দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলাদেশের গাজীপুর মহানগর পুলিশ প্রশাসনের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণ! ঘটনায় গুরুতর জখম হলেন মীরাক্কেলের প্রাক্তন কৌতুকশিল্পী আবু হেনা রনি -সহ মোট পাঁচজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ লাইনস মাঠে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি দু’জনকে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন আবু হেনা রনিও।

আবু হেনা রনি ছাড়া অন্যান্য দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন মোশাররফ হোসেন, জিল্লুর রহমান, ইমরান হোসেন ও রুবেল হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিএমপির চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন আইজিপি বেনজির আহমেদ।

প্রধান অতিথি সেখানে পৌঁছনোর পর তাঁকে উদ্বোধনী মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওড়ানোর জন্য তাঁর হাতে কয়েকটি গ্যাস বেলুন দেওয়া হয়। কিন্তু বারবার চেষ্টা করার পরেও সেই বেলুনগুলো উড়ছিল না। পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেলুনগুলো নিয়ে মঞ্চের পাশে চলে যান। আর সেখান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চলে যান মূল মঞ্চে।

মঞ্চের পাশে নিয়ে গিয়ে ফের সেই বেলুনগুলো ওড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এমন সময় হঠাৎই সেগুলো ফেটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনাতেই গুরুতর আহত হন পাশেই থাকা মীরাক্কেলখ্যাত কৌতুকশিল্পী আবু হেনা রনি ও আরও চারজন। বাকিরা দৌড়ে গিয়ে তাঁদের গায়ে জল ঢেলে সেই আগুন নেভান। সেখান থেকে দ্রুত সবাইকে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁদের মধ্যে থেকে তিনজনকে পাঠানো হয় ঢাকায়।

রনি ও কনস্টবল জিল্লুরকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাঃ এসএম আইয়ুব হোসেন জানান, রনির শরীর ২৪ শতাংশ ও জিল্লুর রহমানের আনুমানিক ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলেও পোড়ার পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এ জন্য তাঁদের ভর্তি রেখে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। 

জিএমপির সহকারী কমিশনার (ডিবি ও মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন বলেন, মঞ্চের পূর্ব দিকে ওড়ানোর জন্য কিছু গ্যাস বেলুন রাখা ছিল। প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও সেগুলো ওড়াতে ব্যর্থ হন। কোনও ত্রুটির কারণে হয়তো বেলুনগুলো তিনি ওড়াতে পারেননি।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের দিকে চলে যান। এরপর বেলুনগুলো নিয়ে যাওয়া হয় উদ্বোধন মঞ্চের পেছনে। কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। উদ্বোধন মঞ্চের পেছনে সব বেলুনই বিস্ফোরিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রনি সহ কয়েকজন আহত হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। সহকর্মীরা দ্রুত আহতদের গাজিপুর শহিদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠান। পরে তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।  

হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের মারফত জানা গেছে যে, অভিনেতা আবু হেনা রনির শরীরের বেশ কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর শ্বাসনালীও বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত আরও দু’দিন না কাটলে কিছু বলা সম্ভব নয়। এখনই তিনি আশঙ্কামুক্ত, এমনটা বলা যাবে না বলেই জানিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ৷

যেহেতু সরকারি অনুষ্ঠানেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তাই সরকার তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্বভার নিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসাই পাচ্ছে রনি। তবে শরীরের অনেকটা অংশ পুড়ে যাওয়ার জন্য ডাক্তাররা রনিকে এখনই বিপদমুক্ত বলছেন না। তবে আশা করা যাচ্ছে, ও শিগগিরই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here