দেশের সময় ওয়বডেস্কঃ কয়লা থেকে বালি, নিয়োগ থেকে গরু যে কোনও ইস্যুতে বাংলার শাসকদল ও তাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে নিশানা করছেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা। সরাসরি চোর পর্যন্তও বলে দিচ্ছেন কখনও কখনও। গেরুয়া শিবির যখন প্রতিদিন সেই মাত্রাকে আরও আরও চড়া দাগে তুলছে তখন মঙ্গলবার মালদহের সরকারি কর্মসূচি থেকে তার জবাব দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এদিন গাজলের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘আমরা যদি চোর হই তোরা ডাকাত।’ এদিন কারও নাম করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে অনেকের মতে, নাম না করলেও নিশানা কার দিকে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি।


এখানেই থামেননি মমতা। তিনি বলেন, ‘আমি একদিকে খুশি। কয়েকটা ডাকাত, গদ্দার বেরিয়ে গেছে। এরাই এসব করেছিল।’ এরপরেই পুরুলিয়া প্রসঙ্গ টানেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একবার দেখলাম পুরুলিয়ার কোটাই কেটে দিয়েছিল। মাননীয় আদালতকে দুপায়ে প্রণাম করে বলব একবার খোঁজ নিয়ে দেখুন। কার পকেটে ঢুকেছে।’
শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন পুরুলিয়া জেলার সাংগঠনিক পর্যবেক্ষক ছিলেন।

দলের দায়িত্বে থাকলেও ওই জেলার প্রশাসনও যে তাঁর কথায় অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হতো তাও মানেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, এদিন হয়তো সেটাই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন মমতা।

শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোটা তৃণমূলই এখন সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে এই প্রশ্ন তুলছেন যে শুভেন্দু কি ধোয়া তুলসীপাতা? নারদ কাণ্ডে যাঁকে কাগজে মুড়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, তাঁর কাছে নৈতিকতার কথা কেন শুনবে মানুষ? কেন তাঁকে ধরবে না সিবিআই বা ইডি?

এদিন নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গও ছুঁয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাময়িকভাবে অনেক কিছু মনে হতে পারে। কিন্তু আমার বিশ্বাস আদালতে সঠিক বিচার হবে। কেউ অন্যায় করলে আমরা দায়িত্ব নেব না।’


এরপর ফের একবার পুরুলিয়া প্রসঙ্গ টানেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘নিয়োগের কোথায় কী হয় সবটা আমি দেখি না। একদিন হঠাৎ দেখলাম পুরুলিয়ার ছেলেরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? শুনলাম পুরুলিয়ার কোটাটাই কেটে দিয়েছে। আমি মনে করি প্রতিটা জেলার জন্য আলাদা আলাদা কোটা থাকা উচিত।’

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, রাজনীতিতে ধারণাই সব। বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূল সম্পর্কে বিজেপি একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা করছে। তা হল, তৃণমূল মানেই চোর। এদিন বিজেপির সেই কৌশলেরই মোকাবিলা করতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যাঁরা পুরুলিয়ার কোটাটাই পকেটে পুরে নিয়েছিল, তাঁরা আবার দুর্নীতির কথা বলেন কী করে? বরং তিনি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন কিছু ডাকাত-গদ্দার তৃণমূল ছেড়ে গেছে।২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মালদহ জেলার দুই আসনই হাতছাড়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য তিন ভাগের ২ ভাগ আসনেই ভাগ বসায় শাসকদল। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপরেই লোকসভা ভোটের তোড়জোড় শুরু। এই ২ ভোটেই একুশের রেজাল্ট ধরে রাখতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। অন্যদিকে, হাল ছাড়তে নারাজ বিজেপি-ও। এই আবহেই মঙ্গলে মমতার মালদহ সফর।
উনিশের লোকসভা নির্বাচনের ফল নিরাশ করেছিল তৃণমূলকে। মালদহ জেলার দুই লোকসভা আসনের একটি পেয়েছিল বিজেপি, অন্যটি গিয়েছিল কংগ্রেসের দখলে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মালদহ জেলার দুই আসনই হাতছাড়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য তিন ভাগের ২ ভাগ আসনেই ভাগ বসায় শাসকদল। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপরেই লোকসভা ভোটের তোড়জোড় শুরু। এই ২ ভোটেই একুশের রেজাল্ট ধরে রাখতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। অন্যদিকে, হাল ছাড়তে নারাজ বিজেপি-ও। এই আবহেই মঙ্গলে মমতার মালদহ সফর।
উনিশের লোকসভা নির্বাচনের ফল নিরাশ করেছিল তৃণমূলকে। মালদহ জেলার দুই লোকসভা আসনের একটি পেয়েছিল বিজেপি, অন্যটি গিয়েছিল কংগ্রেসের দখলে।

লোকসভা ভোটের ফলের বিধানসভা ভিত্তিক পর্যালোচনা করলে দেখা গিয়েছিল মালদহ জেলায় কংগ্রেস এগিয়ে ৪টি আসনে, বিজেপি এগিয়েছিল ৬ আসনে, ২ আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল। এই ফলাফলের ভিত্তিতেই মালদহকে পাখির চোখ করেছিল বিজেপি। যদিও ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের ফল সব হিসেব উল্টে দেয়৷
একুশের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ পেলে দেখা যায়, জেলার ১২ আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ১২ আসনের মধ্যে মাত্র চারটি আসন পায় বিজেপি৷ শূন্য হয়ে যায় বাম-কংগ্রেস।
ফের  একবছর পরে লোকসভা ভোট। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। কদিন আগেই রাজ্য সফর সেরে গিয়েছেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। তারপরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফর ঘিরে রাজনৈতিক লড়াই প্রায় জমে উঠলই বলা যায়।

গত লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছিল, মালদহের রতুয়া ও হরিশচন্দ্রপুর আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এবার শুধু দুই নয়, আট নয় আরও বেশি আসনে লড়াই চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল।মালদহ জেলা জুড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এই জায়গা বাছাই করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের গ্রামগুলিতেও ভোটের হাওয়া ধরতে চাইছে বিজেপি৷ পিছিয়ে নেই তৃণমূলও।

মালদহের তৃণমূলের নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, “২০১৬ ও ২০১৯ সালেও তৃণমূল কংগ্রেস এখানে আরও ভাল ফল করতে পারত। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর জন্যে তা আমরা করতে পারিনি। এবার বিজেপি যা খুশি বলে যাক, আমরা ভাল ফল করবই।”

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দুই জেলা মালদহ ও মূর্শিদাবাদ। এখানে আসন দখলে মরিয়া রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আবার এই দুই জেলাই গুরুত্বপূর্ণ গেরুয়া শিবিরের কাছেও। তবে তৃণমূলের লক্ষ্য, দুই জেলার সব কটি লোকসভা আসন দখল করা। সে কারণেই এই দুই জেলায় দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে চাইছে তারা। মঙ্গলে মমতার সফরে দলের নিচুস্তরের কর্মীরা কতটা চাঙ্গা হলেন, তা অবশ্য সময়ই জানান দেবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here