Cyclone Dana Live স্থলভাগে ঢুকে পড়ল ‘দানা’, ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু ওড়িশায়, চলবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত , রাত জাগছেন মুখ্যমন্ত্রী

0
212
পার্থ সারথি নন্দী দেশের সময়

Mamata Banerjee on Cyclone Dana‘দানা’র আতঙ্ক! নবান্নের কন্ট্রোল রুমে জায়ান্ট স্ক্রিনে চোখ মুখ্যমন্ত্রীর, সারা রাত জেগে করবেন তদারকি

হঠাৎ উল্টোদিকে বইছে বাতাস, উড়ছে কিছু সাদা সাদা পাখিবৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক সেভাবেই বদলে গেল পারাদ্বীপের ছবিটা। স্থলভাগে ঢুকে পড়েছে ঘুর্ণঝড় ‘দানা’। ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। চলবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। রাত সাড়ে ১১টার বুলেটিন অনুযায়ী, পারাদ্বীপ থেকে আর মাত্র ৫০ কিমি দূরে রয়েছে ‘দানা’। ওড়িশার ধামারা থেকে ৪০ কিমি দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ১৭০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়। 

১২টা বাজতেই না বাজতেই স্থলভাগে ঝাঁপিয়ে পড়ল দানা। শুরু ল্যান্ডফল, রাত জাগছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেগে রয়েছেন মুখ্যসচিব‌ও। আবহাওয়া দফতর বলছে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগবে প্রায় চার ঘণ্টা।

দেশের সময় : বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আছড়ে পড়ার কথা ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে। এই ঝড়ের প্রভাব থাকবে পুরী থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত। অর্থাৎ বাংলা এবং ওড়িশা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জায়গায় রয়েছে। কিন্তু এই দুটি রাজ্য ছাড়া আরও পাঁচ রাজ্য ‘দানা’ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। সেখানকার রাজ্য প্রশাসনও ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে ক্ষয়ক্ষতি রোধে।

মৌসম ভবন জানিয়েছে, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ‘দানা’র তাণ্ডব চলবে অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, বিহার এবং তামিলনাড়ুতে। ইতিমধ্যেই বিহারের ১২ জেলায় সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। সেই ১২ জেলার মধ্যে রয়েছে ভাগলপুর, বাঁকা, জামুই, মুঙ্গের, শেখপুরা, নালন্দা, জেহানাবাদ, লখিসরাই, নওয়াদা, গয়া, কটিহার, পুর্ণিয়া এবং কিসানগঞ্জ। এই জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র গতিবিধি নজরে রাখতে নবান্নের কন্ট্রোল রুমে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকেই কন্ট্রোল রুমে রয়েছেন তিনি। নজর রেখেছেন জায়ান্ট স্ক্রিনে। কন্ট্রোল রুমে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। বিকেলেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি সারা রাত নবান্নেই কাটাবেন। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের জীবন হল সবচেয়ে দামি। মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে। স্কুলগুলি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই কারণেই। আমি আজ রাতে নবান্নেই থাকব। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সকলে কাজ করবেন।’’

নবান্ন সূত্রে খবর, শুধু কন্ট্রোল রুমে থাকাই নয়, নিজের দফতরের কাজও করবেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজের দফতরে গিয়ে যথাযথ জায়গায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ পৌঁছে দেবেন। তার পর আবার ফিরে আসবেন কন্ট্রোল রুমে। সব কাজ যাতে তাঁর সঙ্গে সমন্বয় রেখেই করা হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনিক কর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশও দিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

‘দানা’ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাংলায় সবথেকে বেশি পড়ার কথা দুই মেদিনীপুর সহ দুই ২৪ পরগনায়। এই কারণেই অনেক আগে থেকে দিঘা, মন্দারমণি থেকে পর্যটকদের সরানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঝড়ের কারণে দিঘায় যে জগন্নাথ মন্দিরের কাজ হচ্ছিল সেই কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে।

