দেশের সময় ,বনগাঁ: CBI at Bongaon: শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতারির সময় ইডির হামলা, এবার তদন্তে নামল সিবিআই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রেশন দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য ওরফে ডাকু-র বনগাঁর শিমুল তলার বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করল সিবিআই ।
রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় ধৃত বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতে গিয়েছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার বিকেলে সন্দেশখালিতেও গিয়েছিল সিবিআইয়ের একটি দল। তারা শাহজাহান শেখের বাড়ির সামনে যায় এবং এলাকা পরিদর্শন করে। সন্ধ্যায় বনগাঁয় দেখা গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আর একটি দলকে।
বনগাঁয় যে জায়গায় ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল সেখানে গেল সিবিআইয়ের টিম। এলাকায় কোথায় কোথায় সিসিটিভি আছে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়। বনগাঁ থানার পুলিশের সঙ্গে গোটা এলাকা ঘুরে দেখে সিবিআইয়ের টিম। বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে তল্লাশিতে এসে এই বনগাঁতেই আক্রমণের মুখে পড়েছিল ইডি। সেই ঘটনার তদন্তভার নেওয়ার পর এবার সেখানেই গেল সিবিআই। এদিন সন্ধ্যাতেই এলাকায় টহল দিতে দেখা গেল সিআরপিএফ জওয়ানদের। সঙ্গে দেখা গেল লোকাল থানার পুলিশকে।
বনগাঁ থানার পক্ষ থেকে যে পুলিশ কর্তা এসেছিলেন তিনি সিবিাআই আধিকারিদের শঙ্কর আঢ্যর বাড়ি কোথায় তাও ঘুরিয়ে দেখান। পাশাপাশি ঠিক কোন জায়গায় কীভাবে ঘটনাটা ঘটেছিল সবটা খুলে বলেন। সোজা কথায় এদিনই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে নেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
গত ৫ জানুয়ারি গভীর রাতে শঙ্করকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, বনগাঁর এই এলাকাতেও দেখা গিয়েছিল ‘সন্দেশখালি মডেল’।
বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিল ইডি। সন্দেশখালিতে যে ভাবে ইডিকে বাধা দেওয়া হয়েছিল, সে ভাবেই বনগাঁতেও ইডির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে সেখানে কোনও ইডি আধিকারিক মার খাননি।
বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে রেশন মামলার সূত্রে দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সে দিন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শঙ্করকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। শঙ্করের বাড়ির সামনে সে সময়ে এলাকার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। ইডির গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। এমনকি, রাতে ইডির গাড়ির উপরে থান ইটও পড়ে। তদন্তকারীদের বাধা দেওয়ার এই প্রক্রিয়ায় বনগাঁতেও সন্দেশখালির ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন অনেকে।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সন্দেশখালির ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। শাহজাহান এখন তাদের হেফাজতে রয়েছে। তাঁর বাড়ির সামনে বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। বাড়ির চারপাশে তাঁরা ঘোরেন এবং বেশ কিছু ছবি তোলেন। পরে সন্দেশখালির শাহজাহান মার্কেটেও যায় সিবিআই।
ইডির উপর হামলার তদন্তের সূত্রেই বনগাঁয় সিবিআই গিয়েছে বলে খবর। সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। শঙ্করের বাড়ির ভিতরে যাননি তাঁরা। বাড়ির সামনে যেখানে ইডিকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই এলাকায় যান তদন্তকারীরা। ছবি তুলে, তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়।
সন্দেশখালির এবং বনগাঁয় ইডি অফিসারদের উপর হামলার ঘটনায় ন্যাজাট থানায় দুটি এফআইআর দায়ের হয়েছিল। এ ছাড়া বনগাঁ থানায় আরও একটি এফআইআর দায়ের হয়। ওই তিন মামলার তদন্তভারই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
তৃতীয় এফআইআর ছিল বনগাঁ থানার। বনগাঁয় শঙ্করের বাড়ির সামনে বাধা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এফআইআর করা হয়েছিল। সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতেই বৃহস্পতিবার বনগাঁয় গিয়েছে সিবিআইয়ের দল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ,ইতিমধ্যেই শঙ্কর আঢ্যের গ্রেফতারির দু’মাসের মাথায় রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় আদালতে দ্বিতীয় চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। ৮৩ পাতার এই চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে রয়েছে’ ডাকু’ শঙ্করের কথা।
গত মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় প্রথম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানা গেছে ইডি সূত্রে ।
ইডি সূত্রে খবর, এই চার্জশিটে নাম রয়েছে রেশন ‘দুর্নীতি’তে ধৃত বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের (ডাকু) নাম। সেই সঙ্গে উল্লেখ রয়েছে তাঁর কোম্পানির কথা। রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী এই মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বা বালুর সঙ্গে শঙ্করের ‘ব্যবসায়িক’ সম্পর্কের প্রসঙ্গও।
ইডি দাবি করেছে, বালুর বিপুল পরিমাণ টাকা, বিদেশি মুদ্রাতে রূপান্তরিত করে শঙ্কর ০.৫ শতাংশ করে কমিশন পেয়েছেন। সেই থেকেই কোটি টাকা ‘আয়’ করেছেন তিনি।তাঁর চার কোম্পানির নাম রয়েছে চার্জশিটে। বলা হয়েছে, বালুর টাকা বিদেশি মুদ্রাতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করেছেন শঙ্কর। তার বিনিময়ে কমিশনও পেয়েছেন।
ইডির দাবি, ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে হাওয়ালার মাধ্যমে ৭৫০ কোটি টাকা এ ভাবেই বিদেশে পাচার হয়েছে। তারই ০.৫ শতাংশ শঙ্কর পেয়েছিলেন বলেও চার্জশিটে দাবি করে ইডি।
গত বছর ১২ ডিসেম্বর রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বালু এবং ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল ইডি। সেই চার্জশিটে ইডির তরফে দাবি করা হয়েছিল, ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তবে তদন্তে সেই টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে দাবি করা হয়েছিল। ইডি আদালতে জানিয়েছিল, রেশনের চালের টাকা নয়ছয় করেছেন বাকিবুর। তা করার জন্য ভুয়ো কৃষকদের নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। বেশ কয়েক জনকে কৃষক হিসাবে দেখিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছেন বাকিবুর। এ বারের চার্জশিটে বালুর সঙ্গে শঙ্করের যোগাযোগ এবং কমিশনের কথা দাবি করল ইডি।
উল্লেখ্য গত ৫ জানুয়ারি শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। রেশন দুর্নীতি মামলায় বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে জেরা করে অসঙ্গতি মেলায় সে দিন রাতেই তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তারা দাবি করেছিল, বালুর সঙ্গে শঙ্করের যোগাযোগ ছিল। এমনকি, হাসপাতালে থাকাকালীন মেয়েকে লেখা বালুর চিঠিতে শঙ্করের কথা উল্লেখ ছিল বলে দাবি করেছিল ইডি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত বছর ১২ ডিসেম্বর রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বালু এবং ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল ইডি। সেই চার্জশিটে ইডির তরফে দাবি করা হয়েছিল, ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তবে তদন্তে সেই টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে দাবি করা হয়েছিল।
ইডি আদালতে জানিয়েছিল, রেশনের চালের টাকা নয়ছয় করেছেন বাকিবুর। তা করার জন্য ভুয়ো কৃষকদের নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। বেশ কয়েক জনকে কৃষক হিসাবে দেখিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছেন বাকিবুর। এ দিনের চার্জশিটে বালুর সঙ্গে শঙ্করের যোগাযোগ এবং কমিশনের কথা দাবি করে ইডি।