দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গতিপথ বদল করল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ ৷ মঙ্গলবার মৌসম ভবন জানিয়েছিল, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রেই থাকবে। স্থলভাগে প্রবেশ করবে না। কিন্তু রাতেই সেই পূর্বাভাস বদল করা হল। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, অশনি ডাঙা ছোঁবে। অন্ধ্র উপকূলের কাঁকিনাড়ার কাছে সেটি স্থলে প্রবেশ করেই কিছুক্ষণ থেকে আবার ফিরে যাবে সমুদ্রে।

এদিকে বুধবার সকালে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ‘অশনি’ প্রভাবে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।

বিশাখাপত্তনমের সাইক্লোন ওয়ার্নিং সেন্টারের তরফে বলা হয়েছে গত ৬ ঘণ্টায় গতিপথ পরিবর্তন করেছে ‘অশনি’। এতক্ষণ যে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ ছিল উত্তর-পশ্চিমে, এখন দিকবদল করে সেটি এগোচ্ছে পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে ৷ এর ফলে এই ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল ছুঁতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেইমতো সতর্ক করা হয়েছে রাজ্যকে।

অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল ঘেঁষা জেলাগুলিতে ‘অশনি’র প্রভাবে ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালেই কাঁকিনাড়া উপকূলে পৌঁছে যাবে ঘূর্ণিঝড়। সেই অনুযায়ী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে।

বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল জুড়ে এই মর্মে লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ওড়া অধিকাংশ বিমান বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়ছে প্রায় ৪০টি ট্রেন। এমনকি পূর্বনির্ধারিত বোর্ডের পরীক্ষাও জরুরি পরিস্থিতিতে পিছিয়ে দিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। তবে মৌসম ভবন কিছুটা আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় যখন স্থলভাগে প্রবেশ করবে তখন সেটির তীব্রতা কিছুটা কম থাকবে বলে বড় ক্ষয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী বুধবার সকালেই অন্ধ্র উপকূলে ঢোকার কথা ‘অশনি’র। তারপর সেটি মছলিপুরম, নরসাপুর, ইয়ানম, কাঁকিনাড়া, টুনি হয়ে ফের সমুদ্রে ফিরবে। আবহাওয়া ব্যুরোর এক দায়িত্ব প্রাপ্ত অধিকর্তা জানিয়েছেন, তার আগেই রাতেই তীব্র ঘূর্ণিঝড থেকে ‘অশনি’ সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ায় ঝড়ের কেন্দ্রের ঘূর্ণন গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮৫ থেকে ৯৫ কিলোমিটারের মধ্যে।

 ‌‌‘‌অশনি’‌র জেরে বাংলায়ও চলছে বৃষ্টি। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উত্তর–পশ্চিম অভিমুখে এগোচ্ছে ‘‌অশনি’‌। বর্তমানে অন্ধ্রের কাঁকিনাড়া থেকে ১৮০ কিমি দূরে রয়েছে ‘‌অশনি’‌। বিশাখাপত্তনম থেকে ৩১০ কিমি দূরে। আর মছলিপত্তনম থেকে মাত্র ৬০ কিমি দূরে রয়েছে ‘‌অশনি’‌। ঘণ্টায় ১২ কিমি গতিবেগে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। তবে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘‌অশনি’‌ ইতিমধ্যেই শক্তি হারিয়েছে। ধীরে ধীরে আরও শক্তি হারাবে। পরিণত হবে নিম্নচাপে।

যদিও ‘‌অশনি’‌র প্রভাবে মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা জুড়ে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র। ওই রাজ্যের তরফে সতর্ক করা হচ্ছে সকলকে। সমুদ্রের পাড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জারি রেল অ্যালার্ট।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় পথে রয়েছে পুলিশ, পুরকর্মী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ওড়া অধিকাংশ বিমান বাতিল করা হয়েছে। এমনকি বোর্ডের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাও জরুরি পরিস্থিতিতে পিছিয়ে দিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। আবার ‘‌অশনি’‌র প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই বাংলার বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে বুধবার ও বৃহস্পতিবার বাংলার প্রায় সবকটি জেলাতেই বৃষ্টি হবে। ‘‌অশনি’‌ মোকাবিলায় রাজ্যের তরফে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকত এলাকার হোটেলগুলি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সমু্দ্রের পাড়ে চলছে মাইকিং। কন্ট্রোল রুম খুলেছে নবান্ন, কলকাতা পুরসভা। হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here