বাংলাদেশ মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক ম্যাটস (মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল), ডিএমএফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি), এলএমএফ (লাইসেন্সিয়েট অফ মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি) পাস করা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের ‘ডিপ্লোমা মেডিকেল প্র্যাকটিশনার’ হিসেবে বিবেচনা করার প্রতিবাদ, বিএমডিসি সংস্কার সহ কয়েক দফা দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন সারাদেশ থেকে আসা চিকিৎসকরা। দেখুন ভিডিও
‘মার্চ টু বিএমডিসি’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১ আগস্ট বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাধারণ চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থী সমাজের ব্যানারে দেশের চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন। এসময় তারা বিএমডিসি আধিকারিকদের অপসারণও দাবি করেন। জানা যায়, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তারা শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছেন। পরে সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদল বিএমডিসিতে যায় দাবিসম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে৷
চিকিৎসকদের দাবিগুলোর মধ্যে আছে– ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি প্রাপ্তরা ছাড়া অন্য কেউ যেন ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে না পারেন তা নিশ্চিত করা; মেডিক্যাল চিকিৎসা ডিপ্লোমাধারীদের পরিচিতি বিএমডিসি আইন অনুযায়ী মেডিক্যাল সহকারী হিসেবে নিশ্চিত করা; মেডিক্যাল সহকারীদের জন্য নির্ধারিত ৭৩টি ওষুধের বাইরে প্রেসক্রিপশনকারীদের বিরুদ্ধে বিএমডিসি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এছাড়া চিকিৎসকদের আরও দাবির মধ্যে আছে– স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার লক্ষ্যে ডাক্তার ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করতে হবে; ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাক্তার দ্বারা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে; প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে; বেসরকারি চিকিৎসকদের বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে (মেডিকেল অফিসার, সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার, রেজিস্ট্রার); অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে; বিএমডিসি ছাড়া ভুল চিকিৎসা বলার অধিকার কারও নেই; বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন/নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে.
চিকিৎসকরা বলছেন, “ম্যাটস, ডিএমএফ, এলএমএফ পাস করা মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টদের ‘ডিপ্লোমা মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার’ হিসেবে বিবেচিত করেছে বিএমডিসি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকারের লড়াই হিসেবে আজকের এই কর্মসূচিতে এসেছি। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম কোনো বিধান আমরা দেখিনি যে এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কারো নামের সাথে ডাক্তার যুক্ত হয় কিংবা এই ডিগ্রি ছাড়া কেউ রোগী দেখেন এবং প্রেসক্রিপশন দেন৷ অষ্টম শ্রেণি বা দশম শ্রেণি পাশ করা ব্যক্তিরাও মাত্র চার বা ছয় মাসের কোর্স করে যদি নিজেদের ডাক্তার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আসেন, সেক্ষেত্রে তা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে৷ কারণ একজন পূর্ণ প্র্যাক্টিক্যাল নলেজ না-জানা কেউ চিকিৎসা দিতে পারেন না৷ পৃথিবীর কোনো দেশে যা নেই, তা এখন বাংলাদেশে এস্টাবলিশ করার চেষ্টা করছে কুচক্রী মহল৷ এটাকে যেকোনো উপায়ে হোক রুখে দিতেই হবে৷ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আমরা রক্ষা করবোই৷ এখান থেকে আমাদের প্রতিনিধি দল বিএমডিসিতে যাবে এবং আমাদের দাবিগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেবে৷”
কর্মসূচি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ডাক্তার শাহেদ রফি পাভেল বলেন, “আমরা শুরুতে বিএমডিসিতে জড়ো হওয়ার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ডিপ্লোমাধারীরাও পাল্টা কর্মসূচি দেয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই কর্মসূচিকে ঘিরে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। দেশের সাধারণ চিকিৎসক ও ছাত্র-ছাত্রীদের এই মুভমেন্টকে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র বানাতে চান কেউ কেউ। আমরা চাই, চিকিৎসক ও ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এমন কোনও কালিমা না পাক যা ভবিষ্যতের পথগুলো বন্ধ করে দেয়।” তিনি বলেন, “আশা করবো, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ সবাই দেশের সাধারণ চিকিৎসক ও ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। আমরা সহযোগিতা চাই যৌক্তিকতার ভিত্তিতে৷ এখানে অযৌক্তিক কোনো দাবি আমরা করিনি, তা যেকোনো মানুষেরই বোধগম্য৷”