শনিবার থেকে ঠাকুরনগরে শুরু হল মতুয়া ধর্ম মহামেলা। প্রথমদিনেই “কামনা সাগরে” পুণ্যস্নান সারলেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস এবং বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর।
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি – মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে পুণ্যার্থীদের সঙ্গে একযোগে কামনা সাগরে ডুব দিয়ে উঠেই সিএএ নিয়ে বিজেপি ‘বিশ্বাসঘাকতা’ করছে বলে দাবি করলেন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস।
শুরু হয়েছে বারুণী মেলা । ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির কামনা পুকুরে স্নানের জন্য হাজির হয়েছেন হাজার হাজার ভক্ত। সেই অনুষ্ঠানে এদিন যোগ দিয়েছিলেন বনগাঁর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। সেখানেই তিনি বলেন, ‘আমাদের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষভাবে বলেছেন যে, তিনি পশ্চিমবঙ্গে সিএএ আইন প্রণয়ন করতে দেবেন না। কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পেও যেতে হবে না। মতুয়ারা বুঝতে পেরেছে যে বিজেপি তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, আগামী লোকসভা নির্বাচনে মতুয়ারা তাঁদের উত্তর দেবেন। তাঁর কথায়, ‘মতুয়ারা অবশ্যই আমাকে ভোট দেবেন এবং সংসদে পাঠাবেন।’ সিএএ নিয়ে মতুয়াদের মোহভঙ্গের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিশ্বজিৎ দাস জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
অন্যদিকে, আজকের দিনে ‘আমি কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করবো না’ বলে জানান বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরে স্নান করতে হাজির ছিলেন তিনিও। বারুণী মেলাকে ঘিরে লক্ষাধিক মানুষ এই পুকুরে স্নান করলেও, কামনা সাগরের জলে আছে বিশেষ মাহাত্ম্য এমনটাই দাবি মতুয়া ভক্তদের।
প্রসঙ্গত ,বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস শনিবার ঠাকুরনগরের বাংলার অধিকার যাত্রার সময় ঠাকুরবাড়ির শ্রীধামে ইচ্ছে পুকুরের বিশুদ্ধ জলে পবিত্র ডুব দিয়েছিলেন। শত শত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকও উৎসাহের সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এদিনের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষজনের সঙ্গেও কথাবার্তা বলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী।
এরপরে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস রাজ্যসভার সাংসদ ঠাকুরবাড়ির গৃহবধূ মমতা বালা ঠাকুরের সঙ্গে মতুয়াদের একটি ধর্মীয় সভায় যোগ দেন। যেখানে তাঁকে ঢোল বাজাতে দেখা যায় এবং মমতা বালা ঠাকুর সহ অন্যরা গানের সুর ধরেন। বিপুল সংখ্যক ভক্তদের মধ্যে প্রসাদও বিতরণ করা হয়। এমন একটি দুর্দান্ত অনুষ্ঠানের পরে দলের কর্মী এবং মতুয়ারা উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
প্রতিবছরই নির্দিষ্ট সময় মেনে এই পুকুরে পুন্যস্নানে করতে মতুয়া ভক্তদের ঢল নামতে দেখা যায়। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ি এলাকা পাশস্থ্য হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে দলবদ্ধ হয়ে মতুয়ারা ডঙ্কা, কাশি, নিশান নিয়ে প্রদক্ষিন করে ডুব দেন কামনা সাগরের জলে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু হওয়ার পর কোন দিকে যাবে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের জনসমর্থন? কাঁটাছেড়া করছে তৃণমূল – বিজেপি যুযুধান দুই শিবির। তবে, এটি আদতে এনআরসির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, এই আইন
আগামী কয়েকদিনে কেন্দ্রের এবং রাজ্যের নেতারা এই মেলায় উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে মন্দির সূত্রে।
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে মেলার প্রথম প্রহরেই ১১ লক্ষ ভক্তের সমাগম। বেলায় দূরদূরান্ত থেকে আরও ভক্তেরা পৌঁছবেন ঠাকুরবাড়িতে। ঠাকুরনগর স্টেশন থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রেকর্ড ভাঙা ভিড়ে, ভক্তদের মিছিলে অবরুদ্ধ রাস্তাঘাট। আজ পুণ্যতিথিতে ঠাকুরনগরের কামনাসাগরে পুণ্যস্নান সারছেন ভক্তরা। কয়েকশো ভক্ত দণ্ডি কেটে পৌঁছন ঠাকুরবাড়িতে। ডঙ্কা, করতাল, কাসরের ধ্বনিতে গমগম করছে গোটা ঠাকুরনগর। এই মেলা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রচন্ড ভিড়ের মাঝে বাংলাদেশ থেকে আসা এক ভক্ত মৃদুলা বিশ্বাস বললেন, “গত ১৫ বছর ধরে ঠাকুরনগরের মেলায় আসি। মেলার জন্য আমাদের ছোট সংগঠনের প্রস্তুতি চলে কয়েক মাস ধরে। এত ভিড়েও আমাদের দম ফুরায় না। ডঙ্কার আওয়াজে আরও যেন উজ্জীবিত হই।” অন্যদিকে আন্দামানের বাসিন্দা কৃষ্ণ গোপাল সরকার কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ঠাকুরবাড়ির এই উৎসব ঘিরে আমরা বরাবরই আবেগপ্রবণ। পুণ্যস্নান না সারা পর্যন্ত উত্তেজনায় ঘুম আসে না। সারারাত জায়গায় জায়গায় কীর্তন হয়। ভোররাতে উঠেই কামনাসাগরের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি সকলে।”
ভোরবেলায় নিজের বাড়িতে ভক্তদের ভিড়ের মধ্যে বসেছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। সারারাত জেগে। তবুও ক্লান্ত নন। মমতাবালা বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে সরকারি ছুটির ঘোষণা করেছেন। সেই কারণে গত কয়েক বছর ধরে প্রথমদিনে ব্যাপক ভিড় হয়। পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসন সহযোগিতা করে। ঠাকুরনগর স্টেশন থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত অসংখ্য জলসত্র হয়েছে। এবছর আমরা প্রসাদের ব্যবস্থাও করেছি। কোনও ভক্ত যাতে অভুক্ত না থাকেন, তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।”
অনেকেরই ধারণা, আগামিকালও ১০ লক্ষের বেশি ভক্তের সমাগম হতে পারে। শুধুমাত্র মমতাবালা, শান্তনু ঠাকুরের বাড়ির উঠোনেই নয়, হাজার হাজার মানুষ ঠাকুরবাড়ির আশেপাশের বাড়িগুলোতেও ঠাঁই নিয়েছেন। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিভাজন থাকলেও, বরাবরের মতো এই মহামেলা বাস্তবেই মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।