দেশের সময় ওয়েবডেস্ক :মেদিনীপুর, পুরুলিয়ার পর বাঁকুড়া।একের পর এক জেলা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তার পর সারছেন প্রশাসনিক বৈঠক। আর সেই বৈঠকে বসেই আমলা থেকে আধিকারিক সকলকে কাজে গাফিলতির জন্য রীতিমতো ধমক দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রেহাই পাচ্ছেন না জনপ্রতিনিধিরাও।
কোনও প্রকল্প ঘোষণা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ছ’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালে যে প্রকল্প নিজে হাতে শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , সেই প্রকল্পের রিপোর্টে জেলা বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন নবান্নকে জানিয়েছিল—‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস।’ ২০১৭ সালে ঠিক হয়েছিল মুকুটমণিপুরে সাংস্কৃতিক ভবন হবে। এখনও তা মাথা তোলেনি।
মঙ্গলবার এই রকম অসংখ্য কাজ নিয়ে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজ ফেলে রাখা নিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্দেশে বললেন, “তোমাদের কানমলা খাওয়া উচিত।”
সোমবার পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র ধমক শুনতে হয়েছিল । সেখানকার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কাজ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ডিএম কী জেলা চালাচ্ছো!
আমার আইডিয়াটাই বদলে গেল।” সঙ্গে জেলাশাসকের উদ্দেশে মমতা এও বলেছিলেন, “আমার দলের লোক হলে টেনে চারটে থাপ্পড় মারতাম।” এদিন বাঁকুড়া প্রশাসনের উদ্দেশে বললেন, কান মোলা খাওয়া উচিত।
সোমবার ঝালদা পুরপ্রধানকে ওজন কমানোর দাওয়াই দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরাট মধ্যপ্রদেশের জন্য রীতিমতো বকাঝকা করেন তিনি। এদিন আবার সরকারি কাজ আটকে থাকার জন্য ধমক দিলেন বিভিন্ন দপ্তরকে। কোন দপ্তরের কাজ কত দিন আটকে রয়েছে, তার তালিকাও তৈরি করে নিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘আপনারা ওয়ার্ক অন প্রগ্রেস বললেই আমি মেনে নেব, সার্ভে করব না, এমনটা নয়। আমি কিন্তু সব নজরে রাখব। এগুলোর আগে কাজ শেষ করুন।’
আটকে রয়েছে মুকুটমণিপুরের কালচারাল ভবনের কাজ। কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক বলেন, কাজ চার দিন আগেই শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদ জানায়, জমির সমস্যা ছিল।
ধমক দিয়ে মমতা বলে ওঠেন, ‘তোমাদের সব কিছুতেই জমির সমস্যা, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। মোট ৩৪টি প্রকল্পের তালিকা দেওয়া রইল জেলাশাসকের কাছে। দয়া করে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির হাতে কাজ দেবেন না।’ এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী।
জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতকে আরও একহাত নিলেন তিনি। জেলাশাসকদের বললেন, ‘আপনারা দপ্তর থেকে কাজ করুন, ওরা টেন্ডার ডাকতে দেরি করে। ওরা নিজেদের লোকদের ছাড়া টেন্ডার দেয় না। ওদের হাতে কাজ দেবেন না। ওদের ইঞ্জিনিয়ার কম, ওদের লোক সংখ্যা কম, ওদের হাতে কাজ দেবেন না।’ রায়পুর ব্লকের ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বলেন, ২১ কোটি টাকার প্রকল্প কেন আট বছর ধরে পড়ে রয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ৮৫ শতাংশ কাজই হয়ে গিয়েছে। তবে তাতে সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘না না, ৮৫ শতাংশ ওসব শুনব না। এ তো কানমলা খাওয়া উচিত সবার কাছে, যে দপ্তর এগুলো করছে। দায়িত্ব নিয়ে এগুলো করছে।’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন এও বলেন, একাংশের কর্মচারী, যাঁরা সরকারের থেকে বেতন পান, তাঁদের কাজকর্মের জন্য সরকারের বদনাম হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বদনাম হচ্ছে।