
১৯২৩ সালে, প্রথম বার শান্তিনিকেতনে বসন্তের আসর বসেছিল। ফাল্গুনী পূর্ণিমায় আশ্রম-সম্মিলনীর অধিবেশনে বসন্তোৎসবের আয়োজন হয়েছিল। এর আগে এমন আসরের কথা আর জানা যায় না, যদিও বসন্তের গান গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমার রেওয়াজ ছিল তার আগেও। তবে আজও নিয়মিত ভাবে ফাল্গুনী পূর্ণিমার আয়োজনের সেই বসন্ত উৎসবের রেওয়াজ জারি রয়েছে বাংলা জুড়ে ।

তেমনই সপ্তক মিউজিক স্কুলের আয়োজনে পালিত হলো বসন্ত উৎসব। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে এলাকায় শনিবারের বিকালের অনুষ্ঠানকে ঘিরে মেতে উঠেছিলেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। সপ্তকের প্রশিক্ষক নন্দিতা চৌধুরী জানান বর্তমানে আমাদের পাঁচটি শাখা, বিভিন্ন শাখা থেকেই ছেলেমেয়েরা এদিন এখানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছেন, তাদের অভিভাবকেরাও ছিলেন৷ প্রতিবছর বসন্তকে বরণ করতে সপ্তকের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়৷ এভাবেই বসন্ত উৎসব উপলক্ষে গোটা দিন মেতে রইলেন সকলে ।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত ও বর্ষা’ নিবন্ধে লিখেছিলেন, “বসন্ত উদাসীন, গৃহত্যাগী। …বসন্ত আমাদের মনকে চারিদিকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয়, …বসন্তে আমাদের মন অন্তঃপুর হইতে বাহির হইয়া যায়, বাতাসের উপর ভাসিতে থাকে, ফুলের গন্ধে মাতাল হইয়া জ্যোৎস্নার মধ্যে ঘুমাইয়া পড়ে; আমাদের মন বাতাসের মতো, ফুলের গন্ধের মতো, জ্যোৎস্নার মতো, লঘু হইয়া চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে। বসন্তে বহির্জগৎ গৃহদ্বার উদ্ঘাটন করিয়া আমাদের মনকে নিমন্ত্রণ করিয়া লইয়া যায়।” যে বসন্তকালে আমাদের মন বহির্জগতে ছড়িয়ে পড়ে— সেই ছড়িয়ে পড়া মনের জন্যই বসন্তোৎসব। গৃহবাসীকে ‘খোল্ দ্বার খোল্’ বলা কেবল ধ্বনিমাধুর্যের রেশ নয়, গানের অলঙ্কার নয়, তার মধ্যে একটি বার্তা আছে। দুয়ারের সঙ্গে সঙ্গে গৃহ, গৃহের সঙ্গে অন্তরটিকে খোলার বার্তা।