অঙ্কিতা পাল : এবছর কলকাতা বইমেলা প্রাঙ্গনে ড. কল্যাণ চক্রবর্তী এবং অরিত্র ঘোষ দস্তিদারের লেখা বই “কৃষি,পরিবেশ ও কৃষ্টির অন্তর্জগৎ” প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশনা সংস্থা ‘তুহিনা’ এই বইয়ের মাধ্যমে কৃষিকৃষ্টিকে নতুনভাবে পরিবেশন করার উদ্যোগ নিয়েছে। বইমেলায় ‘তুহিনা’-র স্টলেই পুস্তকটি প্রকাশিত হয়। কৃষিকাজের মধ্যে যে পরিবেশগত ভাবনা লোকায়তিক জীবনে ফুটে উঠেছে, তার স্বরূপ সন্ধান করা হয়েছে প্রস্তুত বইয়ে। পাশাপাশি আমের জৈবচাষ এবং ড্রাগন ফ্রুটের অর্থকরী চাষ বইটির গুরুত্ব বাড়িয়েছে, সৌকর্য বাড়িয়েছে।
বইটির বিশেষত্ব হল শিক্ষক তার ছাত্রকে ছাত্রাবস্থা থেকেই কৃষি সম্প্রসারণের পাঠ দিচ্ছেন। যেভাবে একদা বিশিষ্ট উদ্যানবিদ অধ্যাপক ড. রাধাগোবিন্দ মাইতি (বর্তমানে প্রয়াত) তাঁর ছাত্রদের লেখালেখির জন্য এগিয়ে দিতেন। এখানে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী উদ্যানবিদ্যা অনুষদের স্নাতক স্তরের ছাত্র অরিত্র ঘোষ দস্তিদারের সঙ্গে যৌথভাবে বইটি গ্রন্থনা করেছেন। পরিবেশগত কৃষি যা বাস্তুতান্ত্রিক সচেতনেতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জৈবিক কৃষির বিকাশ সাধন করে, তার প্রকাশই বইটির উদ্দেশ্য। কৃষি ও কৃষ্টিতে আগ্রহীদের জন্য এই বইটি বিশেষভাবে কাজে লাগবে এবং কৃষিতে-কৃষ্টিতে সম্পৃক্ত হয়ে উঠবে পাঠকের জীবনবোধ, এমনটাই তথ্যভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্যতম লেখক অরিত্র ঘোষ দস্তিদার বলেন, প্রকাশিত বইটি কৃষি পরিবেশ ও কৃষ্টির অন্তর্জগৎ-এর প্রথম খন্ড। কৃষি ছাড়াও লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিকগুলি তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। বিশ্ব মাটি দিবস থেকে শুরু করে বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো সমেত বহু বিষয়কে আলোকপাত করার চেষ্টা হয়েছে। শ্রী দস্তিদার আরও বলেন, তাঁরা বইটি উৎসর্গ করেছেন তাদের পরমারাধ্যা মাতৃদেবী নমিতা চক্রবর্তী এবং বর্ণালী ঘোষ দস্তিদার-এর করকমলে। প্রকাশস্থলে তিনি তাঁর মাকে ডেকেও নেন। বর্ণালী দেবী বলেন, “আমার সন্তান এখনও ছাত্র; এটি তার প্রথম বই। আমি আনন্দিত, এখন থেকেই ছেলে কৃষক ও পরিবেশ প্রেমীদের জন্য কলম ধরেছে।” আগামী দিনে আরও বই লিখে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। আনন্দাশ্রুর সঙ্গে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান পুত্রের শিক্ষক অধ্যাপক চক্রবর্তীকে। তিনি উপস্থিত সকলের কাছে ছেলের জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
