দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলাদেশের আদালতে মঞ্জুর হল না ইসকনের সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর জামিন। বস্তুত, তাঁর হয়ে কোনও আইনজীবীই দাঁড়াতে পারেননি এই দিন। ফলে কোনও সওয়াল-জবাবেরই সুযোগ মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে জামিন খারিজ করে দেন বিচারপতি।
জাতীয় পতাকার অবমাননা সহ একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। গত সপ্তাহে তাঁকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম পুলিশ। পরের দিন তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশের আদালত। আজ, মঙ্গলবার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু তা হলই না, মিলল না জামিনও।
অন্যদিকে, আজ এই জামিনের মামলা আদালতে ওঠার ঠিক আগের রাতেই আবারও একটি নতুন মামলা রুজু হয়েছে সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে। এবারও জামিন অযোগ্য ধারাতেই মামলা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস-সহ মোট ৭১ জনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সোমবার স্থানীয় এনামুল হক চৌধুরী নামে একাধিক ব্যক্তি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় এই নতুন মামলা করেন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে।
মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণর জামিনের শুনানি যে ভেস্তে যেতে পারে, সে নিয়ে সংশয় আগে থেকেই ছিল। কারণ সোমবার রাত পর্যন্ত চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে জামিনের আবেদন করতে চট্টগ্রামের কোনও আইনজীবী পাওয়া যায়নি। ঢাকা থেকে একজন আইনজীবীর মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম আদালতে আসার কথা ছিল, যিনি চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন চেয়ে লড়াই করবেন। তার আগে হিন্দু আইনজীবীদের তরফে বিচারকের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনও করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল এবং দাবি করা হয়েছিল তাঁরা যাতে সাধুর জামিনের আবেদনের শুনানিতে থাকতে পারেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর ইসকনের ওই সন্নাসীকে আদালতে তোলার পর এলাকায় গোলমালে এক আইনজীবী নিহত হন। সোমবার তাঁর স্মরণে আদালত চত্বরে সভা ও পদযাত্রা করেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীরা।
এর পরে গতকাল ফের সন্ন্যাসীর হয়ে আদালতে সওয়াল করার কারণে চিন্ময়কৃষ্ণর আইনজীবীর ওপর নৃশংস হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। আক্রান্ত আইনজীবীর নাম রমেন রায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্ন্যাসীর হয়ে মামলা লড়ার অভিযোগে এর আগে রমেনবাবুকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তারপরও তিনি সন্ন্যাসীর হয়ে মামলা লড়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। তারই জেরে এই হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। আইনজীবীর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শেষমেশ বাংলাদেশের সনাতনীদের একাংশের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে, কার্যক্ষেত্রে এর কোনওটাই সম্ভবপর হয়নি। ফলে মুক্তি মিলল না চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের। এবার কি আরও বৃহত্তর আন্দোলন-বিক্ষোভের পথে এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ, সেই প্রমাদই গুনছেন অনেকে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। এই আবহে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক ধর্মীয় সংগঠন মিলে গঠন করে ‘সনাতনী জাগরণ মঞ্চ’। ওই মিলিত মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তার ডাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ আয়োজিত হয়েছে। প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষ তাতে ভিড় করেছেন। সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ ইস্কনের প্রাক্তন সদস্যও। সংগঠনের সঙ্গে আপাতত কোনও সরাসরি যোগ না থাকলেও, তাঁর গ্রেফতারির পর পাশে দাঁড়িয়েছে ইস্কনও।
সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ্ন প্রকাশ করেছে ভারতও। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশের হাতে সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘‘আশা করব চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার হবে। তাঁর আইনি অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।’’