বৃহস্পতিবার, দিল্লির আবগারি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তহবিল তছরুপের মামলায় তাঁকে জামিন দিয়েছিল নিম্ন আদালত। কিন্তু, শুক্রবার (২১ জুন), ইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে, নিম্ন আদালতের সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করল দিল্লি হাইকোর্ট।
দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর আবেদনে সাড়া দিয়ে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের জামিনে মুক্তি স্থগিত রাখল দিল্লি হাই কোর্ট। শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে শুনানির পর বিচারপতি সুধীরকুমার জৈন এবং বিচারপতি রবীন্দ্র দুদেজার বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা করা হবে।
অর্থাৎ, তত দিন পর্যন্ত তিহাড় জেলে থাকতে হবে আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে। বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত কেজরীর স্থায়ী জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শুক্রবার দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করেছিল ওই মামলার তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
ইডির আবেদন মেনে স্থগিতাদেশ না দিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের দুই বিচারপতির অবকাশকালীন বেঞ্চ জানিয়েছিল, হাই কোর্টে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তিহাড় জেলে বন্দি কেজরী মুক্তি পাবেন না। শুক্রবার দুপুরেই শুরু হয় জরুরি ভিত্তিতে শুনানি। গোড়াতেই ইডির আইনজীবী তথা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল রাজু জানান, ‘বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন’ (পিএমএলএ)-এর ৪৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ইডির তরফে জামিনের বিরোধিতা করে জমা দেওয়া নথিগুলির যথাযথ ভাবে বিবেচনা করার কথা ছিল রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের।
তাঁর অভিযোগ, সেই নথিগুলি পর্যালোচনা না করেই একতরফা ভাবে জামিন দেওয়া হয়েছে আপ প্রধানকে। অন্য দিকে, কেজরীর আইনজীবী দাবি করেন, তদন্তকারী সংস্থা তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি।
আবগারি মামলায় গত ২১ মার্চ কেজরীকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি। পরে লোকসভা ভোটের আগে প্রচারের জন্য তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল। সেই মেয়াদ শেষ হলে আবার তিনি তিহাড় জেলে ফিরে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার আম আদমি পার্টির প্রধানের স্থায়ী জামিনের মঞ্জুর হয় রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে।
কেজরীর স্ত্রী সুনীতা শুক্রবার অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত জামিন মঞ্জুর করার পরে সেই রায় ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়ার আগেই দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ইডি।
প্রসঙ্গত, ইডির তরফে বৃহস্পতিবার কেজরীর জামিন ৪৮ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে। কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি। বিচারক ন্যায় বিন্দু ১ লক্ষ টাকার বন্ডে জামিন দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। সুনীতা শুক্রবার বলেন, ‘‘দেশে স্বৈরতন্ত্র সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে।’’
অন্যদিকে কেজরীবালের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী, অভিষেক মনু সিংভি। তিনি জানান, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর জামিন নয়, গ্রেফতারের বৈধতা যাচাই করছে। গ্রেফতারির বৈধতার বিষয়ে রায় সংরক্ষিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। জামিন মঞ্জুর করার বিষয়ে খুব স্পষ্ট আইন আছে। অরবিন্দ কেজরীবাল এক পয়সা নিয়েছেন বলে জানা যায়নি। অন্যদিকে, যার বিবৃতির ভিত্তিতে কেজরীবালতকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই অরবিন্দ ফার্মার ডিরেক্টর, শরথ রেড্ডিকে সামান্য পিঠের ব্যথার কারণে জামিন দেওয়া হয়েছে। কেজরীবালের পক্ষে হাজির ছিলেন আরেক বরিষ্ঠ আইনজীবী, বিক্রম চৌধুরীও। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজুর দাবি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতে ইডি সাত ঘন্টার ধরে তর্ক করেছে। এটা কি যথেষ্ট নয়?”