দেশের সময়, বনগাঁ: সোমবার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)-র বারাসত ও বনগাঁ শাখার পক্ষ থেকে নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে গণস্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র দেওয়া হয় ।
যশোর রোডের বারাসত থেকে বনগাঁর মাঝে ৩০৬টি প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন গাছ কেটে পাঁচটি উড়ালপুল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গাছ কাটার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে বিকল্প প্রস্তাব-সহ প্রকল্প এলাকার মানুষের এই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরাও।
ওই সংস্থা জানিয়েছে, যশোর রোডকে কেন্দ্র করে এপিডিআর দীর্ঘ ৮ বছরের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ২০১৫-র ৫ জুলাই যশোর রোড চওড়া করা এবং ওই পথে রেলের পাঁচটি লেভেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুল নির্মাণের নামে সব মিলিয়ে ৪০৩৬টি গাছ কেটে ফেলার পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছিল সংবাদপত্র মারফত।
এপিডিআরের বারাসত, বনগাঁ, মসলন্দপুর-গোবরডাঙ্গা-ঠাকুরনগর শাখা গাছ বাঁচাতে উদ্যোগী হয়। উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলাশাসক, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, সর্বোচ্চ বনাধিকারিক এবং বারাসত থেকে বনগাঁ অঞ্চলের সাংসদ ও বিধায়কদের কাছে গাছ রক্ষায় দাবিপত্র পেশ করা হয়। আন্দোলনে যুক্ত হন বিশিষ্ট উদ্ভিদবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, গবেষক ও বহু পেশার মানুষজন। দাবি ওঠে–‘যশোর রোডের গাছের সারিকে হেরিটেজের স্বীকৃতি দিতে হবে’, ‘একটি গাছও কাটা চলবে না’।
এতদিনের এত আবেদনেও হেলদোল দেখা যায়নি প্রশাসনের। জনমতকে অগ্রাহ্য করে ২০১৭’র ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বনগাঁয় গাছ কাটা শুরু হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে।
২০১৭-র ২৮ এপ্রিল যশোর রোডের গাছ কাটায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট। আদালতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে প্রথম ‘হলফনামা’য় উল্লিখিত ৪০৩৬টি গাছ কাটার প্রস্তাবের পরিবর্তে শুধু ৫টি উড়ালপুল নির্মাণে ৩৫৬টি গাছ কাটার কথা বলা হয়।
সরকারপক্ষের বয়ানে আস্থা না রাখতে পেরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চ দু’জন আইনজীবীকে স্পেশাল অফিসার নিযুক্ত করেন। এপিডিআর জানিয়েছে, স্পেশাল অফিসারদের রিপোর্টে যশোর রোডের গাছগুলিকে ‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়।
কিন্তু ২০১৮-র ৩১ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্ট উড়ালপুল নির্মাণের স্বার্থে ৩০৬টি গাছ কাটার প্রস্তাবে সায় দেয়। এপিডিআর হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে। গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ জারি করে সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট ৩০৬টি গাছ কাটার উপরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এপিডিআরের দাবি, গাছ কাটা আটকাতে হস্তক্ষেপ করুন মুখ্যমন্ত্রী।