শনিবার সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুরু করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরের ব্যয় বরাদ্দকে কেন্দ্র করে আমজনতা থেকে শুরু করে শিল্প সংস্থার মধ্যে চড়েছে প্রত্যাশার পারদ।
শনিবার বেলা ১১’টায় দেশের ২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। বাজেটে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
নজর মধ্যবিত্তের দিকে, বাজেটের শুরুতেই বললেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা, সংসদে বিরোধীদের তুমুল হট্টগোল
নির্মলা বলেন, ‘‘বাজেটে মধ্যবিত্তদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। কৃষক, নারী, ক্ষুদ্রশিল্পে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ৭০ শতাংশ মহিলা যাতে আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, সে দিকে নজর দেওয়া হবে। আমাদের কাছে আগামী পাঁচ বছর উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।’’ অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ, কৃষি এবং ক্ষুদ্রশিল্প-সহ ছ’টি ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে। রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের কাজ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ভোজ্য তেল এবং ডালজাতীয় শস্যে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করা হবে। বাজেট পেশ করার সময় জানালেন অর্থমন্ত্রী। বিহারে মাখনা বোর্ড তৈরি হবে বলেও নির্মলা জানালেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, ধনধান্য যোজনার আওতায় ১.৭ কোটি কৃষককে সাহায্য করা হবে।
বিহারে তৈরি হবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড টেকনোলজি। পাশাপাশি, সম্প্রসারিত হবে পটনা বিমানবন্দর। পটনা বিমানবন্দরের উন্নতির জন্য বরাদ্দ ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী।
দেশে নতুন ১২০টি বিমানবন্দর তৈরির ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার মধ্যে বিহারে তিনটি নতুন বিমানবন্দর তৈরির ঘোষণা। আগামী ১০ বছরে আঞ্চলিক বিমানবন্দর পেতে ১০০ টিরও বেশি নতুন জায়গা।
বাজেটে ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্প ২০২৮ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা জানালেন, হকারদের জন্য ইউপিআই লিঙ্ক করা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে। শহর পুনর্নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হবে এক লক্ষ কোটি। ছোট মডিউলার নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টারের জন্য বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০৩০ সালের মধ্যে ওই নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টারগুলি তৈরি করা হবে।
কিসান ক্রেডিট কার্ডে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। তিন লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে তা পাঁচ লক্ষ করা হবে। বাজেট পেশের সময় ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
প্রথম উদ্যোগপতি পাঁচ লক্ষ তফশিলি জাতি এবং তফশিলি উপজাতি ভুক্ত মহিলারা দু’কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। বাজেট পেশ করার সময় ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর।
আট কোটি মহিলা, এক কোটি সদ্য মা হওয়া মহিলা এবং ১৮ লক্ষ পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ পুষ্টি প্রকল্পের ঘোষণা করলেন নির্মলা। সরকারি স্কুলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা যুক্ত করা এবং আইআইটির সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কথাও ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর।
মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসন বৃদ্ধি করার ঘোষণা করলেন নির্মলা সীতারামন। আগামী পাঁচ বছরে ৭৫ হাজার আসন বৃদ্ধি করা হবে। আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধি হবে ১০ হাজার আসন।
আইডি কার্ড এবং রেজিস্ট্রেশন চালু করা হবে গিগ ওয়ার্কারদের (ডেলিভারি এজেন্ট) জন্য।
এই বাজেট উৎপাদন বৃদ্ধি, সর্বাত্মক উন্নয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগে জোর দেবে। আমাদের লক্ষ্য হল বিকশিত ভারত।
আগামী পাঁচ বছরে আমাদের সামনে সবকা বিকাশের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
এই বাজেটে দরিদ্র, অন্নদাতা এবং নারী সহ ১০টি ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিকশিত ভারত অর্থাৎ দারিদ্র্যশূন্য ভারত, ১০০ শতাংশ বিদ্যালয় শিক্ষা যা গুণমানে উন্নত হবে।
উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ১০০ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টি যার দ্বারা বেকারি দূরীকরণ হবে। আর্থিক ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ মহিলাদের ব্যবহার।
বিশ্বের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে দেশের কৃষকদের স্বনির্ভরতা দেওয়া।
এবারে বাজেটে ৬টি ক্ষেত্রকে সংস্কারের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল, কর সংস্কার, বিদ্যুৎ, নগরোন্নয়ন, খনি, ব্যাঙ্কিং এবং রেগুলেটরি সংস্কার।
এদিকে, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়া নিয়ে আলোচনার দাবি তুলতে শুরু করে বিরোধীরা। বাজেট ভাষণের শুরু থেকেই বিরোধী দলগুলি সম্মিলিতভাবে এনিয়ে আলোচনার দাবি তোলে। শেষ পর্যন্ত বাজেট প্রস্তাব পাঠ শুরু হলে একযোগে বিরোধী দলগুলি লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যায়।
এই বাজেট এমএসএমই-র জন্য ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে স্টার্টআপের ক্ষেত্রেও অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এমএসএমইকে ৫ কোটি টাকা থেকে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১০ কোটি টাকার প্রস্তাব।
