দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রের নতুন ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। সেনায় চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। বিহার, উত্তরপ্রদেশে একের পর এক ট্রেনের কামরায় আগুন ধরানো হচ্ছে। এমনকী বিহারে উপমুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও আগুন দেওয়া হল।
সেই আঁচ ছড়িয়েছে বাংলাতেও। উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় বিক্ষোভের পর আজ ঠাকুরনগর স্টেশনে রেল অবরোধ করল বিক্ষোভকারীরা। অবরোধে আটকে পড়ে আপ ও ডাউনের বিভিন্ন ট্রেন।
অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরী হয় ঠাকুর নগরে ৷ বিক্ষোভ, ভাঙচুর, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে ঠাকুরনগর স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করলেন বিক্ষোভকারীরা। এর জেরে শিয়ালদা-বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা।
সূত্রের খবর, এদিন সকাল থেকে রেল অবরোধ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। যার জেরে ব্য়স্ত সময়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিট নাগাদ অবরোধ শুরু হয়েছে। অবরোধের জেরে দাঁড়িয়ে ডাউন বনগাঁ-মাঝেরহাট লোকাল। আপ লাইনে গোবরডাঙা পর্যন্ত ট্রেন চলছে। যদিও এই বিষয়ে রেল সূত্রে এখনও কিছু জানা যায়নি।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, বহুদিন ধরে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর মাত্র চার বছরের জন্য় নিয়োগ করা হবে। চার বছর পরে ১১ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপরে আমরা কী করব? কোথায় চাকরি পাব? আমাদের সংসার চলবে কী করে?
নরেন্দ্র মোদী সরকার জানিয়েছিল, সেনাতেও চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের আওতায় চার বছরের জন্য ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ করা হবে। প্রথম বছর এই ‘অগ্নিবীর’রা পাবেন মাসে ৩০ হাজার টাকা। চতুর্থ বছরে সেই টাকার অঙ্ক দাঁড়াবে ৪০ হাজারে।
আয়ের ৩০ শতাংশ তাঁরা জমাতে পারবেন। সম পরিমাণ টাকা দেবে সরকারও। নয়া প্রকল্পে চার বছরের মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২৫ শতাংশকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বাকি ৭৫ শতাংশ আর সেনাবাহিনীতে রাখা হবে না। সেই সময় তাঁদের দেওয়া হবে ১০-১১ লক্ষ টাকা ভাতা, যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত।
কিন্তু যাদের রাখা হবে না তারা সেনাবাহিনীর অবসরকালীন কোনও সুযোগসুবিধা পাবেন না। এমনকি নিজেদের প্রাক্তন সেনাকর্মীও বলতে পারবেন না। এই ঘোষণার পরেই দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান সহ দেশের আট রাজ্যে তুমুল বিক্ষোভ চলছে।
সেনায় নিযুক্তির ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘিরে বিক্ষোভ চলছে গত তিন দিন ধরেই।হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশেও একই ছবি। এদিন বিহারের পশ্চিম চম্পারণে বেট্টিয়াতে উপমুখ্যমন্ত্রী রেণু দেবীর বাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। এখন তিনি পাটনায়। গত কাল থেকেই বিহারে ট্রেনে ভাঙচুর চলছে। হচ্ছে রেল অবরোধ।
বৃহস্পতিবার বিজেপি সাংসদকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। আজ বেগুসরাই, লক্ষ্মীসরাই স্টেশনে পাথর ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা। বসে পড়ে রেল লাইনে। বিহারের মহিউদ্দিন নগর স্টেশনে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেসের দু’টি কামরায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও হতাহত কেউ হননি।সোশ্যাল মিডিয়ায় দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা ট্রেন এবং ভিডিও ছবি সামনে এসেছে।
বিহারের বক্সারে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানে একাধিক স্টেশনে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সামনে এসেছে। পাটনাগামী জনশতাব্দি ট্রেন সেখানে ৩০ মিনিট আটকে রাখা হয়। এমন পরিস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত বিহারে ৩৮টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ৭২টি ট্রেনের, যার মধ্যে রয়েছে পাঁচটি এক্সপ্রেস ট্রেন. ২৯টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ১১টি ট্রেন আপাতত বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে রেলের তরফে।