মঙ্গলবার আরজি কর-কাণ্ডের বিচার চেয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযানে উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি। আন্দোলনকারীদের আটকাতে হাওড়ার জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযান শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে অশান্ত হয় পরিস্থিতি। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। পুলিশের দিকে উড়ে আসে ইট-পাটকেল, বোতল ইত্যাদি। পাল্টা জলকামান ছোড়ে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজ’-এর নবান্ন অভিযানে ‘পুলিশি সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলে বুধবার রাজ্যব্যাপী ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি।
দেশের সময়: নবান্ন অভিযানে ছাত্রদের উপরে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ এনেই আজ, বুধবার ১২ ঘণ্টা ডাক দিয়েছে বিজেপি। ভোর ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত বনধ পালন করা হবে বলেই জানিয়েছে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিন সকাল ৬ টা থেকেই বনগাঁ স্টেশনে রেল অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া সহ বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। বনগাঁ – শিয়ালদা ও রানাঘাট লোকাল অবরোধ করায় পুলিশ অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করতেই শুরু হয় বসচা ।
বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া বলেন, “অত্যাচারী মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ যেভাবে পথে নেমেছে, তারপরও গদি ছাড়ছেন না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।”
ভাটপাড়ায় চলল গুলি
বন্ধের সকালে ভাটপাড়ায় গুলি চলল। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভাটপাড়ার ঘোষপাড়া এলাকায়। ঘটনায় এক জন আহত হয়েছেন বলে খবর। তাঁকে প্রথমে ব্যারাকপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও পরে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর। ঘটনাস্থলে পৌঁছন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমা-গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রবি সিংহ নামে আমাদের দলের এক কর্মী আহত হয়েছেন। ওঁরা আমার বাড়ি আসছিলেন। ঘোষপাড়া মোড়ের কাছে তাঁর গাড়ি আটকানো হয়। তার পর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।’’
শ্যামবাজারে মুখোমুখি তৃণমূল-বিজেপি
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে মুখোমুখি তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা সেখানে অবস্থান শুরু করলে তৃণমূলের কর্মীরা আপত্তি জানান। সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা দু’পক্ষকে দু’দিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। উত্তেজনার পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজন বন্ধ সমর্থনকারীকে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
কোচবিহারে গ্রেফতার ৩০
বন্ধের সকালে কোচবিহারে বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছড়ায়। বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমে বিক্ষোভ।
খাদ্য ভবনে ঝোলানো হল তালা
বিজেপি কর্মী সমর্থকদের তরফে রাজ্য সরকারের খাদ্য ভবনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা। বনধ সফল করতে সরকারি কর্মচারীদেরকে কাজে যোগদান না করার কথা বলা হয় বিজেপির তরফে।
শ্যামবাজারে মেট্রোর শাটার নামানোর চেষ্টা
বাংলা বন্ধ সফল করতে সকাল থেকে তৎপর পদ্মশিবির। কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে পথে নামতে দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মীদের। মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশও। সকাল শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের শাটার নামানোর চেষ্টা করেন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। তবে পুলিশ গিয়ে বন্ধ সমর্থনকারীদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়।
টালা ব্রিজে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
টালা ব্রিজে বনধ সফল করতে অবরোধ বিজেপি কর্মীদের। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা।
ধর্মতলায় মেট্রো বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা
ধর্মতলা চত্বর স্বাভাবিক থাকলেও, বিজেপি কর্মীদের তরফে এসপ্ল্যানেড মেট্রোর বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা। মেট্রোর ৫ নাম্বার গেটের সামনে এসে স্লোগান বিজেপির কর্মী সমর্থকদের। তাদের বক্তব্য মানুষ বন্ধ চাইছে, কিন্তু পুলিশ তা করতে দিচ্ছে না।
অগ্নিমিত্রার সঙ্গে পুলিশের বচসা
ভবানীপুরে বনধ পালন করতে হাজির বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল। যদুবাবুর বাজারে এক পুলিশ কর্তার সঙ্গে বচসাতেও জড়িয়ে পড়েন বিজেপি নেত্রী। প্রশ্ন করেন, কেন গতকাল লাঠিচার্জ করা হল আন্দোলনকারীদের উপরে?
