দেশের সময়: হলুদ ভালোবাসার রং ৷ এনার্জি, উজ্জ্বলতার রংও হলুদ ৷ ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গেও মিশে আছে হলুদ ৷ আমাদের যে কোনও শুভ কাজ সম্পন্ন হয় না হলুদ ছাড়া ৷ আর তাই শিল্পের ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলতে হলুদ রংকেই বেছে নিয়েছেন চঞ্চল বাংগা ৷ তাঁর ছবির ক্যানভাস জুড়ে হলুদের সমাহার৷ সুদূর ইজরায়েলে হলুদেই বসন্ত আসে ভারতীয় এই যুবকের শিল্পে ৷ প্রেমের জোয়ারে ভাসে কল্পনা ৷ ঝরা পাতা মনে করিয়ে দেয়, বসন্ত এসে গেছে ৷
গত কুড়ি বছর ধরে ইজরায়েলে কাজ করছেন চঞ্চল ৷ ছবি আঁকার পাশাপাশি তিনি ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পের বহুমাত্রিক রূপ ৷ কখনও তা প্রকাশ পায় ভিডিও আর্টের মাধ্যমে কখনও বা ইনস্টলেশন কিংবা পারফর্মিং আর্টের হাত ধরে ৷ জেরুসালেম, তেল আবিব হয়ে এখন ঠিকানা জাফো ৷ সেখানেই ষ্টুডিও খুলেছেন ৷ নিয়মিত প্রদর্শনী হয়৷ তবে দীর্ঘ বছর ইজরায়েলে থাকলে কী হবে, ভোলেননি দেশের প্রতি টান ৷ আর তাই ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির অনবদ্য মিশেলে চঞ্চলের শিল্প ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে ৷ ইট উইথ নামে একটি ইভেন্টেরও আয়োজন করেন চঞ্চল ও তাঁর স্ত্রী সিগাল মানোর ৷ বিষয়টি ঠিক যেন আমাদের এখানকার জলসাঘর ৷ ওয়েসাইটের মাধ্যমে গেস্টরা এই ইভেন্টের জন্য বুকিং করেন ৷ নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা আসেন ৷ অতিথিদের জন্য নিজে হাতে খাবার বানান চঞ্চল ৷ অবশ্যই তা সব ভারতীয় খাবার ৷ খাওয়া দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা চঞ্চলের শিল্প সৃষ্টি দেখেন, তা নিয়ে আলোচনা হয় ৷ দেখুন ভিডিও
বাপ ঠাকুরদার আদিবাড়ি বাংলাদেশে ৷ পরে নদিয়ার শান্তিপুরে উঠে এসেছিলেন ৷ মায়ের বাড়ি ছিল রানাঘাটে৷ বাবা জামশেদপুর টাটাতে চাকরি করতেন ৷চঞ্চলের জন্মও জামশেদপুরে ৷ সেখানেই কেটেছে স্কুল ও কলেজ জীবন ৷ প্রথমে বিকম নিয়ে পড়াশোনা করেন ৷ কিন্তু তাঁর মন পড়েছিল ছবির ক্যানভাসে ৷ তাই জামশেদপুর ছেড়ে চলে যান বরোদাতে ৷ সেখানে চিত্রকলা নিয়ে ভর্তি হন বরোদা এমএস ইউনিভার্সিটিতে ৷ এখান পোস্ট গ্রাজুয়েট করেন প্রিন্ট মেকিংয়ে ৷ এরপরই ডানা মেলে তাঁর স্বপ্নের উড়ান ৷
কেমন ছিল বরোদা থেকে জেরুসালেম যাত্রাটা ৷ উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় ভাস্কর্য শিল্পী সৌমেন করের থ্রি এস স্টুডিওতে শো করতে এসে চঞ্চল বললেন, এ যেন মেঘ না চাইতেই জল ৷ তখন ফি বছর গোটা পৃথিবী থেকে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে যেত ইজরায়েল৷ তাঁরা কয়েকমাস সেদেশে থেকে, ঘুরে দেখে আবার নিজের দেশে ফিরে আসবে ৷ বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ ৷ এতে কিছু টাকা স্কলারশিপও দেওয়া হত ৷ তারই অংশ হিসেবে নয় মাসের জন্য ইজরায়েলে যাওয়ার সুযোগ মেলে চঞ্চলের ৷ আগে থেকে ইন্টারনেটে সেখানকার শিল্পী, গ্যালারি, স্টুডিওর ঠিকানা জেনে রেখেছিলেন৷ ইজরায়েলে পৌঁছে যোগাযোগ করেন তাঁদের সঙ্গে৷ নিজের শিল্প কর্ম দেখান। ভালোবাসা জোটে ৷
২০০০ সালে ইজরায়েলে পা রেখেই পরের বছর স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করে একক চিত্র প্রদর্শনী ৷এই প্রদর্শনীর খরচ বহন করে ইজরায়েলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস৷ তারপর ভর্তি হওয়া বেসেলেল ডিজাইন অব ফাইন আর্টসে ৷ শিল্পের অনেক অজানা দিক খুলে যায় ৷ এই সময়েই দেখা হয় সিগালের সঙ্গে ৷ প্রথম দেখাতেই মন দেওয়া নেওয়া৷ তারপর বিয়ে ৷ স্ত্রীও একজন শিল্পী ৷ তিনিও ভারতে সাত বছর কাজ করে গিয়েছেন৷ তাঁর ভাবনাতেও ফিরে ফিরে আসে ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ৷