
পুলিশের ভ্যান থামতেই ধীরে সুস্থে মুখে মাস্ক লাগাল ভেতরে থাকা অভিযুক্ত। এরপর সঙ্গে থাকা গামছাটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিল। ‘মা-বাবাকে কেন মারলে?’ সংবাদ মাধ্যমের এই প্রশ্ন কানে পৌঁছলে সংক্ষেপে হুমায়ুন বলল, ‘দোষ করেছে।’ ধীরে সুস্থে পুলিশের ভ্যান থেকে নেমে বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে ঢুকে যায় সে।

মা-বাবাকে খুনে অভিযুক্ত পূর্ব বর্ধমানের হুমায়ুন কবিরকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে নিয়ে আসা হয়। জানা গেছে, মেমারি থানার পুলিশের ‘শোন অ্যারেস্টের’ আবেদনের শুনানি হবে। তা মঞ্জুর হলে পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হবে।

সম্প্রতি মেমারিতে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় মুস্তাফিজুর রহমান (৬৬) ও মমতাজ পারভিন (৫৬) নামে এক প্রবীণ দম্পতির। দু’জনের গলার নলিই কাটা ছিল। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় তাঁদের একমাত্র ছেলে হুমায়ুন কবীরকে। পুলিশের সন্দেহ, বাবা-মাকে খুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষেছিল সে। কিন্তু বনগাঁতে গিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ায় ঘটে বিপত্তি।একটি মাদ্রাসাতে কয়েকজনের উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

হুমায়ুন কবির ওরফে আশিক। তাঁর আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন, তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকতেন। তাঁর বিয়ে হয়েছিল কয়েক বছর আগে। কিছুদিন আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকায় তাঁকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন বাবা মা। সেটাই কাল হয় তাদের।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঘটনার আগের রাতেও বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে গিয়েছিল হুমায়ুন। অন্য নামাজিরা জানান, তাঁর কাছে ছুরি ছিল। সেটা সে অনলাইনে আনিয়েছিল। এমনিতে চুপচাপ ছেলে হিসেবেই হুমায়ুন পরিচিত ছিল ।ল্যাপটপে পড়াশোনা নিয়েই থাকত।

গত বুধবার সকালে মেমারির কাশিয়ারা মুক্তারবাগান এলাকায় জোড়া খুন নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। রাস্তার উপর থেকে উদ্ধার হয় প্রৌঢ় দম্পতির দেহ। মোস্তাফিজুর রহমান (৬৫) ও মমতাজ পারভিনের (৫৫) এই মেধাবী ছেলেটি এমন নৃশংসভাবে বাবা মাকে খুন করে দেহ বাইরে টেনে এনে ফেলবে ভাবতেও পারেননি প্রতিবেশীরা। তবে খুনের পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় হুমায়ুন। পরে বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। বাড়ি থেকে কিছু চুরি না গেলেও সিসিটিভির হার্ডডিস্ক উধাও হয়ে যায়।
হুমায়ুন বিটেক ইঞ্জিনিয়ার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনাও করেছে। আত্মীয়দের দাবি, টাকা পয়সা নিয়েও বরাবর উদাসীন ছিল সে। সেক্ষেত্রে কেন বাবা, মাকে খুন? উত্তর খুঁজছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাক মানসিক অবস্থাও। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, হুমায়ুনের চোখেমুখে অনুশোচনার কোনও ছাপ নেই।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, হুমায়ুনের সঙ্গে তাঁর বাবার মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল গত কয়েক বছর ধরে। ছেলেকে বিয়ে করার পরামর্শ দেন তিনি। বাবার কথা শুনে বিয়ে করলেও সে সম্পর্ক টেকেনি। বাবা নিজের সিদ্ধান্ত ছেলের উপর চাপিয়ে দিলে বাধা দিতেন না মা, ক্ষোভ ছিল হুমায়ুনের। সেই পুষে রাখা ক্ষোভের কারণেই কি বাবা, মাকে খুনের ছক? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।