দেশের সময় : সারা দেশজুড়ে পালিত ক্রিসমাস। রকমারি কেক, গিফট, ক্রিসমাস ট্রি আর আলোর মালায় সেজেছে ভারত। দিনভর বিভিন্ন প্রান্তে ফেস্টিভ মুডে মানুষ।
দেশজুড়ে পালিত বড়দিন। আলোয় সেজে উঠেছে রাস্তাঘাট,চার্চ, বাড়িঘর। খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি উৎসবের আমেজে মেতেছেন সর্বসাধারণ। গোটা বিশ্বের সঙ্গে ক্যারলের সুরে যীশু বন্দনা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। মঙ্গল কামনায় চার্চে-চার্চে জ্বলছে হাজার-হাজার মোমবাতি। ক্রিসমাসে কেক আর দেদার খানাপিনায় ফেস্টিভমুডে ভারত।
বড়দিনে বড় মজা! বড়দিন মানেই বছর শেষের হাতছানি৷ সকলে মিলে একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য প্রস্তুতি৷ বড়দিনে বিভিন্ন জায়গায় চলছে পিকনিক, খাওয়া দাওয়া৷ সকলে মিলে চলছে মজা, হুল্লোড়৷
আবার পৃথিবী সেই তেরছা অবস্থানে। সেখানে দিন ছোট, রাতগুলো আর একটু বড়। হঠাৎ-হঠাৎ উত্তর দিক থেকে শিরশিরে বাতাস শহরের পাঁজরে কাঁপুনি ধরিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। শেষরাতে শহর ভিজে যাচ্ছে শিশিরে। বাজারে ফুলকপি, মুলো, কমলালেবু, নতুন গুড় আর পথ চলতি মানুষের কানঢাকা টুপি মনে করিয়ে দিচ্ছে, আবার এসেছে বড়দিন।
বড়দিন সকলের। ২৫ ডিসেম্বর জিশুর জন্মদিন কি না, এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, বার্ষিক খ্রিস্টীয় উৎসবের এই দিনটি খ্রিস্টান-অখ্রিস্টান নির্বিশেষে সবার প্রিয় উৎসবের দিন। এই দিনটি থেকেই খ্রিস্টধর্মের ১২ দিন ব্যাপী ক্রিসমাসটাইড অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ। উপহার দেওয়া-নেওয়া, ক্রিসমাস ক্যারলের ঝঙ্কার, গির্জায় গির্জায় বিশেষ উপাসনা, গ্রিটিংস কার্ড বিনিময়, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, জিশুর জন্মদৃশ্য, আলোকসজ্জা, রকমারি ভোজের আয়োজন—সব মিলিয়ে বড়দিন সত্যিই বড় দিন।
কলকাতা তখন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের রাজধানী। বড়দিন এলেই এ দেশের সাহেব-মেমদের মনে পড়ত নেটিভ ল্যান্ডের কথা। বড়দিনের আগে সাহেবরা ঘরবাড়ি মেরামত ও চুনকাম করাতেন। কলকাতার প্রথম আর্চবিশপ রেজিনাল্ড হেবার ১৮২৩-এ তাঁর জার্নালে উল্লেখ করেছেন, সেই সময় ডালহৌসি এবং চৌরঙ্গি অঞ্চলের প্রত্যেক সাহেব-বাড়িই দেবদারু গাছের ডাল, ফুল, লতাপাতা দিয়ে সাজানো হত।
পলাশি ও বক্সার যুদ্ধ জিতে ব্রিটিশ শাসন ভারতে তাদের জায়গা মজবুত করল। তার পর মন দিল রাজধানী কলকাতার বুকে ক্রিসমাস পালনে। সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস স্যর এলাইজ়া ইম্পে, এখন যেখানে পার্ক স্ট্রিট, সেখানে তৈরি করালেন একটা ‘ডিয়ার পার্ক’, যাতে বল্গা হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চড়ে সান্টা ক্লজ় সোজা সেই পার্কেই ল্যান্ড করতে পারেন। এখন সেই পার্কও নেই, হরিণও নেই, কিন্তু লোকের বিশ্বাস, মাঝরাতে সান্টা পার্ক স্ট্রিটে অবশ্যই আসবেন! ২০১১ সাল থেকে ‘কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভাল’ নামে চিহ্নিত এই উৎসব জনসমাগমের দিক থেকে সমগ্র পূর্ব ভারতে সবচেয়ে বড়। ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার হাজার হাজার মানুষ এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন।
উনিশ শতকের শুরুতে কলকাতায় ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা যথেষ্ট বেড়ে গিয়েছিল। ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট জনস চার্চে তাদের উপাসনার স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না। ফলে কলকাতার পঞ্চম বিশপ, ড্যানিয়েল উইলসনের উদ্যোগে ১৮৩৯ সালে তৈরি হল সেন্ট ক্যাথিড্রাল চার্চ, যাতে ৮০০-১০০০ মানুষ একত্রে উপাসনা করতে পারে। ব্রিটিশ ভারতের এই ঐতিহ্যমণ্ডিত চার্চে ক্রিসমাস মিডনাইট মাসে অংশ নিয়ে ক্যারলে এখনও গলা মেলান হাজার হাজার মানুষ।
বাঙালির বড়দিন মানেই শীত-শীত আমেজে সপরিবার ময়দান কিংবা চিড়িয়াখানা। আর কেক না খেলে বড়দিনের ষোলোকলা পূর্ণ হয় না। দুর্গাপুজোয় ঠাকুর দেখার মতোই পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের আলোকসজ্জা দেখতে যাওয়া তো আছেই। বড়দিনের সাবেকি আমেজটা আজও রয়ে গেছে শহরের অ্যাংলো-পাড়া বো ব্যারাকে।
সে কালে বড়দিনের ভোজ ছিল অন্য রকম। রাধাপ্রসাদ গুপ্তর একটি লেখা থেকে জানা যায়, “খ্রিস্টমাস ডিনার বা সারা বছরের সবচেয়ে বড় ভোজের একটা বিশেষ চরিত্র ছিল। কলকাতাতেও এই ভোজে খাবারের মধ্যে একটা প্রধান জিনিস ছিল ‘বোর্স হেড’ বা শুয়োরের মাথা যা রোজমেরি, বে-লিফ (তেজপাতা), আপেল আর অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সাজিয়েগুজিয়ে পরিবেশন করা হত।… অপরিহার্য টার্কি ছাড়া ডাক রোস্ট, যত রাজ্যের জিনিস দিয়ে তৈরি বিরাট খ্রিসমাস পাই, প্লাম পুডিং, ট্যাঞ্জারিন লেবু, খেজুর, বাদাম, কিসমিস, চকোলেট ইত্যাদি।”
পুরনো কলকাতার বড়দিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভোজ হত বড়লাটের প্রাসাদে।
কলকাতার পাশাপাশি সুবে বাংলার বহু জায়গার রাজকর্মচারী ও সেনা কর্তারা এতে নিমন্ত্রিত থাকতেন। ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস তাঁর সাদাসিধে জীবনযাত্রার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন, কিন্তু ক্রিসমাস উপলক্ষে তিনিও মুক্তহস্তে ডিনার পার্টি আয়োজন করতেন। ‘ভদ্রলোকরা রেড ওয়াইন পান করে গড়াগড়ি যেতেন’ এমন বর্ণনা পাওয়া গেছে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লিড কিউরেটর মিস মার্গারেট ম্যাকেপিস-এর রিপোর্টে। রিপোর্টে আরও ‘ক্রিসমাস গালা পার্টি’-র উল্লেখ আছে, তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল ১৯৩৮ সালে বাংলার গভর্নর লর্ড ব্রেবোর্ন আয়োজিত ক্রিসমাস ‘বল’ পার্টির এলাহি ব্যবস্থা। রাজা-মহারাজা ও ১৪০ জন মান্যগণ্য অতিথির নামে কার্ড পাঠানো হয়েছিল, রাতভর চলেছিল খানা-পিনা এবং খরচ হয়েছিল তখনকার দিনে ৫,২৯৬ টাকা!
সে যুগে আর একটা জিনিস দেখা যেত বড়দিনে। ইংরেজরা তাকে বলত ‘ডলি’। সম্ভবত ডালি শব্দ থেকে আগত ‘ডলি’ মূলত বড়দিনের উপহার বা ভেট। ফ্যানি পার্কস-এর লেখায় এর উল্লেখ মেলে। সাহেববাড়ির বেয়ারা, খানসামা ও অন্য কাজের লোকেরা বড়দিনে তাঁদের ইংরেজ মনিবদের ‘ডলি’ বা ভেট পাঠাতেন। তাতে থাকত ফলমূল, কেক থেকে শুরু করে মাছ-মাংস ইত্যাদি। এ ছাড়াও, বড়দিনে ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য দেখাতে ‘ডলি’ পাঠাতেন ইংরেজদের সঙ্গে কাজের সূত্রে যুক্ত কেরানি, বেনিয়া, মুৎসুদ্দি ও দালালরা। কবি ঈশ্বর গুপ্তর লেখা ‘বড়দিন’ কবিতায় পাই এই ‘ডলি’ প্রসঙ্গ— ‘খ্রীষ্টের জনম দিন, বড়দিন নাম/ বহুসুখে পরিপূর্ণ, কলিকাতা ধাম/ কেরানী দেওয়ান আদি বড় বড় মেট/ সাহেবের ঘরে ঘরে পাঠাতেছে ভেট/ ভেটকী কমলা আদি, মিছরি বাদাম/ ভালো দেখে কিনে লয়, দিয়ে ভাল দাম।’
শোনা যায়, চতুর্থ শতাব্দীতে এশিয়া মাইনরের মায়েরাতে (এখন তুর্কিস্তান) সেন্ট নিকোলাস নামে এক জন দয়ালু ব্যক্তি ছিলেন। অগাধ সম্পত্তির মালিক এই নিকোলাস লোকের দুঃখকষ্টের কথা জানতে পারলে গোপনে সাহায্য করতেন। এক বার তিনি শুনলেন, এক গরিব লোকের তিন মেয়ে, কিন্তু তার মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পয়সা নেই। নিকোলাস লুকিয়ে বাড়ির চিমনির কাছে পৌঁছে চিমনির মধ্যে দিয়ে সোনাদানা ফেলে দিলেন। লোকটি চিমনিতে তার মোজা শুকোতে দিয়েছিল। সকালে উঠে দেখে সোনাদানায় ভর্তি তার মোজা! এমন পর পর তিন বার হওয়ায় তার সন্দেহ হয়। সে চিমনির পাশে লুকিয়ে থেকে নিকোলাসকে ধরে ফেলে। কিন্তু সহৃদয় নিকোলাস তার এই পরোপকারের কথা জানাজানি করতে চাননি। তবুও এক কান দু’কান করে লোকে জেনেই গেল, আর তার পর থেকে কেউ গোপনে উপহার পেলেই লোকে মনে করে, নিকোলাস দিয়েছে। এই সেন্ট নিকোলাসের গল্পই বণিকদের মাধ্যমে পৃথিবীর নানা জায়গায় পাড়ি দিয়ে সান্টা ক্লজ় হয়েছে সম্ভবত।
শীতের পাতা ঝরার দিনে রোমে চিরহরিৎ বৃক্ষের ডাল দিয়ে ঘর সাজানোর প্রথা ছিল। কেউ কেউ একে পৌত্তলিকদের বৃক্ষপূজার রূপান্তর বলেও মনে করেন। আইভি লতার পানপাতার মতো হৃদয় আকৃতির পাতা ও লাল বেরি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। ওই সবুজ পাতা জিশুর পুনরুত্থানের প্রতীক আর বেরিগুলো ক্রুশবিদ্ধ জিশুর রক্তবিন্দুর প্রতীক।
বড়দিনের আর একটি অপরিহার্য অঙ্গ ক্রিসমাস ক্যারল। আসলে ক্যারল বলে পরিচিত গানগুলি ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকসঙ্গীত। পরবর্তী কালে গির্জায় ক্যারল গাওয়ার সূচনা হয়। প্রাচীনতম ক্রিসমাস ক্যারল রচিত হয়েছিল রোমে, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে। ত্রয়োদশ শতকে ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইটালিতে আঞ্চলিক ভাষায় জনপ্রিয় ক্রিসমাস সঙ্গীতের প্রথা গড়ে ওঠে।
ব্রাহ্মধর্মে উপনিষদীয় অদ্বৈতবাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল খ্রিস্টধর্মের একেশ্বরবাদ। ব্রহ্মসঙ্গীত এবং অন্যান্য উপাসনা পদ্ধতিতেও খ্রিস্টপ্রভাব দেখা যায়। কবিগুরুর কাছে জিশু ছিলেন ‘মানবপুত্র’, ‘কল্যাণের দূত’। একটি প্রবন্ধে কবি বলেছেন, ‘‘আজ পরিতাপ করার দিন, আনন্দ করবার নয়।… বড়োদিন নিজেকে পরীক্ষা করবার দিন, নিজেকে নম্র করবার দিন।’’ খ্রিস্টান ধর্মযাজক অধ্যাপক ফাদার ডি পেনেরান্ডার প্রভাব কবির জীবনে প্রতিফলিত হয়েছিল। পরবর্তী কালে তিনি জিশুর জন্মোৎসব পালনকে শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের অঙ্গীভূত করেন। তিন দিনের আনন্দময় পৌষ-উৎসবের সমাপ্তি-দিবস খ্রিস্ট-উৎসব। এই উপাসনায় মহামানব জিশুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকলে সমবেত হন। মোমের আলোয় মুখরিত হয়ে ওঠে ‘ক্রিসমাস ক্যারল’, গাওয়া হয় কবির লেখা ‘একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে, রাজার দোহাই দিয়ে’, উচ্চারিত হয় উপনিষদের মন্ত্র, কবির লেখা এবং বাইবেলের অংশবিশেষ থেকে পাঠ করা হয়।
১৮৭৩ সালের শেষ ভাগে শম্ভুচরণ মল্লিক শ্রীরামকৃষ্ণকে বাইবেল পাঠ করে শোনালে তাঁর খ্রিস্টমতে সাধনা করে সত্য উপলব্ধির ইচ্ছে হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, এই সময় তাঁর চিত্ত খ্রিস্টভাবে পূর্ণ হয়েছিল এবং তিনি কালীঘরে যাওয়া বন্ধ করেছিলেন। এক দিন মেরিমাতার কোলে জিশু খ্রিস্টের চিত্রে তিনি জীবন্ত জিশুর দিব্যদর্শন লাভ করেছিলেন। তাঁর ঘরে হিন্দু দেবদেবীদের সঙ্গে জলমগ্ন পিটারকে ত্রাণরত জিশুর একটি ছবি ছিল, সেটিতে তিনি প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় ধূপারতি করতেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের মহাসমাধির পরে তাঁর অন্তরঙ্গ তরুণ শিষ্যদের একটি দল হুগলির আঁটপুরে বাবুরাম মহারাজের (স্বামী প্রেমানন্দ) পৈতৃক বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এক দিন সন্ধ্যার পর নরেন্দ্রনাথ (স্বামী বিবেকানন্দ) আবেগভরে জিশুর পবিত্র চরিত্রের আলোচনা আরম্ভ করেন, তাঁর ত্যাগ, বৈরাগ্য ও ক্ষমার আদর্শ, পরহিতায় তাঁর প্রাণ উৎসর্গ ও মৃত্যুর পরে তাঁর অন্তরঙ্গ দ্বাদশ শিষ্যের কথা বলতে বলতে সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত করেন। ওই দিন ধুনি জ্বেলে তাঁরা ধুনির পবিত্র অগ্নির সামনে সেই দ্বাদশ শিষ্যের মতো সংসার ত্যাগ করে পরের হিতে জীবন উৎসর্গের শপথ গ্রহণ করেন। পরে সকলেরই খেয়াল হয়, দিনটি ছিল বড়দিনের প্রাক্সন্ধ্যা। সেই অর্থে ২৪ ডিসেম্বর রাতে আঁটপুরে ভাবী রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের বীজ উপ্ত হয়েছিল। তাই রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ পরম্পরায় খ্রিস্ট জন্মোৎসব পালনের এক বিশেষ তাৎপর্য আছে।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কেন্দ্রগুলিতে জিশুর জন্মোৎসব পালিত হয়। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যারতির পর শুরু হয় জিশুর আরাধনা। শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দিরে জিশু ও মেরিমাতার ছবি মোমবাতি, ফুল দিয়ে সাজানো হয়। দেওয়া হয় কেক, লজেন্স, ফল, পেস্ট্রি ও মিষ্টি। ক্যারলের মাধ্যমে পুজোর সূচনা হয়। ২৫ ডিসেম্বর ইংরেজি ও বাংলায় বাইবেল ও জিশুর জন্মকাহিনি পাঠ করা হয়। উপস্থিত থাকেন বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীরা ও ভক্তগণ।
স্বামীজি আমেরিকায় এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, জিশু এবং কৃষ্ণের জীবনের অনেক সাদৃশ্য। নিউ টেস্টামেন্ট এবং গীতার উপদেশগুলিতেও অনেক মিল— ‘যখনই ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের প্রাদুর্ভাব হয়, তখনই আমি অবতীর্ণ হই’, …যখনই দেখিবে কোন মহাত্মা মানবজাতির উদ্ধারের জন্য সচেষ্ট, জানিবে আমার আবির্ভাব হইয়াছে এবং তাঁহার পূজা করিবে। … ভগবান্ যদি মানবীয় রূপ পরিগ্রহ করিয়া আমাদের নিকট উপস্থিত হন, কেবল তখনই আমরা তাঁহাকে চিনিতে পারি।
কলকাতার বড়দিন এখন যত না ধর্মীয়, তার চেয়ে অনেক বেশি করে এক অসাম্প্রদায়িক মিলনদিন। চিনা বুড়ো ক্রিসমাস ট্রি বিক্রি করছে মুসলমান ছেলেকে— এমন দৃশ্য কলকাতার পরতে পরতে প্রাণের মতো মিশে আছে। অনুশোচনায় আত্মশুদ্ধি, আত্মসমীক্ষা ও নম্র নিরহঙ্কার— এই সনাতন হিন্দু ভাবধারার সঙ্গে খ্রিস্টীয় জীবনবোধের মিল আছে। যাকে কেন্দ্র করে এই বড়দিন, তিনি মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার ক্রুশ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, বলেছিলেন—“তোমরাই জগতের আলো… তোমার অন্তর্জ্যোতি প্রজ্বলিত কর, যাতে অপরে তোমার সৎ কর্মগুলি দেখতে পায় ও এইভাবে তোমার স্বর্গস্থ পিতাকে গৌরবান্বিত কর।” (ম্যাথিউ ৫, ১৪-১৬)। উৎসবের জোয়ারে ভেসে গিয়ে তাঁর দেখানো রাস্তা যেন আমরা ভুলে না যাই।