সোমবার পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান, পুরনিগমগুলির মেয়র এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের ডেকে পুর পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই পরিষেবা নিয়ে তৎপর বনগাঁ পুরসভা।
দেশের সময় : পানীয় জল, আবাসন, পরিচ্ছন্নতা-সহ একাধিক পুর পরিষেবার নিরিখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভপ্রকাশের পরদিনই তৎপর রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পর সোমবার সন্ধ্যাতেই পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছিল কোথাও কোথাও। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেই তৎপরতা আরও বেড়েছে।
সোমবার নবান্ন সভাঘরে পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান, পুরনিগমগুলির মেয়র এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে রাজ্যের পুর পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় পানীয় জল, আবাসন, পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে জায়গা দখল করে অস্থায়ী দোকান খোলা নিয়ে সরব হন মমতা। এ নিয়ে মমতার ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় মন্ত্রী-বিধায়কদেরও। সরাসরি কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেও ক্ষোভপ্রকাশ করেন মমতা। এর পরেই পরিষেবা নিয়ে তৎপর হয় বিভিন্ন পুরসভার পাশাপাশি বনগাঁ পুরসভাও । দেখুন ভিডিও
উল্লেখ্য, পানীয় জল, আবাসন, পরিচ্ছন্নতা-সহ একাধিক পুর পরিষেবার নিরিখে সোমবার নবান্ন সভাঘরে পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান, পুরনিগমগুলির মেয়র এবং প্রশাসনিক আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোষের মুখে পড়েন ।
মুখ্যমন্ত্রীর নজরকারা বিষয় গুলি যে এবারের লোকসভা ভোটে প্রভাব ফেলেছে প্রত্যক্ষ ভাবে তা বনগাঁ পুরসভার ২২ টি ওয়ার্ডের ফলাফল দেখলেই জলের মতো স্বচ্ছ ধারণা করা যায় ।
মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয়গুলিকে ইস্যু করেছিলেন ,তেমন একাধিক কারণে বনগাঁর স্থানীয় মানুষ ও যে ক্ষুব্ধ তাঁরা তার প্রমাণ রেখেছেন ভোটবাক্সে । ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস ।
কি বলছেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দারা –
সীমান্ত বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী সঞ্জয় মুখার্জী জানান, শহরের রাস্তার দু’ধারে গজিয়ে উঠেছে নতুন নতুন দোকান,ফুটপাত দিয়ে সাধারণ মানুষের এক পা হাঁটার মতো জায়গা নেই । ফুটপাত জুড়ে পড়ে থাকে ইমারতি দ্রব্য বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে ফুটপাত আছে বলে মনে হয় না । অটো – টোটোর স্ট্যান্ড যত্র-তত্র । যানবাহন চলাচলের উপরে কোন নিয়ন্ত্রন আছে বলে মনে হয় না । ফুটপাত জুড়ে শুধু মোমো আর বিরিয়ানির দোকান । এই শহরে যশোর রোডের দুধার দেখলে মনে বোঝা দায় এটা ফুটপাত নাকি সড়াইখানা । বাধ্য হয়েই সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। এই কারণেই প্রায় ঘটছে বড়সড় দুর্ঘটনা ।
শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক । সীমান্ত বাণিজ্যের কারণে এই রাস্তায় সব সময় যানজট লেগেই থাকে । রাস্তার দুপাশে ফুটপাত দখল করে আবার বিক্রি হচ্ছে জামা কাপড় জুতো ।
একই ছবি চোখে পড়ে বনগাঁ চাকদহ সড়কেও।সেই রাস্তার দুপাশে ফুটপাত জুড়ে ইমারতি দ্রব্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে । রয়েছে বেআইনি অটো -বাইক স্ট্যান্ড । বিশেষ করে রাতের বেলায় ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় বসে চায়ের দোকান তারই কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা । বনগাঁ হাসপাতালের সামনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাস্তার দুপাশ জুড়ে রয়েছে অটো স্ট্যান্ড । উল্টোদিকে ফুটপাত ঘিরে চলেছে খাবারের দোকান এছাড়াও শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে নার্সিংহোম, ডায়াগনস্টিক ,শপিং মল।আর এইসব শপিংমলের কোথাও নেই নিজস্ব পার্কিং জোন ফুটপাতকেই পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।এ বিষয়ে কোনো পুর প্রশাসনের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শহরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন অসুস্থ ব্যক্তিকে বনগাঁ হাসপাতালে বা হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করতে গেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার পথেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া মানুষগুলোর কি করুন পরিস্থিতি তৈরী হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় ।
কী কী পদক্ষেপ করল— বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো বুধবার দুপুর থেকেই শহরে মাইক প্রচার শুরু করা হয়েছে । আগামী রবিবারের মধ্যেই ব্যবসায়ীদেরকে ফুটপাত ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে । স্ব-ইচ্ছায় না সরলে আগামী সোমবার থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে । পাশাপাশি পথদুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রী সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে পুলিশ – প্রশাসন ও পুরসভার উদ্যোগে । দিনের বেলায় শহরে ট্রাক চলাচলের উপরেও বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে ।