By- election 2024 চারে চার,তৃণমূলের উইকএন্ড গিফ্ট! উপ নির্বাচনে সবুজ ঝড়,মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি

0
57

দেশের সময়: তৃণমূলের উইকএন্ড গিফ্ট। চারে চার। লোকসভার পর এবার রাজ্যের চার কেন্দ্রে বিধানসভা উপ নির্বাচনেও সবুজ ঝড়। বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ, রায়গঞ্জ এবং মানিকতলা সবক’টিতেই বিপুল ব্যবধানে জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। লোকসভার মতো বিধানসভা উপ নির্বাচনেও কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল বামেরা। দাঁত ফোটাতে পারেনি কংগ্রেসও। রায়গঞ্জে প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির আবেগকে সামনে রেখে ভোটে প্রচার চালিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু সেখানেও ব্যাকফুটে হাত শিবির।

সবচেয়ে বড় কথা, রানাঘাট দক্ষিণ ও বাগদায় মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের উপর ভর করেই একসময় বিজেপি জয়ের মুখ দেখেছিল। কিন্তু উপ নির্বাচনের ফলে স্পষ্ট, গেরুয়া শিবিরের পাশ থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছেন মতুয়ারা। বাগদায় বিজেপির শোচনীয় হার নিয়ে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্ব। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর রাজনীতিতে নবাগতা। প্রথমবার ভোটে প্রার্থী হয়েই যেভাবে তিনি বাগদার মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনে সহজে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য, বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। একসময় এই কেন্দ্রটি তৃণমূলের দখলে ছিল। কিন্তু তারপর হাতছাড়া হয়ে যায়। ১৩ বছর পর ফের জোড়াফুল ফুটল বাগদায়।

অন্যদিকে, মানিকতলায় জয় নিয়ে প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। সাধন পাণ্ডের গড়ে দাপিয়ে ভোট করান তাঁর স্ত্রী, জোড়াফুলের প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডে। পাশে ছিলেন সাধনবাবুর মেয়ে শ্রেয়া পাণ্ডে। এই কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে তৃণমূল। মানিকতলা থেকে জিতে দশমবার বিধানসভায় যাচ্ছেন পাণ্ডে পরিবারের সদস্য। ন’বার জিতেছিলেন সাধন পাণ্ডে। তাঁর মৃত্যুতে খালি হয়ে যায় আসনটি। উপ নির্বাচনে সাধনবাবুর স্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজের বান্ধবী সুপ্তি পাণ্ডেকে প্রার্থী করে দল। ভোটে প্রার্থী হয়েই লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েন সুপ্তিদেবী। এদিন মায়ের জয়ী হওয়ার আনন্দে মেয়ে শ্রেয়া বলেন, ‘মানিকতলায় সবুজ আবিরের ঝড় বইছে। সেই আবিরের প্রতিটি কণায় মিশে রয়েছেন আমার বাবা। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের কর্মীরা আমার বাবার হাতে গড়া। তাঁরা যেভাবে ভোটে পরিশ্রম করেছেন, কুর্নিশ জানাতেই হয়। এই জয় মা-মাটি-মানুষের জয়।’ 

অন্যদিকে, ভোটের ফল ঘোষণার আগেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থাৎ মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডে। বলেন, ‘ভদ্রলোক প্রতিবার ভোটে দাঁড়ান আর হেরে যান। মন থেকে বলছি, এটা সত্যিই খারাপ লাগে।’ তিনি যখন একথা বলছেন, পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছেন তৃণমূল কর্মীরা। মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে অবশ্য বলেছেন, মানিকতলায় কোনও ভোট হয়নি। দেদার ছাপ্পা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। অস্ত্র দেখিয়ে ভোট লুট করা হয়েছে।

রায়গঞ্জে তৃণমূলের জয়ও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কিছুদিন আগেই লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। লোকসভায় রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। হেরে গিয়েছেন। জিতেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ বিধানসভায় প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েন কৃষ্ণ। কিন্তু এত ভোটে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিধানসভা উপ নির্বাচনে ৪৯ হাজার ৫৩৬ ভোটে জয় হাসিল করে নিয়েছেন কৃষ্ণ কল্যাণী। পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী মানস ঘোষ। ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন কংগ্রেস-সিপিএম জোটের প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত। জেতার পর কৃষ্ণ কল্যাণী বলেন, সাধারণ মানুষ উন্নয়নের নিরিখে ভোট দিয়েছেন। আমি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রসঙ্গত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কার্তিক পালের কাছে হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। এর পর রায়গঞ্জ বিধানসভা উপ নির্বাচনে তাঁকেই ফের প্রার্থী করে তৃণমূল। ২০২১ সালে কৃষ্ণ কল্যাণী রায়গঞ্জ বিধানসভা থেকে প্রায় ২১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি প্রার্থী ছিলেন বিজেপির। পরে দল বদল করে যোগ দেন তৃণমূলে।  

