কলকাতা: বাজারে গিয়ে ইলিশের সম্ভার দেখলেও মন ভরছিল না বাঙালির। অনেকেই ভাবতে বসেছিলেন, কলকাতাবাসীর কি এবার পদ্মার ইলিশ খাওয়া হবে না? দাম দিতে হলেও পদ্মার ইলিশ চেখে দেখতে প্রতিবারই ইলিশ প্রিয় বাঙালির বিশেষ উৎসাহ থাকে। তবে এবার ইলিশ নিয়ে জটিলতা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। অবশেষে ভারতে ইলিশ রফতানিতে সম্মতি দিয়েছে মহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে চলেছে পদ্মার ইলিশের ‘প্রথম চালান’। সব কিছু ঠিকঠাক চললে বৃহস্পতিবারই পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে কলকাতা, হাওড়া-সহ রাজ্যের চারটি বাজারে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের রুপোলি শস্য। শুক্রবার থেকেই রাজ্যের খুচরো মাছবাজারে মিলবে বাংলাদেশি ইলিশ। বুধবার এমনটাই জানালেন ‘ফিস ইমপোর্টার্সঅ্যাসোসিয়েশন’- এর সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ। এ পার বাংলার মৎস্য আমদানিকারক সংগঠনের সম্পাদকের সঙ্গে এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছে বাংলাদেশের ইলিশ রফতানির বরাত পাওয়া সংগঠনও। কত হতে পারে ওই ইলিশের দর? তাই নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।
বুধবার ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দিয়েছে অন্তর্বর্তিকালীন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই অনুমতির মেয়াদ আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে মোট চব্বিশশো কুড়ি মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার। সমস্ত প্রস্তুতি শেষ করে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ থেকে ইলিশভর্তি ট্রাক রওনা দেবে পেট্রাপোল সীমান্তের দিকে। সন্ধ্যাতেই ইলিশ কলকাতায় পৌঁছে যাওয়ার কথা।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একরকম নিয়মিত ইলিশ আসত ভারতে। শেখ হাসিনা সরকার ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, দুর্গাপুজোর সময়ে ভারতে ইলিশ রফতানি করা হত বাংলাদেশ থেকে। এবার হাসিনা নেই, ইউনূসের তরফেও ইতিবাচক বার্তা পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই তৈরি হয়েছিল সংশয়। পরে ভারতে ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইউনূস সরকার।
সব অপেক্ষা শেষে ভারতে আসছে ইলিশ। বুধবার ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক। আগামিকাল, বৃহস্পতিবারই রাজ্যে আসছে ইলিশ। কোন কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কত ইলিশ রফতানি হবে, সেই তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ২৪২০ মেট্রিকটন ইলিশ পাঠানো হচ্ছে ভারতে। এই অনুমতির মেয়াদ আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত।
জানা গিয়েছে, পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইলিশ পৌঁছবে হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে। এছাড়া শিয়ালদহ, পাতিপুকুর ও শিলিগুড়ি পাইকারি বাজারেও পৌঁছে যাবে ইলিশ মাছ। সেই পাইকারি বাজার থেকে বিভিন্ন খুচরো মার্কেটে মাছ চলে যাবে।
অর্থাৎ বাজার থেকে ইলিশ কেনার জন্য আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমদানি হওয়া ইলিশ মাছের দাম কত থাকবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে দাম চড়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কলকাতার সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ।
উৎসবের মরসুমে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে পদ্মার ইলিশ পৌঁছত। পূর্বতন হাসিনা সরকার একে বলত, ‘সৌজন্যের ইলিশ’। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভারতে ইলিশ পাঠানো নিয়ে কঠোর মনোভাবের কথা জানায়। পরে অবশ্য অবস্থান পরিবর্তন করেছে তারা।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে তৈরি জাতীয় রফতানি নীতিতে ইলিশকে শর্ত সাপেক্ষে রফতানি পণ্যের তালিকায় রাখা হয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রথম বিদেশে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়।