লাভ হলো না দুর্গম পাহাড়ে কালী মন্দিরে নাম ও ধর্ম ভাঁড়িয়ে লুকিয়ে থেকেও। গোয়েন্দা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হল বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার খুনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দুই ব্যক্তি। ধৃত ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিজেদের হিন্দু পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পাতাল কালী মন্দিরে লুকিয়ে ছিল। বুধবার দুপুরে হেলিকপ্টারে করে সেখানে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। গ্রেফতারির পর হেলিকপ্টারে করেই তাদের ঢাকা নিয়ে আসেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ধৃত ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিউ টাউনে সঞ্জীবা গার্ডেনে বাংলাদেশি সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিল৷ আখতারউজ্জামানের নির্দেশে শিমুল ভূঁইয়া নামে যে ব্যক্তি আনারকে খুন করে তার সহযোগী হিসাবে কাজ করেছিল এরা। খুনের আগে ফয়সাল আনারকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে। তারপর মোস্তাফিজ আনারকে উলঙ্গ করে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ফেলে।
১৩ মে খুনের পর ১৯ মে বাংলাদেশে ফিরে যায় ২ জন। এরপর তারা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দুর্গম পাহাড়ে পাতাল কালী মন্দিরে হিন্দু সেজে আত্মগোপন করে। পলাশ রায় ও শ্যামল রায় নামে নিজেদের পরিচয় দেয় ফয়সাল ও মোস্তাফিজ।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ সীতাকুণ্ডের খাগড়াছড়িতে ওই পাহাড়ে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেন পাহাড়। এর পর ২ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেন তাঁরা। হেলিকপ্টারে করেই তাদের ঢাকা ফিরিয়ে আনা হয়।
হারুন অর রশিদ জানান, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সীতাকুণ্ডে অভিযান চালানো হয়েছে। ধৃতরা ২৩ দিন ধরে সেখানে আত্মগোপন করে ছিল। আনার খুনে ধৃতরা সরাসরি যুক্ত ছিল। এই অপরাধে অংশ নিয়ে মাত্র ৩০ হাজার বাংলাদেশি টাকা পেয়েছিল তারা।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল ও মোস্তাফিজ হত্যা মিশনের বর্ণনা দিচ্ছে যা এর আগে গ্রেফতার শিমুল ও তানভীরের বক্তব্যের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। আনারকে হত্যার পর তার মাংস টুকরো টুকরো করার দায়িত্ব ছিল ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদের; রিমান্ডে এ বিষয়ও স্বীকার করেছে তারা। শিমুল ভূঁইয়ার কথায় তারা হত্যায় অংশ নেয় বলেও স্বীকার করেছে। তবে গ্রেফতারের সময় মন্দির থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে আঘাত পান তারা। কিছুটা অসুস্থতার কারণে জোরালোভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন শনিবারও ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আনার অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান। তিনি জানান, ‘গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে নতুন করে বলার কিছু নেই।’ তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট অপর এক আধিকারিক বলেন, ‘আখতারউজ্জামান শাহীনকে ছাড়া তদন্ত আর অগ্রসর হচ্ছে না।’
এদিকে আনার খুনের ঘটনায় বাংলাদেশে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভারতে পাঠানো হতে পারে৷ আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে -এ খবর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রের৷ শীঘ্র এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে৷ এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক আধিকারিক জানান, ‘আনার হত্যাকাণ্ডে ভারতের কলকাতার সিআইডিও তদন্ত করছে৷ এ হত্যাকাণ্ডে দুই দেশ মিলিয়ে এখন অবধি ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদের মধ্যে বাংলাদেশে সাতজন ও ভারতে দুজন৷ তদন্তের প্রয়োজনে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার আসামিদের ভারতীয় পুলিশও জিজ্ঞাসাবাদ করবে৷’ এ খুনের ঘটনা তদন্তে আরও অনেক সময় লাগতে পারে জানিয়ে গোয়েন্দা শাখা সূত্রের খবর, আনার হত্যার ঘটনায় পরোক্ষভাবে জড়িত আরো অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