দীর্ঘ বছর চিত্র সাংবাদিকতার সুবাদে কেন্দ্র রাজ্য তো বটেই বহু দেশ বিদেশের রাষ্ট্র নেতা নেত্রীদের খুব কাছ থেকে দেখা ও ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছি I কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়ান আজ খুব নাড়া দিচ্ছে আমাকে । বেশ কিছু ঘটনা দুর্ঘটনা জরিয়ে রয়েছে ওনাকে কভার করতে গিয়ে I বলতে গেলে লম্বা লিস্ট হয়ে যাবে তাই সংক্ষেপে বলছি । যেমন একবার একই ট্রেনে একসঙ্গে ফার্ষ্টক্লাস এসিতে সফর করতে করতে ওনার সঙ্গে রাজনীতির বাইরের কথা শুনছিলাম,মনে হলো দেখছি এক অন্য বুদ্ধবাবুকে ।
সেদিন আমার সঙ্গে ছিলেন আনন্দ বাজার পত্রিকার স্পোর্টস এডিটর গৌতম ভট্টাচার্য । এবার গৌতম কায়দা করে রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলতেই বুদ্ধবাবু অনেক গল্প বলে যাচ্ছেন । গৌতম কায়দা করে গুগলি দিচ্ছো, বললেন বুদ্ধ বাবু । তিনি খুবই রসিক মানুষ ছিলেন । সেই সঙ্গে প্রচন্ড স্মোক করতেন । মাঝেমাঝেই সিগারেট ধরাচ্ছিলেন আর আমিও সুযোগ বুঝে ছবি তুলে যাচ্ছিলাম উনি সেটা দেখতে পেয়ে আমাকে বললেন প্লিজ এই ছবি পাবলিশ করবেননা । আমিও সেছবি কখনো কোন স্টোরিতে সাবমিট করিনি । খুবই সহজ ভাবে থাকতেন ।
বর্ধমানের সার্কিট হাউসে ওনার সঙ্গে বেশ কয়েকটা দিন কাটিয়েছিলাম I একটা হাফহাতা শার্ট আর পুরনো পায়জামা পরে বেশ আড্ডার মেজাজে গল্প করে গেলেন আর চা সিগারেট চলল সেই সঙ্গে।
একবার কাকদ্বীপে একটা সেতু উদ্বোধন করে ফিরে যাওয়ার সময়,সেই সেতুর উপর তখন হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন বুদ্ধ বাবুকে দেখবেন বলে,ছবিটাকে আরও ভালো করার জ্ন্য পুলিশ কর্মীদের কে ঠেলে গাড়ির সামনে গিয়ে ওনাকে ক্যামেরা দেখিয়ে অনুরোধ করতে থাকি একবার প্লিজ নেমে আসুন । উনি ওই ভিড়ের মাঝখানে গাড়ি থেকে নেমে পরেছিলেন । এরকম আরও কতো যে স্মৃৃতি আছে তার ঠিক নেই ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এসবই বারবার মনে হচ্ছে,আর একটা কথা না বললে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব সারা জীবন । একবার সল্টলেকে একটা শিক্ষা ভবনের উদ্বোধনে এসেছিলেন বুদ্ধবাবু। আমার পৌঁছতে দেরি হয়ে গিয়েছিল,আমি পৌঁছে দেখি বুদ্ধবাবু ভবনটি উদ্বোধন করে বেরিয়ে আসছেন সামনে পিছনে সাফারি পরা বডিগার্ড, আমি যতবার ক্যামেরা তাক করছি ছবি তোলার জন্য ততবারই আমাকে এক বডিগার্ড সমানে মেরে যাচ্ছে ! শেষে ছবির পাগলামিতে দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে মারলাম আমিও পাল্টা ঘুষি। এই ঘটনায় ওখানে উপস্থিত প্রায় সব পুলিশ কর্মকর্তারা খেপে যায় এবং এই ঘটনায় আমার এ্যারেস্ট হওয়ার কথা । সেই অবস্থায় এগিয়ে এসেছিলেন বুদ্ধবাবু,আমাকে বললেন কি ব্যাপার আপনি এতো রেগে গেলেন কেনো? আমি ওনাকে বলি যা করেছি আমি ক্ষমাপ্রার্থী I কিন্তু আমিতো বিল্ডিংটাকে ব্যাকে রেখে আপনার ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম তাই বলে আমাকে মারবে? সে বার বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন আমায়,আমি চির ঋণী তাঁর কাছে ।
চিত্র সাংবাদিক হিসাবে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। ছবি রয়েছে অজস্র। তারই মধ্যে এই কয়েকটি ছবি শেয়ার করলাম
চমকে বিশ্বাসী ছিলেন না।
আ জেন্টলম্যান হু ইউস্ড টু রান আ গভর্নমেন্ট!
আরও বহু বছর পড়ে হয়ত ওনাকে আমরা আরও বেটার বুঝতে পারবো।
আমাদের মননে থাকবেন আপনি।
বুক ভরে নিশ্বাস নিন, আপনার অনন্ত শান্তির যাত্রা শুভ হোক। ভালো থাকুন।
🙏🏼💐🙏🏼