দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই। অধিকাংশ অশান্তির কারণই রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত। শুধু তা-ই নয়, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ এবং সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারেও উদ্যোগী মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসন। সোমবার এমনটাই জানিয়ে দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আরও একবার সম্পূর্ণ অস্বীকার। পালা বদলের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে গোটা বিশ্ব সরব। বিশেষ করে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারির পর, এই বিষয় নিয়ে প্রবল চাপে ঢাকা। প্রথম থেকেই অবশ্য তারা অস্বীকারের রাস্তায় হেঁটেছে। একাধিকবার মহম্মদ ইউনূস দাবি করেছেন, সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাগুলি চরিত্রে না কি সাম্প্রদায়িক নয়। বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের অধিকাংশই আওয়ামি লিগ সমর্থক হওয়ায়, তাদের উপর ‘রাজনৈতিক হামলা’ হচ্ছে। এই নিয়ে ভারত ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও দাবি তাদের। সোমবার (৯ ডিসেম্বর), ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রির সঙ্গে বৈঠকেও একই অবস্থানে থাকল বাংলাদেশ। বরং, ভারতে বসে শেখ হাসিনার বিবৃতি দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল তারা।
এ দিন বিকেলে ঢাকার সরকারি অতিথি ভবন, ‘যমুনা’য় মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিক্রম মিস্রি। তার আগে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মহম্মদ জসীমুদ্দিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ জানানো হয়েছে বলে, আগেই জানিয়েছেন ভারতীয় বিদেশ সচিব। তবে, বাংলাদেশ তো সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকারই করছে না। এ দিন এই বিষয়ে কী বলেছে বাংলাদেশ?
সেই দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘অপপ্রচারের জবাব লিখিত ও মৌখিক, বহুভাবেই দেওয়া হয়েছে। যতগুলি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলিকে সাম্প্রদায়িক দেখানোর সুযোগ খুবই কম। সেগুলো কখনও কখনও ব্যক্তিগত, বেশিরভাগই রাজনৈতিক। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান, বাংলাদেশ সরকার এর অংশও নয়, একে কোনওভাবে বরদাস্তও করা হচ্ছে না। যেখানে যেখানে এই ধরনের অভিযোগ এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে।’
বাংলাদেশি বিদেশ সচিব, মহম্মদ জসীমুদ্দিনও সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জোর দিয়ে বলেছি, বাংলাদেশে বসবাসরত সবাই স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করে আসছে। এ বিষয়ে কোনও ধরনের বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই।’
তিনি আরও জানান বাস্তব অবস্থাটা সরেজমিনে দেখার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ভারতের এই বিষয়ে মন্তব্য করার এক্তিয়ার নেই বলেও দাবি করেন তিনি। মহম্মদ জসীমুদ্দিন বলেছেন, ‘আমরা বলেছি, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য করা সমীচীন নয়। বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না। অন্যান্য দেশেরও একই ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আমাদের প্রতি দেখানো উচিত।’
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দিল্লিতে আছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি সেখান থেকেই তিনি আমেরিকার নিউ ইয়র্ক এবং ব্রিটেনের লন্ডনে আওয়ামি লিগের দুটি জনসভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দেন। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে তুলোধোনা করেন ইউনূস সরকারকে। এই বিষয়ে এ দিন তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
জসীম উদ্দিন বলেছেন, ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে যে বক্তব্য রাখছেন, এই বক্তব্যের প্রতি আমরা তাদের (ভারতের) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আপনারা গতকাল শুনেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) একটি বক্তৃতা দিয়েছেন। এটা এই সরকার পছন্দ করছে না। তারাও (ভারত) বলেছে, তাঁর (শেখ হাসিনা) উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না। আমরা বলেছি, তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতে বসে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা আমাদের পছন্দ হচ্ছে না। এটা তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) যেন জানানো হয়।’
তবে, একটি বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ দুই পক্ষই একমত হয়েছে। রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, এ দিনের বৈঠকে বিক্রম মিস্রি বলেছেন, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে। সেই মেঘটি দূর করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও সেই মেঘ দূর করার বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা। কিন্তু, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলে, সেই মেঘ কি কোনোদিন দূর হবে?