দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দানার প্রভাবে ইতিমধ্যে রাজ্যজুড়ে ঝোড়ো হাওয়া সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে তা আরও বাড়বে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে দানা! ক্রমশই এগিয়ে আসছে স্থলভাগের দিকে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে তা আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারন করবে।

এখন ঠিক কোথায় অবস্থান করছে দানা? বুধবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক থেকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক হাবিবুর রহমান জানালেন , সাগরদ্বীপ থেকে ৫৭০ কিমি দূরে, পারা দ্বীপ থেকে ৪৯০ কিমি এবং ধামরা থেকে ৫২০ কিমি দূরে রয়েছে দানা। এটি ক্রমশ: উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে।
বৃহস্পতিবার থেকে ঝড় আরও তীব্রতর হবে।
২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে উত্তর ওড়িশা ও সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি জায়গা ওড়িশার ভিতর-কণিকা ও ধামরার মধ্যে এটি ল্যান্ডফল করার কথা। দেখুন ভিডিও
এর প্রভাবে মঙ্গলবার থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে রাজ্যের একাধিক জেলায়। এদিন সন্ধে থেকে দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনায় হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টি হবে। ২৪ তারিখ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বৃষ্টির পরিমাণ হতে পারে ২০ মিলিমিটার। একইভাবে ২৫ অক্টোবরও সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির পাশাপাশি ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতা , হাওড়া , হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়।

২৬ অক্টোবর থেকে অন্যান্য জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝোড়ো হাওয়ার বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার সকালের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে হাওয়ার গতি বেড়ে ১২০ কিলোমিটারে পৌঁছে যেতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর দ্বীপ, সুন্দরবন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঝড়ের গতি হতে পারে ৮০-৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।

এ ছাড়া, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং বাঁকুড়ায় শুক্রবার পর্যন্ত ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দরেও। দুর্যোগের কারণে শনিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
মৌসম ভবনের বুলেটিন অনুযায়ী, সমুদ্রে আরও কিছুটা এগিয়েছে ‘দানা’। গত ছ’ঘণ্টায় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে সরেছে ঘূর্ণিঝড়। এই মুহূর্তে তার অবস্থান পারাদ্বীপ থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব, ধামারা থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব, সাগর দ্বীপ থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপেই স্থলভাগে প্রবেশ করতে চলেছে ‘দানা’। ফলে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সতর্কতা জারি করা হয়েছে জলোচ্ছ্বাসের জন্যেও। উপকূলের সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে সাড়ে ছ’ফুটের বেশি।
ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে কলকাতা এবং বিভিন্ন জেলায় প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, তাজপুর, বকখালি থেকে পর্যটকদের সরানো হচ্ছে। কাঁচা বাড়ি থেকে বাসিন্দাদেরও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ স্থানে। কলকাতায় একাধিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। চালু রাখা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। সতর্কতাজনিত কারণে ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে। বাতিল হয়েছে একাধিক লোকাল ট্রেন।
হাওয়া অফিস থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে বুধবার বলা হয়েছে, ‘‘অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে তিন থেকে চারটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। ‘দানা’ তারই অংশ। বৃষ্টি, ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুর।’’

ঘূর্ণিঝড় যখন আসবে তখন হাওড়া-হুগলিতে বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। পূর্ব মেদিনীপুরে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। মৌসম ভবন সূত্রে খবর, আজ মধ্যরাত থেকে কাল সকালের মধ্যে গতিবেগ আরও বাড়বে। পুরী, সাগরদ্বীপের মধ্যে ভিতরকণিকা, ধামরা পোর্ট এলাকায় ল্যান্ডফল হতে পারে। সেই সময় গতিবেগ ১২০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র তীরবর্তী জেলা, হাওড়া,হুগলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
দুর্যোগের কারণে কলকাতা, হাওড়া-সহ একাধিক পুরসভায় জরুরি বিভাগকে আগেভাগে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। খোলা হয়েছে একাধিক কন্ট্রোল রুম। রাজ্যের চার মন্ত্রীকে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি তদারকির বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁদের যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল সংলগ্ন এলাকায়। ওই দুই জেলাতেও আলাদা করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন।

বুধবার দুপুর থেকে শনিবার পর্যন্ত কলকাতা পুরসভায় জরুরি বিভাগে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিকাশি, বিদ্যুৎ, আলো, উদ্যান, স্বাস্থ্য, নাগরিক সুরক্ষা এবং জঞ্জাল অপসারণ বিভাগকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। খোলা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। এই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে নবান্ন এবং লালবাজারও সংযুক্ত থাকছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কোথাও কোনও বিপত্তি ঘটলে কন্ট্রোল রুমের নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। পুরসভার কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগের নম্বর— ২২৮৬১২১২, ২২৮৬১৩১৩ এবং ২২৮৬১৪১৪।

বৃষ্টির কারণে শহরে নিকাশি ব্যবস্থায় যাতে খুব বেশি সমস্যা না হয়, আগে থেকে তার জন্য প্রস্তুত কলকাতা পুরসভা। তৈরি রাখা হয়েছে ২৮১টি নিকাশি যন্ত্র। এ ছাড়া, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪৫২টি পাম্প সক্রিয় রাখা হয়েছে। হাইড্রোলিক ল্যাডার-সহ একাধিক যন্ত্রপাতিও প্রস্তুত রয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে শহরে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা হলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) এবং সিইএসসির কন্ট্রোল রুমের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর হেল্পলাইন নম্বর— ৮৯০০৭৯৩৫০৩ এবং ৮৯০০৭৯৩৫০৪। এ ছাড়াও, টোল ফ্রি নম্বর ১৯২২১ এবং হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর ৮৪৩৩৭১৯১২১।
সিইএসসি-র হেল্পলাইন নম্বর— ৩৫০১১৯১২, ৪৪০৩১৯১২, ১৯১২। হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর ৭৪৩৯০০১৯১২। বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর— ৯৮৩১০৭৯৬৬৬, ৯৮৩১০৮৩৭০০।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কলকাতায় ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকবে বৃহস্পতিবার থেকে। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হুগলি, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জেলাতে বুধবার বিকেল থেকেই ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে।