অপর লেখক ড. কল্যাণ চক্রবর্তীও এদিন অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন। শ্রীমান অরিত্র জানান, স্যারের অনুপ্রেরণা ও সহায়তা ছাড়া আজ এই দিনটি আসতো না। তিনি বলেন, তাদের নানান যৌথ লেখা নানান পোর্টালে ছড়িয়ে-ছিটিয়েছিল। এরপর কিভাবে নিবন্ধগুলি এই জায়গায় পৌছোলো সেই বিষয়ে তিনি তাঁর স্যারকে কিছু বলতে অনুরোধ করেন।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার একটা লাইন দিয়ে শুরু করেন তাঁর বার্তা। ‘শেষের কবিতা’-য় রবীন্দ্রনাথ নতুন ও বলিষ্ঠ লেখক নিবারণ চক্রবর্তীকে উপস্থাপন করতে গিয়ে নায়ক অমিত রায়কে দিয়ে বলাচ্ছেন, “আনিলাম অপরিচিতের নাম ধরণীতে/ পরিচিত জনতার সরণীতে”। অর্থাৎ অরিত্রকে তিনি যে পরিচিত লেখকদের মাঝে প্রতিষ্ঠা দিতে চান, দ্ব্যার্থহীনভাবে সে কথাটি উপস্থাপন করেন তিনি৷ বলেন, সব ছাত্রদের জন্যই তাঁর এই দরজা খোলা। লেখকদের কুঁড়ি তিনি ফুটিয়ে তুলতে চান। তিনি বলেন, “অরিত্র আমার এক অন্যতম ছাত্র। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানপালন অনুষদের স্নাতকস্তরের এই ছাত্রের মধ্যে আমি প্রথম দিন থেকেই লেখক হবার সম্ভাবনা দেখেছি। লেখালেখিতে তার অসীম ক্ষমতা আছে। নানান প্রবন্ধে আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছে সহ লেখক হিসাবে। অনেক প্রবন্ধ ইতোমধ্যেই লিখেছে । আমরা সেই প্রবন্ধের কয়েকটিকে একত্রিত করেছি এই গ্রন্থের দুই মলাটের মধ্যে। বইটির নাম “কৃষি, পরিবেশ ও কৃষ্টির অন্তর্জগত”। বইটির মূল অবদান অরিত্রর । অরিত্র আজ এই বইটি দিয়ে শুরু করলেও আগামী দিনে অনেক বড় লেখক হবে, বিজ্ঞানী হবে । কৃষি কৃষ্টি ও লোকসংস্কৃতি নিয়ে ওর যেমন চর্চা তেমনই ভারতবোধ ও দেশপ্রেম নিয়েও আগ্রহী। আগামী দিনে একজন প্রতিষ্ঠিত ও দায়িত্বসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে আমরা ওকে পাব। আমার আশীর্বাদ সবসময় রইল অরিত্রের সাথে।”
অরিত্রের বাবা শ্রী সৌমেন ঘোষ দস্তিদার বলেন, “সত্যিই আজ আমার খুব আনন্দের দিন। আগে কোনদিন ভাবতে পারিনি যে অরিত্র বই লিখবে। এর পেছনে আমি পুরো কৃতিত্বই দিতে চাই ড. কল্যাণ চক্রবর্তীকে। কারণ ওনার অনুপ্রেরণা ছাড়া এই লেখাটি কখনোই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হতো না। সুতরাং আমি ড. কল্যাণ চক্রবর্তী স্যারকে আমার তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁরই স্নেহের স্পর্শ অরিত্র পেয়েছে।”
আমাদের রাজ্যে এবং দেশে কৃষির সাথে কৃষ্টির একটা মেলবন্ধন আছে। এই বইয়ে তা খোঁজাই মূল কাজ। তুহিনা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে প্রকাশনের মালিক শ্রী হিমাংশু মাইতি শারীরিক অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত থাকলেও, তাঁর সহধর্মিণী শ্রীমতী গীতিকা মাইতি উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান তাঁর প্রসন্নতার কথা এবং তুহিনা প্রকাশনীর ইতিবৃত্তের কথা। তুহিনা নতুন লেখকদের সামনে এনেছে। অরিত্রের প্রতিও তাদের আস্থা যথেষ্ট।