পার্থ সারথি নন্দী , বনগাঁ: গরম পড়তেই লাফিয়ে বাড়ছে এসির বিক্রি। বিক্রেতারা বলছেন, করোনার জন্য দু’বছর বিক্রি তলানিতে ছিল। এবার বিক্রি শুরু হয়েছে। যেহেতু মধ্যবিত্তের কাছে এসি আর বিলাসপণ্য নয়। তাই তাঁরা কিস্তিতে কিনছেন এসি।

জয়পুরের সুকুমার দেবনাথের বাড়ির এসি ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই তিনি নতুন এসির খোঁজে এসেছিলেন কোর্টরোডের একটি বড় দোকানে। সেখানে এসে জানতে পারলেন ওই পুরনো এসি দিলে নতুন এসির ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন তিনি। যে কারণে নতুন প্রযুক্তির স্প্লিট এসি পছন্দ করলেন। দোকানের সেলসম্যানরা জানালেন, তাঁদের প্রতিনিধিরা গিয়ে নতুন এসি পৌঁছে দেবে।

বিশ্বজিৎ বিশাস বললেন, ‘দেড় টনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এসি নেব। হিসেব করে দেখলাম। মাসিক কিস্তিতে নেওয়াই সুবিধাজনক। কয়েক দিন ধরে নতুন একটা কিনব ভাবছিলাম। আজ একটু দামের বিষয়ে খোঁজ খবর নিলাম, বেশ ভাল এসি কমদাম কিনেই ফেলব এই সপ্তাহে। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। এই গরমে তাদের অবস্থা কাহিল।’

ওই দোকানের বিক্রেতারা জানালেন, এক টন বরফের একটি ব্লক গলতে ২ লাখ ৮৮ হাজার বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট, এটা তাপের একটা একক) তাপের প্রয়োজন হয়। সোজা কথায় বললে, ঘরে এক টনের এসি থাকা মানে রুম থেকে প্রতি ঘন্টায় ১২,০০০ বিটিইউ বা ১০০০ কিলোক্যালরি তাপ বের করে দেওয়া।

বনগাঁর একটি বড় দোকানের ম্যানেজার সন্দিপ চ্যাটার্জী জানালেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এখন তুলনামূলক কম দামে এসি পাওয়া যায়। আবার সব টাকা এক সঙ্গেও দিতে হয় না। ছয় থেকে ১২ মাসের কিস্তির সুযোগও রয়েছে। এসি সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা।

যশোর রোডের এক দোকানি জানালেন, ফাইভ স্টার দেড় টনের এসির দাম ব্র্যান্ড ভেদে ৪৪ হাজার থেকে ৪৬ হাজারের মধ্যে। ফিটিং খরচ আলাদা। আরও দু-তিনহাজার। আর থ্রি স্টার নিলে ৩৭ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে দাম।

স্কুল রোডের একটি বড় ইলেকট্রনিক্স এর শোরুমের কর্ণধার ” সত্য মজুমদার জানান, এখন বেশিরভাগ এসিতেও ডবল কনভার্টার। অর্থাৎ, ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলে নিজে নিজেই এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মোডে চলে যাবে। খরচ কমবে। পাশাপাশি বাজারে রয়েছে ‘নো উইন্ড’ এসি। এসির হাওয়ায় ত্বক খসখসে হয়ে যায় অনেকের। সংস্থার দাবি, এই এসিতে হাওয়া এমনভাবে ছড়াবে, ক্ষতি করবে না।

বাটা মোড়ের শো-রুমে এসি দেখতে আসা দত্ত পারার অভিজিৎ সেন বললেন, ‘এসিতে ঘুমোনোর বিলাসিতা আমার নেই। কিন্তু আমাদের ঘর তিনতলায়। তার ওপর ছাদ। দিনভর রোদে ছাদ তেতে রাতে ঘর খুব গরম হয়ে যায়। ছোট ছোট ঘর। গরমে দেড় বছরের বাচ্চা, সারারাত ঘ্যানঘ্যান করে। তাই কিস্তিতে একটি দেড় টনের এসি কেনার চেষ্টা করছি। সুবিধামতো দামে মিললেই কিনে ফেলব। একসঙ্গে পুরো দাম শোধ করা সম্ভব নয়, কিস্তিই ভরসা।’

হাবড়ার দোকানের বিক্রেতা সুমন বললেন, ‘আগের চেয়ে এসির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে এবার যে গরম পড়ছে, বিক্রি দ্বিগুণ হওয়ার কথা। কিন্তু সেই অনুযায়ী বিক্রি নেই। দু’বছর আগে এইসময় দিনে অন্তত তিরিশটা এসি বিক্রি হয়েছে। এবছর দিনে দশ-বারোটা বিক্রি হচ্ছে। গতবছর বিক্রি কম হলেও মানুষের পকেটে তখন টাকা ছিল। কিন্তু এখন নগদ টাকা অনেক কম। তাই বেশিরভাগ ক্রেতাই কিস্তিতে চাইছেন।’

বিক্রোতারা বলছেন, ২০২০ সালে গুজব ছড়িয়েছিল যে, ঠান্ডায় কারোনার প্রকোপ বাড়ে। তখন এসির বিক্রি কিছুটা কমে গিয়েছিল। এবারের তাপমাত্রার ঊর্ধ্বমুখী পারদ আবার বিক্রি বাড়াচ্ছে। সেইসঙ্গে এসিতে নতুন নতুন ফিচার যোগ করছে কোম্পানিগুলো।

এক সংস্থার দাবি, তাদের এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ধুলোবালি থেকে ঘরের হাওয়া শুদ্ধ রাখে। অন্য এক সংস্থা বলছে, তাদের এসি ইনভার্টার প্রযুক্তির, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। কিছু এসিতে ভয়েস কন্ট্রোল প্রযুক্তিও সংযুক্ত হয়েছে। কানেক্ট করা যাবে ফোনের সঙ্গেও। ঘরের বাইরে থেকেই মোবাইলের মাধ্যমে তা বন্ধ করা যায়। হাবড়ার বাসিন্দা অনন্যা ঘোষ জানান নতুন প্রযুক্তির এসি বাংলার নতুন বছরে কিনলাম তাও আবার কিস্তিতে তীব্র গরমে একটু স্বস্তি ফিরে পাব ভেবে ভাল লাগছে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here