বারাসতে গাড়ি-দোকান ভাঙচুর
জোর করে বনধ পালন করানোর চেষ্টা বিজেপির। বারাসতে চাপাডালি মোড়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা জোর করে দোকান বন্ধ করিয়ে দেয়। রাস্তায় বেরনো গাড়িগুলি ভাঙচুর করে।
ওভারহেড তারে কলাপাতা, লক্ষীকান্তপুরে ট্রেন চলাচল বন্ধ
বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধে ওভারহেড তারে কলাপাতা, ট্রেন চলাচল বন্ধ বন্ধ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লক্ষীকান্তপুর লাইনে। বুধবার সকাল থেকেই ট্রেন চলাচলে প্রভাব পড়েছে। গোচরণ স্টেশনের আপ লাইনে রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা দেওয়ার কারণে আপ ট্রেন চলাচল বন্ধ। দক্ষিণ বারাসাত,গোচরণ, ধপধপি সহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছে।
মালদহে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ
পুরাতন মালদহে বন্ধকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল মালদহে। পুলিশের সামনেই বচসায় জড়ালেন তৃণমূল-বিজেপি সমর্থকেরা।
মেদিনীপুরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
সাতসকালে মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে টায়ার জ্বালিয়ে দিল বন্ধ সমর্থনকারীরা। মেদিনীপুর শহরের বাস স্ট্যান্ড, কেরানিতলা, এবং জেলা বিজেপি পার্টি অফিসের সামনে ভোর থেকে টায়ার জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। টায়ার নিভিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নেতৃত্বে একাধিক রেল স্টেশনে অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা। পাল্টা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাও পথে নেমেছেন। বন্ধের বিরোধিতায় প্রচার চালাচ্ছেন। অভিযোগ, জগন্নাথের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালেন তৃণমূল কর্মীরা। এক তৃণমূল কর্মীকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে।
মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি স্টেশনে রেল অবরোধ বিজেপি কর্মী সমর্থকদের। মুর্শিদাবাদ স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। বহরমপুরেও প্রভাব পড়েছে যথেষ্ট। বেসরকারি বাস পরিষেবা প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ। সরকারি বাস হাতে গোনা।
সকাল থেকে ট্রেন চলাচল ব্যাহত শিয়ালদহের দক্ষিণ শাখায়। লক্ষ্মীকান্তপুর লাইনের একাধিক স্টেশনে ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেললেন বনধ সমর্থকেরা। যার জেরে রেলের ওভারহেড তারের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত। বেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিয়ালদহ থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর, কাকদ্বীপ, নামখানাগামী ট্রেন চলাচল বন্ধ। ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় সকাল থেকেই ওই লাইনের একাধিক স্টেশনে ভিড় রেল যাত্রীদের। ট্রেন না পেয়ে অনেকেই সড়কপথে রওনা দিয়েছেন নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশে। ফলে বাস ও অটোতে অতিরিক্ত ভিড়।
বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে সকালেই রেল অবরোধ হুগলি স্টেশনে। হুগলি স্টেশনে ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকাল আটকাল বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। রেললাইনে শুয়ে পড়লেন বিজেপি কর্মীরা।।
বন্ধ সর্বাত্মক ভাবে পালন করতে নানা পরিকল্পনাও নিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে খবর, বুধবার বন্ধ সফল করতে সকাল থেকেই পথে নামবে তারা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাজার বন্ধ করা জন্য দলের নেতানেত্রীরা থাকবেন। মেট্রো পরিষেবা অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের। শহরের আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে ‘রেল রোকো’ পরিকল্পনাও রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও, শ্যামবাজার, গড়িয়াহাট, ডানলপের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পথ অবরোধের পরিকল্পনাও রয়েছে বিজেপির।
অন্য দিকে এ দিন সকালে কোচবিহারে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহনের নতুন বাসস্ট্যান্ডের সামনে বিক্ষোভ অবস্থানে বসে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। বাসের সামনে বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।
এরপরই ময়দানে নামে পুলিশ। আটক করা হয় তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতী রাভা রায় ও কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে-কে । বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের টেনে-হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
বুধবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে বালুরঘাট সরকারি বাস স্ট্যান্ডের সামনে। এক দিকে, বন্ধের সমর্থনে যখন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা পিকেটিং করছে, তখন বন্ধের বিরোধিতায় পথে নেমেছে তৃণমূলও। দুই দলের সমর্থকদের স্লোগান, পাল্টা স্লোগানে উত্তপ্ত এলাকা। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সরকারি বাস ছাড়লেও বেসরকারি পরিষেবা ব্যাহত হয়েছেই বলে খবর। বন্ধের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজাগুলোতেও। বন্ধ দোকানের ঝাঁপ। বালুরঘাটে পুলিশ এখনও পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করেছে। অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে বালুরঘাটে বিজেপির টাউন সভাপতি সমীরপ্রসাদ দত্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।