ভালভাবে চলা রফতানিকারী এমএসএমইকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
ভারত মৎস্য উৎপাদনে দ্বিতীয়। তাই সমুদ্র ও নদী ছাড়াও যে কোনও মৎস্য উৎপাদনকারীদের প্রতি সরকার বিশেষ নজর দেবে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে আন্দামান, নিকোবর এবং লাক্ষাদ্বীপের জন্য।
গত ১০ বছরে ২৩টি আইআইটি-তে পড়ুয়া সংখ্যা বেড়েছে ৬৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার। এবার বাজেটে এআই ক্ষেত্রকে শিক্ষাক্ষেত্রে আনার জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব আনা হয়েছে।
১০ হাজার অতিরিক্ত আসন আগামী বছরের জন্য দেশের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে আনা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে যা মোট ৭৫ হাজারের সংখ্যা ছোঁবে বলে জানান সীতারামন।
আগামী সপ্তাহে নয়া আয়কর বিল, ৩৬ জীবনদায়ী ওষুধের উপর শুল্ক প্রত্যাহার
বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে নতুন আয়কর বিল পেশ করা হবে। বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে ১০০ শতাংশ করা হবে বলেও ঘোষণা নির্মলার।
২০২৫ অর্থবর্ষে রাজস্ব ঘাটতি ৪.৮ শতাংশ। জানালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।
ক্যানসার-সহ দুরারোগ্য রোগের জন্য ব্যবহৃত ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে উঠে গেল শুল্ক। বাজেট পেশের সময় ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। পাশাপাশি, লিথিয়াম ব্যাটারিতেও শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা করলেন তিনি।
গত বছর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর সরকার তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর শনিবারই ফের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে কেন্দ্র।
জিএসটি চালু হওয়ার পর কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারের কাছেই বাজেটে জনআকাঙ্খা পুরণের সুযোগ আগের তুলনায় অনেকটা কমে গিয়েছে। জিনিসপত্রের উপর জিএসটির হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষমতা এখন জিএসটি কাউন্সিলের। তারা বছরে একাধিকবার এ নিয়ে পদক্ষেপ করে। পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দামের উপর সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। যে কারণে শনিবার বাজেট পেশের কয়েক ঘণ্টা আগে রান্নার গ্যাসের বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম সামান্য কমিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি।
কিন্তু কেন্দ্রের পূর্ণ এক্তিয়ারে রয়েছে জিএসটির বাইরে যাবতীয় কর। তারমধ্যে অন্যতম হল আয়কর। যা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে ধনপতি, সব পক্ষের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দেশজুড়ে প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে অর্থমন্ত্রী এবার আয়করে এমন কোনও সুবিধা ঘোষণা করবেন যা থেকে মধ্যবিত্তের বিত্তবাসনা পূরণ হয়। কৃষিঋণ সব চাষআবাদে সুবিধা ঘোষণা করে মধ্যবিত্ত কৃষকদেরও খুশি করা হবে বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
বিগত কয়েক বছর যাবত কেন্দ্রের বাজেটে সমাজের মধ্যবিত্ত অংশ নানাভাবে সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে বলে সরকার পক্ষও একান্তে মানছে। গত বছর লোকসভা ভোটে বিজেপির খারাপ ফলের পিছনে সেটা একটা কারণ বলে দলের একাংশ মনে করে। জন্মলগ্ন থেকে বিজেপি মধ্যবিত্তের পার্টি হিসাবে পরিচিত। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবীদের মধ্যে দলের প্রভাব ছিল বেশি।
তাতে অনেকটাই ফাটল ধরেছে বলে দলের নেতারা একান্তে মানছেন। তার উপর রাহুল গান্ধী লাগাতার প্রচার করে চলেছেন, মোদী সরকার আদানি-আম্বানিদের স্বার্থে কাজ করছে। শুক্রবার তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগাম সমালোচনা করে বলেছেন, কেন্দ্র বাজেট তৈরি করে বড়লোকদের জন্য।
বিরোধীদের সমালোচনা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে অর্থমন্ত্রী শনিবার আয়করে সুবিধা ঘোষণা করতে পারেন বলে প্রত্যাশা তুঙ্গে। দশ লাখ টাকার বেশি আয়ের মানুষের উপর করের বোঝা বর্তমানে যথেষ্ট বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সব মহলের অভিমত। ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে করে বোঝা পাঁচ শতাংশ কমালেই মধ্যবিত্তের যথেষ্ট সাশ্রয় হবে।
আমানত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়করে সাশ্রয় হলে সেই অর্থ মানুষ সঞ্চয় করতে পারে। ফলে ঘুর পথে সুবিধা প্রদানের অর্থ সরকারের ঘরেও অনেকটা ফেরত আছে। সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পগুলি মজবুত হয়। তাতে সরকারের প্রত্যক্ষ লাভ হল উন্নয়ন খাতে বাড়তি অর্থ ব্যয় করা সম্ভব।
মোদী সরকারের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেটে কৃষকদের সুবিধা প্রদানের আশাও জোরদার। বিশেষ করে দাবি আছে কৃষিঋণ মকুব করার। সেটা করা হলেও মধ্যবিত্ত কৃষক লাভবান হবেন। কারণ ঝণ নেওয়ার মতো সক্ষমতা ক্ষুদ্র চাষি, ভূমিহীন কৃষকের তেমন নেই। যদিও কৃষিঋণ মকুবের মতো বড় সিদ্ধান্ত লোকসভা নির্বাচনের আগে নেওয়া হয়ে থাকে। ২০০৮ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার ৬৫ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ মকুব করে পরের বছর লোকসভা ভোটে সুবিধা পেয়েছিল। আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল তারা।
কিন্তু মোদী সরকার কৃষিঋণ মকুবের পথে হাঁটেনি। পরের লোকসভা ভোট ২০২৯-এ। কিন্তু দল ও সরকারের অনেকে মনে করছেন ততদিন অপেক্ষা করলে পরিশোধ না হওয়া কৃষিঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। তখন ছাড় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।