দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মূল কেন্দ্রটি উপকূল অতিক্রম করে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সোমবার সন্ধ্যায় এবং মূল কেন্দ্রটি রাতে উপকূলে আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ভোলার উপর দিয়ে যায়। সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাংলাদেশে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কুমিল্লায় ৩ জন, ভোলায় ২ জন, নড়াইলে ১ জন, বরগুনায় ১ জন এবং সিরাজগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের দড়িকান্দি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় একটি গাছ উপড়ে পড়ে। তার জেরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আবহাওয়া দফতর আগেই পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, বাংলাদেশেই আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সেই মতো সোমবার রাতে সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি উপকূলে আঘাত করে রাতের দিকে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে সে দেশে। এখনও পর্যন্ত ৯ জন মারা গিয়েছেন ঝড়ের তাণ্ডবে। সোমবার সকাল থেকেই সে দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে তাণ্ডবের তীব্রতা।

ঘূ্র্ণিঝড় সিত্রাং প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের ১৩টি জেলায়। ওই সব জেলায় আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। উপকূলবর্তী এলাকার বহু বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার সময় উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা অন্যান্য জায়গা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে সোমবার বিকেল থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় ফেরি ও নৌকো চলাচল। প্রবল বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ বাস নির্ধারিত সময়ে দক্ষিণের গন্তব্যে রওনা হতে পারেনি। সেই সঙ্গে উপকূলের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎও ছিল না। ফলে উপকূলীয় এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বাড়ে। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালি, ফেনী ও বরিশালে ক্ষতির আশঙ্কা সব চেয়ে বেশি।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশাল, চট্টগ্রাম উপকূল-সহ সারা দেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত পটুয়াখালির খেপুপাড়ায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া বরিশালে ২৬১, পটুয়াখালিতে ২৫৩, মোংলায় ২১৯ ও খুলনায় ১৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তায় জল জমে ব্যাপক দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ এলাকায় ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ–নদীর জলস্তর স্বাভাবিকের থেকে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ভোলার দৌলতখানা পুর এলাকায় খাদিজা বিবি নামে এক বৃদ্ধা গাছ চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। ভোলাতেই আর এক জন মারা গিয়েছেন চারফ্যাশন উপজেলায়। সেখানে দু’জন বাইকে করে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁদের উপর একটি গাছ ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাইক চালকের। আরোহী গুরুতর আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভর্তি করানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে। বরগুনা জেলায় একটি বাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে। ওই সময় ঘরে থাকা আমিনা খাতুন নামে এক বৃদ্ধার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।

নড়াইলের মর্জিনা বেগম গুরুতর আহত হন। সোমবার দুপুরে গাছের ডাল তাঁর উপর ভেঙে পড়ে। স্থানীয়েরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঘরের উপর গাছ উপড়ে পড়ে সন্তান-সহ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার রাত ১১টা নাগাদ হেসাখাল ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতেরা হলেন নিজামউদ্দিন, তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার এবং তাঁদের চার বছরের শিশুসন্তান নুসরত। অন্য দিকে, সিরাজগঞ্জ সদরের সয়দা ইউনিয়নের মোহনপুর এলাকায় সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here