দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাগুইআটিতে জোড়া খুনের তদন্তে পুলিশি অপদার্থতার চরম নজির তৈরি হয়েছিল। তা যেমন পুলিশ ও প্রশাসনের মুখ পুড়িয়েছে তেমন তার ঝাপটা আছড়ে পড়েছিল শাসক দলের উপরেও। তাতে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যকে পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট চাই। যে ভাবেই হোক গ্রেফতার করতে হবে জোড়া খুনে প্রধান অভিযুক্তকে। এ ব্যাপারে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল সিআইডিকে ৷
শেষমেশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রেজাল্ট দিল সিআইডি। শুক্রবার সকালে নাটকীয় ভাবে হাওড়া স্টেশন থেকে জোড়াখুন কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী ওরফে জামাইকে গ্রেফতার করেন সিআইডির গোয়েন্দারা। সঙ্গে ছিল বিধাননগর থানার পুলিশও।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, বাগুইআটি কাণ্ডে সাধারণের ক্ষোভ আন্দাজ করে বুধবার সকালে নিজেই ব্যবস্থাপনায় নামেন পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক তো রাজ্য পুলিশকে সময়সীমা বেঁধে দেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বসু, স্থানীয়কে বিধায়ক অদিতি মুন্সিকে জানিয়ে দেন, নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাঁদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক নিবিড় রাখতে হবে।
তার ফল দেখা যায় হাতেনাতে। বাগুইআটিতে নিহতদের দুই নাবালকের বাড়িতে দফায় দফায় যান সুজিত বসু, ববি হাকিমরা। আর কোমর বেঁধে সত্যেন্দ্রকে খুঁজতে নেমে পড়ে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। সেই সঙ্গে সিআইডি।
নবান্ন সূত্রের মতে, আসলে বাগুইআটি কাণ্ডে পুলিশি অপদার্থতা ছিল এতটাই যে জামাইকে দ্রুত গ্রেফতার করতে না পারলে এ নিয়ে অবধারিত ভাবেই মামলা হত হাইকোর্টে। আর তাতে সিবিআইকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতেই পারত আদালত। কারণ, স্থানীয় মানুষ সিবিআই তদন্তের দাবি জানাতে শুরু করে দিয়েছিল। সেই ঘোলা জলে নেমে একই ধুয়ো তুলতে শুরু করেছিলেন বিরোধীরাও। সেটা আন্দাজ করেই সম্ভবত সিআইডিকে ৪৮ ঘণ্টার টাইম বেঁধে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার বাগুইআটি জোড়া খুনের তদন্তভার সিআইডিকে দিয়েছিল নবান্ন। তারপর থেকে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পারছিলেন, সিম কার্ড বদল করে বারবার লোকেশন বদল করছে জামাই। নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেয়ে এদিন হাওড়া স্টেশনে জাল বিছিয়েছিল সিআইডি।
অবশেষে গ্রেফতার হল বাগুইআটি জোড়া খুন কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী ওরফে জামাই। শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সত্যেন্দ্রর সঙ্গীদের জেরা করে তার সম্পর্কে মিলেছিল নানান তথ্য। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে ধরা হয় জামাইকে।
জামাইকে গ্রেফতার করা একরকম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিআইডির কাছে। এদিন কাকভোরে হাওড়া স্টেশন কার্যত ঘিরে ফেলে সিআইডি ও বিধাননগর পুলিশের বিরাট টিম। সাবাই ছিলেন সাদা পোশাকে। কেউ ছিলেন ফুড প্লাজার সামনে আবার কেউ নিউ কমপ্লেক্স যাওয়ার ফুটপাথে।
সিআইডি প্রাথমিকভাবে মনে করছে, অন্য রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল জামাই। এমনিতে এই সত্যেন্দ্র বিহারের লোক। আটের দশকের শেষ দিকে বাগুইআটি এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেছিল সে। জানা গিয়েছে, বিহারে তার এক স্ত্রীও রয়েছেন।
সিআইডি কর্তারা বৃহস্পতিবারও জানিয়েছিলেন, খুনের মোটিভ এখনও কিছু স্পষ্ট নয়।
গোয়েন্দারা এখন খতিয়ে দেখতে চাইছে, কী কারণে দুই কিশোরকে খুন করল সত্যেন্দ্র। এই নয় যে অতনু এবং অভিষেকের সঙ্গে হঠাৎ কোনও ঝামেলার জন্য খুন করা হয়েছে। কারণ দুই বাড়ির সঙ্গেই জামাইয়ের অনেকদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ইতিমধ্যেই বাইক কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকার বিষয় সামনে এসেছে। যা সত্যেন্দ্রকে দিয়েছিলেন অতনু। এখন দেখার সত্যেন্দ্রকে জেরা করে খুনের কারণ হিসেবে কী জানতে পারে সিআইডি।
অতীতে রাণাঘাটের চার্চে ডাকাতি ও ধর্ষণ কাণ্ডে এভাবেই সাফল্য দেখিয়েছিল সিআইডি। ঘটনার ১১ দিনের মধ্যে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করেছিল মূল অভিযুক্ত এক বাংলাদেশি নাগরিককে। শুক্রবার সত্যেন্দ্রকে গ্রেফতারের পর এ বার জেরা শুরু করতে চলেছে সিআইডি। সূত্রের মতে, খুনের ঘটনায় আরও অন্তত তিন থেকে চার জন জড়িত ছিল। সত্যেন্দ্রকে জেরা করে এবার তাদের সন্ধান করা হবে।