দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এবছর মোটামুটি শুকনো আবহাওয়াতেই দুর্গা পুজো কেটেছে বাঙালির। কিন্তু কালীপুজোর আগেই আবহাওয়ার বড় পরিবর্তনের আশঙ্কা। রক্তচক্ষু নিয়ে হাজির হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’।
ইতিমধ্যেই ওড়িশা ও বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ওড়িশা-বাংলার কাছে পৌঁছবে ‘দানা’। তবে বুধবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকবে উপকূলে। ঝড় কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়ে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরে। তা থেকে আর তিন দিনের মধ্যেই জন্ম নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর তা ক্রমে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে আসতে পারে। এর ফলে উপকূলের কাছে সমুদ্রে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্ক করেছে হাওয়া অফিস। বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তার নাম হবে ‘দানা’। কাতার এই নাম রেখেছে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে সোমবার সকালেই নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়ে গিয়েছে। ক্রমে তা পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে আরও ঘনীভূত হবে এবং ২২ অক্টোবরের মধ্যে পরিণত হবে নিম্নচাপে। নিম্নচাপ আরও শক্তি বৃদ্ধি করে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দিতে পারে, জানিয়েছে মৌসম ভবন। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ২৩ অক্টোবর, বুধবার ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। তার পর ক্রমে তা উত্তর-পশ্চিম দিকে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগোবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপ পরিস্থিতির কারণে ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ঝোড়ো আবহাওয়া থাকবে। হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়ে গেলে বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। দমকা হাওয়ার বেগ হতে পারে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ওই সময়ে সমুদ্র উত্তাল থাকবে উপকূলের কাছে।
২১ থেকে ২৩ অক্টোবর গভীর সমুদ্রে অর্থাৎ মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এবং ২৬ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করেছে হাওয়া অফিস।
উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে অন্য কোনও জেলায় আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়নি।
আলিপুর জানিয়েছে, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কলকাতায় আপাতত বৃষ্টির সতর্কতা নেই। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়।
সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণ হতে পারে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামেও। বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। সেই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। এই জেলাগুলিতে বুধবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের আর কোনও জেলায় আপাতত আবহাওয়া সংক্রান্ত কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি।
আলিপুর জানিয়েছে, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কলকাতায় আপাতত বৃষ্টির সতর্কতা নেই। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়।
সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণ হতে পারে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামেও। বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। সেই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। এই জেলাগুলিতে বুধবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের আর কোনও জেলায় আপাতত আবহাওয়া সংক্রান্ত কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি।
‘দানা’ ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে ত্রস্ত সুন্দরবনের উপকূল এলাকা। আজ, সোমবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে, সেই সঙ্গে মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে সব মৎস্যজীবী ট্রলারকে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। একটানা তিন দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে, সঙ্গে ঝড়। পূর্বাভাসে এমনটাই বলা হয়েছে। বাড়তে পারে সমুদ্র ও নদীর জলস্তর।
জেলার সুন্দরবন উপকূলে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে উপকূলবর্তী সাগর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, বকখালি, পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘি এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা ও নামখানা ব্লকে সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাঁধের কাছে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ধীরে ধীরে বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে উচুঁ এলাকা বা সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাকদ্বীপ মহকুমা শাসকের দফতরে ২৪ ঘন্টার কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিভিল ডিফেন্স, এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ-কে সতর্ক করে সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সুন্দরবনের উপকূল এলাকায় জরুরিভিত্তিতে মোতায়েন করা হতে পারে ওই বিশেষ বাহিনী।
ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিক এবং কর্মীরা বাঁধের উপর নজরদারি চালাবে। কোথাও কোন বাঁধে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত মেরামত করা হবে বলে সেচ দফতরের নির্দেশ। পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসগুলোতে শুকনো খাবার, পানীয় জলের পাউচ এবং ত্রিপল মজুদ করা হচ্ছে। উপকূল এলাকায় নজরদারি চালাতে বিডিও অফিসগুলোতেও একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।