকা হননি দীপিকা। তখন তাঁর মাত্র ১৮ বছর বয়স ছিল।
ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ছিলেন দীপিকা, সেই থেকে শুরু করেছিলেন মডেলিং। তার পরেই তাঁকে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, দীপিকার শারীরিক সৌন্দর্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয় এই জগতের জন্য।
সম্প্রতি ‘গেহরাইয়া’ ছবির প্রচার নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে একথা জানিয়েছেন দীপিকা। তিনি ওই সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের পাওয়া সেরা এবং খারাপ পরামর্শের কথা শেয়ার করেছেন। তাতেই বলেছেন, মাত্র ১৮ বছর বয়সেই এক ব্যক্তির কাছ থেকে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টসের পরামর্শ পেয়েছিলেন দীপিকা। যদিও তিনি চুপ করে না শুনে তার যথাযোগ্য উত্তরও দিয়েছিলেন যথেষ্ট ‘মাস্তানি’ সহযোগে।
সাক্ষাৎকারে দীপিকা বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৮ বছর, তখন একজন আমায় বলেছিল ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টস করানোর জন্য। যদিও আমি তার কথায় মোটেই পাত্তা দিইনি। তবে আজ পুরোনো দিনের কথা ভাবলেই অবাক হই,এখন মনে হয় ভাগ্যিস আমার মাথায় বুদ্ধি ছিল।’
তবে নিজের জীবনের এই খারাপ পরামর্শই শুধু নয়, জীবনে পাওয়া সেরা উপদেশের কথাও জানিয়েছেন দীপিকা। তিনি বলেন, জীবনের সবচেয়ে সেরা উপদেশটি তিনি পেয়েছিলেন শাহরুখ খানের কাছ থেকে। প্রসঙ্গত, দীপিকার প্রথম সিনেমা ‘ওম শান্তি ওম’-এ তাঁর বিপরীতে নায়ক ছিলেন শাহরুখই।
শাহরুখ দীপিকাকে বলেছিলেন, ‘এমন মানুষের সঙ্গে কাজ করবে যার সঙ্গে কাজ করে তুমি আনন্দ পাবে, খুশি থাকবে। কারণ যখন তুমি কোনও একটা ছবির শুটিং করছ, তখন তুমি স্মৃতি তৈরি করছো, মুহূর্ত তৈরি করছ।’ সেই কথা আজও ভোলেননি দীপিকা। মেনে চলেন এখনও।
বুক দিয়ে যায় চেনা। স্তনের উন্নত আকারই সেই নারীর চাহিদা বাড়িয়ে তুলবে— এই ধারণা নিয়েই হলিউডের কিম কার্দেশিয়ান তাঁর উন্নত সুডৌল বক্ষকে আরও উন্নত করেছিলেন স্তন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে।
বলিউডও পিছিয়ে থাকেনি। আয়েষা টাকিয়া, বিপাশা বসু, সুস্মিতা সেন, রাখী সবন্ত, এমনকি শ্রীদেবীর নামও যোগ হয়েছে তালিকায়। তবে স্তন উন্নত করার এই পদ্ধতির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও যথেষ্ট পীড়াদায়ক। স্তন প্রতিস্থাপনের পরে কোমরের অসহ্য ব্যথায় থাকতে না পেরে আবার চিকিৎসার মাধ্যমে নিজের স্বাভাবিক স্তন ফিরিয়ে আনেন আয়েষা টাকিয়া।
ছুরির তলায় কাটাছেঁড়া করেছেন নিজের বুক। শিল্পা শেট্টি খোলামেলা ছবিতে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন স্তন প্রতিস্থাপনের পর থেকেই।
শ্রীদেবীর কেরিয়ারের প্রথম দিককার এবং পরবর্তীকালের ছবি দেখলে চোখে পড়ে বক্ষের তফাৎ। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিতে শ্রীদেবীর ‘কাটে নেহি কাটতে’ গানে তাঁর সুডৌল বুকের আবেদন আজও চর্চার বিষয়। চিকিৎসার মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো বুক তৈরি করেছিলেন শ্রীদেবীও।
আয়েষা ব্যতিক্রম। অনেকেই কিন্তু আবার স্তন প্রতিস্থাপন করে দিব্যি জীবন কাটিয়ে চলেছেন। যেমন সুস্মিতা সেন। ১৯৯৪-র বিশ্বসুন্দরী তাঁর স্তন প্রতিস্থাপন করার পরে টিনসেল নগরীর অনেকে নাকি তাঁকে দেখেই এই পথে হাঁটেন।
আর এক বাঙালি অভিনেত্রী বিপাশা বসু বরাবরই নিজের শরীরি সম্মোহন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে। স্তন প্রতিস্থাপন করে উন্নত, সুডৌল বক্ষ আর বক্ষভাঁজ নিয়ে তাই মেতে উঠেছেন বিভিন্ন ছবির শ্যুটে বা সিনেমায়।
বলিপাড়ার বিতর্কিত ‘কুইন’ কঙ্গনাও নিজের শরীর নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। সিলিকন পদ্ধতিতে তাই বক্ষ উন্নত করেন তিনিও। এর পর থেকেই অধিকাংশ ছবিতে দেখা যায় কঙ্গনা অর্ধনগ্ন বুক আর ক্লিভেজের ছবি দিয়ে নিজের আকর্ষণ বাড়াতে চাইছেন।
ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট বা স্তন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিজেকে সুন্দর করে তুলেছেন মল্লিকা শেরাওয়াত। খোলামেলা পোশাক, বুকের খাঁজ প্রদর্শন করে অনুরাগী মহলে নিজের চাহিদা বাড়িয়েছেন তিনি।
পুনম পাণ্ডেও এই দলেই পড়েন। নিজে প্রকাশ্যে এই বিষয়টি অস্বীকার করলেও তাঁর পুরনো ছবি আর নতুন ছবি মেলালেই ধরা পড়বে সিলিকন পদ্ধতিতে করা তাঁর উন্নত বক্ষ যুগল।
তবে কেউ পারে, কেউ পারে না। রাখী সবন্ত ‘আইটেম গার্ল’ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরেই স্তন প্রতিস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এই পদ্ধতি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ্য করতে পারেননি তিনি। শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। অগত্যা ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট তুলে নেন তিনি।