অর্পিতা বনিক, হাবরা: বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণীপুর লোক উৎসব ও মেলা । করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি কারণে দুবছর মেলা বন্ধ থাকার পর এই বছর স্বাভাবিক ছন্দেই শুরু হয়েছে এই মেলা।৬৭তম বর্ষে পদার্পণ করল এই মেলা। বাণীপুর লোক উৎসব উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী লোক উৎসব ও মেলা। গত কয়েক দশক ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বাণীপুর লোক উৎসব প্রাঙ্গণে। কিন্তু করোনাকালে বন্ধ ছিল এই বাণীপুর লোক উৎসব। বাংলার খ্যাতনামা মানুষদের উপস্থিতি ও যোগদান এই মেলাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে। দেখুন ভিডিও
মন্ত্রী থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতে শনিবার মহাসমারোহে উদ্বোধন হয়েছে বাণীপুর মেলার । বানিপুর পিজিবিটি ময়দানে প্রায় ৪০০টি স্টল সহ একাধিক পসরা নিয়ে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে জমে উঠছে মেলা। ঐতিহ্যের বানীপুর লোক উৎসব মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক , চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ,বিখ্যাত বহুরূপী সুবলদাস বৈরাগ্য৷ হাবরার পুরপ্রধান নারায়ন সাহা সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা।
উৎসবের বিভিন্ন দিনে আয়োজন করা হয়েছে ঢাক বাদন, ছৌ নাচ, যাত্রা, লোকনাট্য লেটো, ভাওয়াইয়া গান, বাউল, নাটক, লোকনাট্য গম্ভীরা, কবিগান, রায়বেঁশে, মূকাভিনয়, তরজা গান, ঝুমুর, মতুয়া সঙ্গীত, রামযাত্রা, লোকসঙ্গীত ও পুতুল নাচ। থাকছে স্বাস্থ্যমেলা, যোগাসন ও জিমন্যাস্টিকের প্রদশর্নী। বিভিন্ন গ্রামীণ খেলার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। দেখা যাবে পুলিশের সমাজ সচেতনামূলক কাজের প্রদশর্নী, পটচিত্রও।
গত কয়েক বছর ধরেই বাণীপুরের এই মেলার নাম ছড়িয়েছে দূরদূরান্তে। যা নিয়ে স্থানীয় মানুষের গর্বের অন্ত নেই। হাবরার পুরপ্রধান নারায়ন সাহা তো বলেই ফেললেন, ‘‘গোটা রাজ্যে বাণীপুর লোক উৎসবের জনপ্রিয়তা এখন শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার মতোই।’’
উৎসবের আড়ম্বর এবং উষ্ণতায় মুদ্ধ রাজ্যের মন্ত্রী তথা হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “আগামী দিনে এই মেলাকে আরো বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে। মূল মঞ্চটিও আরও বৃহৎ করা হবে৷ লোকসংস্কৃতির সার্বিক প্রসারে উৎসব কমিটির আন্তরিক প্রয়াস লোকসংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে। মানুষের সুস্থ চেতনা প্রসারেও বাণীপুর লোক উৎসব সফল।’’ স্বনির্ভর মহিলাদের হাতের কাজ থেকে শুরু করে নানা সামগ্রী এমনকি বাংলার পুলি পিঠে কি নেই এই মেলায়! আর এভাবেই মহিলাদের এগিয়ে আসতে এই মেলা বড় ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান মন্ত্রী।
আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই মেলা। শুরুর পর থেকেই দূর দূরান্ত থেকে আসা বহু মানুষের ভিড় রীতিমতো উৎসাহ জোগাচ্ছে উদ্যোক্তাদেরও। প্রতিবছরের মতো এই বছরও রয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। প্রতিবছরই মেলায় বিশেষ বৃহৎ আকৃতির সবজি ও ফলমূল দেখতে ভিড় জমান বহু সাধারণ মানুষ। রয়েছে মূল মঞ্চ সহ একাধিক লোক উৎসবের স্টেজ। প্রতিদিনই রয়েছে নানা সংস্কৃতি অনুষ্ঠান। পাশাপাশি নাটক গান কবিতা সহ একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকছে।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সারা মেলা জুড়ে রয়েছে বিশেষ পুলিশি নজরদারি। তাছাড়াও সিসিটিভির মাধ্যমেও চলছে নজরদারি। হাবরা থানার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে মেলার জন্য। গত দু’বছর পর পুনরায় বানীপুর মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় চুটিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা যাচ্ছে উত্তর২৪পরগনা জেলার বাসিন্দাদের।
শুধু হাবরার মানুষই নন, এই উৎসবের টানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। গোটা দেশ থেকে লোকশিল্পীরা আসেন। হাবড়ার মানুষের কাছে উৎসবটি বার্ষিক পার্বণে পরিণত হয়েছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, উদয়শঙ্কর, অন্নদাশঙ্কর রায় কে আসেননি এই উৎসবে। স্থানীয় মানুষের কথায়, “এই লোকউৎসবের মাধ্যমে আমরা গোটা দেশের লোক সংস্কৃতির মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছি।”