বাগদাতেও ছবিটা প্রায় একইরকম। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাগদা বিধানসভায় প্রায় ২০ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। সেখানে দাঁড়িয়ে বিধানসভা উপ নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাগদায় তৃণমূল জয়ের মুখ দেখেনি। ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে জয়ী হন কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের প্রার্থী দুলাল বর। এরপর ২০২১ সালে বাগদা থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন বিশ্বজিৎ দাস। পরে তিনি বিজেপি ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূলে। এবার লোকসভায় জোড়াফুলের প্রার্থী ছিলেন বিশ্বজিৎ। ফলে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। ফলে আসনটি খালি হয়ে যাওয়ায় উপ নির্বাচন হল। রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণের মতো বাগদাতেও লোকসভায় দলের পরাজিত প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসকেই প্রার্থী করতে চেয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু বিশ্বজিৎ প্রার্থী হতে চাননি। ফলে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয় নতুন প্রজন্মের মুখ মধুপর্ণা ঠাকুরকে। তাঁর উপরেই ভরসা রাখলেন বাগদার মানুষ। এদিন হারের পর বাগদার বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাস বলেন, যদি সুস্থভাবে ভোট হত, তাহলে আমরাই জিততাম। দেদার ছাপ্পা ভোটের জন্যই জিততে পারলাম না। গণনাকেন্দ্র থেকে বেরনোর পর বিজেপি প্রার্থীকে দেখে জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূল সমর্থকরা। এনিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেয়। এসকর্ট করে গণনাকেন্দ্র থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় বাগদার বিজেপি প্রার্থীকে।

রানাঘাট দক্ষিণে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর লিড ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে যেতেই গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান বিজেপি প্রার্থী মনোজকুমার বিশ্বাস। তাঁকে ঘিরেও জয় বাংলা স্লোগান দেন তৃণমূল সমর্থকরা। অবশেষে পুলিশি পাহারায় গণনাকেন্দ্র থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। 

চলতি বিধানসভায় রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হতে চলেছেন মতুয়া পরিবারের সদস্য তথা তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর। তাঁর বয়স ২৫ বছর। প্রথমবার ময়দানে নেমেই ছক্কা হাঁকালেন তিনি। ১৩ বছর পর বাগদা কেন্দ্রে তাঁর হাত ধরেই কমব্যাক করল  তৃণমূল।

বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হল তৃণমূল। ৩৩ হাজার ৬৬৪ বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর।

তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর পেয়েছেন ১০৭৫৭৭টি ভোট, বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাস পেয়েছেন ৭৪১০৯টি ভোট। ৩৩,৬৬৪ ভোটের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মধুপর্ণা।

সবচেয়ে তাৎপর্যের ২০১১ সালের পর বাগদায় ফের ফুটল ঘাসফুল। উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর পেয়েছেন ১০৭৫৭৭টি ভোট, বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাস পেয়েছেন ৭৪১০৯টি ভোট। ৩৩,৪৬৮ ভোটে জিতেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মধুপর্ণা। মাত্র ২৫ বছরে বিধায়ক হয়ে কামাল করলেন তিনি। 

রানাঘাট দক্ষিণেও জিতেছে তৃণমূল। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা মুকুটমণি অধিকারী প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে জিতে গেছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন মনোজকুমার বিশ্বাস। আবার রায়গঞ্জে তৃণমূলের কৃষ্ণ কল্যাণী  ৫০ হাজার ৭৭ ভোটে জিতেছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন মানসকুমার ঘোষ। প্রসঙ্গত, ২০২৪ লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জে হেরে যান কৃষ্ণ কল্যাণী।তবু তাঁর উপরেই আস্থা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তিনি মান রাখলেন। অবশ্য ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে রায়গঞ্জে জিতেছিলেন কল্যাণী। আর শাসকদল মানিকতলাতেও বিপুল ভোটে জয়ের দিকে এগোচ্ছে। উচ্ছ্বাসে মেতেছেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা। 

জয়ের পর কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, ‘‌মানুষ উন্নয়নকে বেছে নিয়েছেন। কৃতজ্ঞ।’‌ মুকুটমণির কথায়, ‘‌বিজেপি সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। পিছিয়ে পড়া মানুষের কথা ভাবে না। তাই ওদের এই হাল।’‌ মধুপর্ণার কথায়, ‘‌প্রতিটি ঘরে ঘরে গেছি। মানুষ বুঝে গেছে, দিদি সবার পাশে রয়েছে। তিনিই উন্নয়নের কাণ্ডারি।’‌

মানিকতলায় ৬২ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছে তৃণমূল।

মানিকতলায় জয় নিশ্চিত হতেই বিজেপিকে কটাক্ষ করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘কল্যাণ চৌবে যত ভোটে হারবেন, ততগুলি রসগোল্লা ওঁর বাড়িতে পাঠাব। বাম জমানার থেকে ভাল আছেন বাংলার মানুষ। বিজেপির প্রতি তাঁদের আস্থা নেই। ভুলকে ভুল বলে স্বীকার করছে। তাই মানুষের আস্থা রয়েছে।’’

৩৯ হাজার ৪৮ ভোটে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হলেন তৃণমূলের মুকুটমণি অধিকারী।

Previous articleTMC Delivers a Weekend Sweep! Green Surge in By-Election Leaves BJP on the Backfoot Four out of four
Next articleCreating News With A Literary Flair-Desher Samay, A Golden Opportunity for All Students.Join Today!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here