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘায় তৈরি হচ্ছে এই জগন্নাথ মন্দির। কাজ অনেকটাই এগিয়েছে তার মধ্যেই ‘দানা’র আতঙ্ক। স্থানীয়রা অনেকেই বলেছেন, ঝড়ের প্রভাব মন্দির এলাকায় পড়ার কথা নয়। কিন্তু তাও সাধারণ মানুষের কথা ভেবে, কারও যাতে কোনও ভাবেই বিপদ না হয়, সেই কথা মাথায় রেখে মন্দিরের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাইড্রোলিক ল্যাডারও। দুর্যোগ পুরোপুরি কেটে গেলে তবে ফের কাজ শুরু হবে।  

ল্যান্ডফলের সময় দিঘা, মন্দারমনি-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ১০০ থেকে ১২০ কিমি। আলিপুর জানাচ্ছে, ল্যান্ডফলের সময় দিঘায় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ১ থেকে ২ মিটার হতে পারে। একইভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে দশমিক ৫ থেকে ১ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সার্বিকভাবে গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

আবহাওয়া দফতর যে পূর্বাভাস দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে বলা যায়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগড়, বিহার এবং তামিলনাড়ুতে প্রভাব ফেলবে ‘দানা’। রাজ্যগুলির বেশিরভাগ জেলাতেই ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত ঝড় হতে পারে। তার সঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। বিহারের কমপক্ষে ১২ জেলায়, ছত্তীসগড়ের ৮ জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে ইতিমধ্যে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ থেকে শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সকলেই তৎপর। 

স্থলভাগের আরও কাছে এগিয়ে এল ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। বঙ্গোপসাগরের উপর তার গতিও বৃদ্ধি পেল। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বুলেটিন বলছে, শেষ ছ’ঘণ্টায় তার গতিবেগ ছিল ১৩ কিলোমিটার। এর আগে সমুদ্রের উপর দিয়ে ১২ কিলোমিটার গতিবেগে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছিল সে। এখন সমুদ্রের উপর ঝড়ের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২৫ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় হাওয়া অফিস যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে আসছে ‘দানা’। ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে এখন ৯০ কিলোমিটার পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ‘দানা’। ধামারা থেকে ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে ‘দানা’। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার কথা তার।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে ‘দানা’। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ‘দানা’র গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার। সর্বাধিক গতি পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ‘দানা’-র প্রভাবে ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। বিশেষত, পারাদ্বীপ, কেন্দ্রাপড়া এবং ভদ্রকে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।

দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে মাঝেমধ্যে ১২০ কিলোমিটার। ‘ল্যান্ডফল’-এর প্রক্রিয়া যখন চলবে, সেই সময় পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ, সুন্দরবনে ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাকি অংশে সে সময় ঝড়ের গতি হতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ৯০ কিলোমিটার। কলকাতায় সেই সময় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় হতে পারে। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া বইতে পারে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে।

নবান্ন সূত্রে খবর, সেচমন্ত্রী মানসকে মেদিনীপুরে থেকে ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতির উপর নজরদারি করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী বিরবাহাকে ঝাড়গ্রামে থেকে নজরদারি করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব পাশকুড়া পূর্বের বিধায়ক হলেও, তাঁকে দেখতে বলা হয়েছে দিঘার সামুদ্রিক এলাকা। দায়িত্ব পাওয়ার পরেই কাজও শুরু করে দিয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র সাগরদ্বীপে থেকেই গোটা সুন্দরবনের ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে শুরু করেছেন। সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা এলাকায় নজরদারি করতে সচিব পর্যায়ের আধিকারিক মণীশ জৈনকেও পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নেও হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নবান্নের হেল্পলাইন নম্বর (০৩৩) ২২১৪৩৫২৬ এবং ১০৭০। হেল্পলাইন নম্বরে কেউ যাতে অকারণে ফোন না করেন, সেই অনুরোধও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেবলমাত্র সঠিক তথ্যই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে জানানোর জন্য রাজ্যবাসীকে অনুরোধ মমতার।

ছবিগুলি তুলেছেন জয়ন্ত সাউ ।

Previous articleSuvenduAdhikari ‘দানা ‘র মোকাবিলায় ওড়িশার সরকারের মতো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলা, অভিযোগ শুভেন্দুর : দেখুন ভিডিও
Next articleCyclone Danaশুরু ‘ল্যান্ডফল’, স্থলভাগ অতিক্রম করছে ‘দানা’র সামনের অংশ, উপকূলে ঝড় বইছে ১২০ কিমি বেগে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here