দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্য বিজেপির অন্দরে চাপানউতোর, কিন্তু দলের বিক্ষোভের মাঝেই এবার মেলবন্ধনের বার্তা। রাজ্য বিজেপির সদর দফতর, মুরলীধর সেন লেনে এবার বড় করে বাগদেবীর আরাধনা হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, ২ দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভোগ বিতরণও করা হবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বিক্ষুব্ধদের অনেক নেতাকেই আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এই সরস্বতী পুজোয়। রাজ্য দফতরের ভেতরে হবে পুজো আর ঠিক বাইরে হবে বিচিত্রানুষ্ঠান।
প্রসঙ্গত, বুধবারই বঙ্গ বিজেপি-তে আবারও বড়সড় ভাঙনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, আরও অন্তত সাত থেকে আটজন বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন৷ তাঁদেরকে দলে নিতে তাঁর যে আপত্তি নেই, বুধবার তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
ফলে ওই বিজেপি বিধায়কদের তৃণমূলে যোগ দেওয়া এবার সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ সম্প্রতি শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বেও বিজেপি-তে একটা অংশ বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বেশ কয়েকজন বিধায়ক। সেই বিধায়কদের কথাই তৃণমূল নেত্রী বলছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল৷
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপি ছেড়ে একের পর এক বিধায়ক এবং নেতা তৃণমূলের ফিরতে শুরু করেছেন৷ এঁদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য নাম ছিল মুকুল রায়৷ এ ছাড়াও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তের মতো শাসক দল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন৷
এদিকে রাজ্যে পুরভোটের দামামা বেজেগেছে৷ রাজ্যের বাকি ১০৮ পুরসভার ভোট হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার থেকেই আদর্শ আচরণ বিধি লাগু। ৯ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। স্ক্রুটিনি হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ ফেব্রুয়ারি। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। তবে ভোট গণনা কবে হবে তা এখনও জানানো হয়নি। তবে ৮ মার্চের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে। কোভিড বিধি মেনেই ভোটগ্রহণ হবে। প্রচারের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ থাকবে।
অন্যদিকে, বিধানসভায় খাতায়কলমে এখনও বিজেপি বিধায়ক হিসেবেই রয়েছে মুকুল রায়ের নাম।
তবে তিনি ফের তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। অবশ্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ মামলায় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এটা ঘটনা, বিধানসভার খাতায় কলমে মুকুল রায়–সহ পাঁচজন দলবদল করা বিধায়ক এখনও বিজেপি হিসেবেই রয়ে গিয়েছেন। সম্প্রতি বিধানসভার কাছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের বিধায়ক সংখ্যা জানতে চেয়েছিল।
আগামী জুন–জুলাই মাসে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেই কারণেই এই তথ্য জরুরি হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। উত্তরপ্রদেশ–সহ ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যকে বাদ রেখে বাকি রাজ্যের বিধানসভাগুলি থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার কাছেও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, সেই তথ্য জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছে বিধানসভার সচিবালয়। তাতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তৃণমূলের ২১৮ জন ও বিজেপি–র ৭৫ জন বিধায়কের হিসেব দেখানো হয়েছে। কিন্তু গত বছর ১১ জুন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল।
তারপরেই একে একে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বিজেপি বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী, কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় এবং বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। পাঁচ বিধায়ক দল ছাড়ার পর বিজেপি–র বিধায়ক সংখ্যা এখন ৭০। কিন্তু তা সত্ত্বেও, বিধানসভার নথিতে বিজেপি বিধায়ক হিসেবেই তাঁদের দেখানো হয়েছে। তবে এই পাঁচ জনের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে স্পিকার ও আদালতে আবেদন জানিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল।
একের পরএক ঘটনায় কার্যত বিধ্বস্ত বঙ্গ বিজেপি৷ পর্যবেক্ষকদের মতে অন্দরের ক্ষোভ মেটাতে বাগদেবীর আরাধনা এখন বঙ্গ বিজেপির কতটা সহায় হয় সেইটাই দেখার৷