দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল সাইরাস মিস্ত্রির । মুম্বইয়ের অদূরে পালঘরে একটি পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। ভারতীয় কোটিপতি পালোনজি মিস্ত্রির ছেলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্প জগতে।

জানা গেছে আমদাবাদ থেকে মুম্বইয়ের দিকে আসছিলেন তিনি। হঠাৎই মহারাষ্ট্রের পালঘরের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক সেতুর ডিভাইডারে ধাক্কা মারে তাঁর গাড়ি। গাড়িতে সাইরাস ছাড়াও ছিলেন আরও দু’জন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে উদ্ধার করে সকলকে নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় দেশের অন্যতম শিল্পপতির।

পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার বিকেলে ৩:১৫ মিনিট নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছে পালঘরের চারোটিতে সূর্য নদীর ওপর এক সেতুর ওপর। সেই সেতুর এক ডিভাইডারে সজোরে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইরাস মিস্ত্রি ও তাঁর গাড়ি চালক এবং আরও একজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকেরা সাইরাসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

দেশের অন্যতম শিল্পপতি সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি টুইট করে লেখেন, ‘সাইরাস মিস্ত্রির আকস্মিক মৃত্যুতে বিস্মিত। তিনি একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী হিসেবে সবসময় দেশের আর্থিক বৃদ্ধির প্রতি সচেতন ছিলেন। তাঁর মৃত্যু শিল্প ও বাণিজ্য মহলে বড় ক্ষতি।’ মোদী আরও যোগ করেন, ‘তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’

মোদী ছাড়াও টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে মমতা লেখেন, ‘সাইরাস মিস্ত্রির অকাল প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত।’

টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘সাইরাস মিস্ত্রির অকাল প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল। ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা, তারা যেন এই বড় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার শক্তি পান। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’

সাইরাসের মৃত্যুকে শোক জ্ঞাপন করেছেন মহারাষ্ট্রের বিরোধীদল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির নেত্রী সুপ্রিয়া সুলেও। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘সাইরাস আমার ভাই, তুমি যেখানেই থাকো শান্তিতে থাকো।’

সাইরাসের মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। রাজ্য পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস টুইটে লিখেছেন, ‘আমি ডিজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে। তদন্ত করতে বলেছি।’

৪ জুলাই ১৯৬৮ সালে মুম্বইয়ে শিল্পপতি পালোনজি মিস্ত্রির পরিবারের জন্ম নেন সাইরাস। ১৯৯১ সালে পারিবারিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি সাপুরজি পালোনজি লিমিটেডের ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন তিনি। পরে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসেবে কয়েকবছর দায়িত্ব সামলান তিনি। ২০১২ সালে রতন টাটা এই পদ থেকে সরে যাওয়ার পর টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হন তিনি। টাটা গ্রুপের ষষ্ঠ চেয়ারম্যান তিনি।

টাটা গ্রুপে যোগ দেওয়ার পরই সাইরাস মিস্ত্রির বিষয়ে জানতে পারেন দেশের মানুষ। যার পদবীতে টাটা নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদে বসেন তিনি।

২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টাটার চেয়ারম্যান ছিলেন সাইরাস। টাটা গোষ্টীর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে বার বার সমালোচিত হয়েছেন। যা শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটি, এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।

সাইরাস টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। পুরো নাম সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রি । আসলে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইরিশ শিল্পপতি। ১৯৬৮ সালের ৪ জুলাই ভারতীয় ধনকুবের এবং নির্মাণ ব্যবসায়ী পালোনজি মিস্ত্রির ছোট ছেলে সাইরাসের জন্ম মহারাষ্ট্রের ধনকুবের পার্সি পরিবারে। তাঁর মায়ের জন্ম আয়ারল্যান্ডে। তাঁর দাদা শাপুর মিস্ত্রি একজন আইরিশ নাগরিক। সাইরাস মিস্ত্রির দুই বোন লায়লা ও আলু। আলু রতন টাটার সৎ ভাই নোয়েল টাটার স্ত্রী।

সাইরাসের পড়াশোনা মুম্বই ও লন্ডনে। প্রথমে মুম্বইয়ের ক্যাথেড্রাল এবং জন কনন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন সাইরাস। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৯০ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন। পরে লন্ডন বিজনেস স্কুলে পড়াশোনা। ১৯৯৬ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে ইন্টারন্যাশনাল একজিকিউটিভ মাস্টার্স ডিগ্রি পান।

১৯৯১ সালে সাইরাস মিস্ত্রি পারিবারিক নির্মাণ সংস্থা শাপুরজি পালোনজি অ্যান্ড কোং লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৬-এর ১ সেপ্টেম্বর তিনি টাটা সন্সের বোর্ডে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তাঁকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান করা হয়। এছাড়াও তিনি টাটা ইন্ডাস্ট্রিজ, টাটা স্টিল, টাটা পাওয়ার, টাটা টেলিসার্ভিসেস, টাটা কেমিকেলস-সহ টাটার বিভিন্ন ছোট-বড় কোম্পানির চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন।

তবে সাইরাসের পরিবার ৩০-এর দশকেই টাটা সন্সে অংশীদারিত্ব পেয়েছিল। বর্তমানে টাটা সন্সে সাইরাস ইনভেস্টমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে পরিবারের অংশীদারিত্ব ১৮.৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

দুপুর ৩ টে ১৫ থেকে ৩ টে ৩০ নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। মুম্বই থেকে মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার দূরে পালঘরের চারোটি এলাকার ডিভাইডারে গিয়ে ধাক্কা দেয় তাঁর ধূসর রঙের মার্সিডিস। সেখানেই মৃত্যু হয় টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের। মারা গিয়েছেন গাড়ির চালকও। বাকি আরও দু’জন আহত হয়েছেন। গুজরাটের হাসপাতালে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা গিয়েছে, রাস্তায় দুমড়ে মুচড়ে পড়ে রয়েছে তাঁর মার্সিডিস। আর ৫৪ বছর বয়সেই জীবন থেমে গেল গাড়ির মালিকের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here