Abhishek Banerjee: ‘বাজারে রটিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমি বিজেপিতে যাচ্ছি’, ইনডোরের মঞ্চে গুজবের স্পষ্ট জবাব অভিষেকের

0
19

বিজেপিতে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? এই জল্পনা শোনা যাচ্ছে অনেকদিন ধরে। আজ তৃণমূলের কর্মিসভা থেকে যাবতীয় জল্পনার উত্তর দিয়ে দিলেন খোদ অভিষেকই।

মহারাষ্ট্রে শরদ পাওয়ারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পদ্মশিবির যেভাবে অজিত পাওয়ারকে কাজে লাগিয়েছিল, বাংলাতেও তার পুনরাবৃত্তি হবে বলে একটা প্রচার গত বছর খানেক ধরে চলছে। অজিত পাওয়ার শরদ পাওয়ারের ভাইপো। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ কেউ এও রটিয়ে দিয়েছিলেন যে অভিষেক নতুন দল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।


বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের বর্ধিত কর্মিসভার মঞ্চ থেকে সেই গুজবের জবাব দিলেন অভিষেক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন,“বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, অভিষেক বিজেপিতে যাচ্ছে, নতুন দল করছে। কিন্তু জেনে রাখুন, আমি বেইমান নয়। আমার গলা কেটে দিলেও আমি বিজেপিতে যাব না”।

অভিষেক এএও বলেন, “আমি অন্য ধাতুতে তৈরি, মানুষের কাছে যাব, মাথানত করে কাজ করব, কিন্তু বিজেপির বশ্যতা স্বীকার করার লোক আমি নই।”

অভিষেক যে গুজবের প্রসঙ্গ তুলেছেন, তা শুধু বিরোধী শিবিরে নয়, তৃণমূলের একাংশেও ছড়িয়েছিল। এমনকি এই ধারণাও তৈরির চেষ্টা হচ্ছিল যে এ কারণে দিদি ও অভিষেকের মধ্যে সম্পর্কে একটা আড়ষ্টতা তৈরি হয়েছে। অবিশ্বাসের পরত জমছে।

বৃহস্পতিবারের মঞ্চকে সেই ধুলো সাফ করারই চেষ্টা করলেন অভিষেক। যে ধন্ধ ও ধারণা চাড়িয়ে গিয়েছিল, তা তিনি পরিষ্কার করার চেষ্টা করলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। 

এই প্রসঙ্গে অভিষেক এদিন টেনে এনেছেন শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়দের প্রসঙ্গও। অভিষেক বলেন, “মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো বেইমানকে আমিই চিহ্নিত করেছিলাম। আগামিদিনেও কেউ বেইমানি করলে তাদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে তুলে নিলাম।”

এদিন অভিষেক যখন এ সব কথা বলছিলেন, তখন মঞ্চে বসে ঠায় সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত আগে থেকেই স্থির ছিল যে বৃহস্পতিবারের বর্ধিত কর্মিসভায় মূল বক্তা থাকবেন দুজনেই। মমতা ও অভিষেক। অনেকে মনে করছেন, দুজন নিজেদের মধ্যে তালমিল রেখেই এদিন কথা বলেছেন কর্মিসভায়।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, অভিষেক যে এদিন গুজবের কথা বলেছেন, তা ছড়ানোর দায় চাপিয়েছেন একাংশ সাংবাদিকের উপর। তাঁর কথায়, আমি জানি এর নেপথ্যে কারা। তবে এই মঞ্চ থেকে তাঁদে নাম জানিয়ে সভার অমর্যাদা করব না।

অভিষেকের কথায়, “আমি সকাল বিকাল কথা পাল্টাই না। পাঁচ বছর আগে যখন ইডি, সিবিআই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, তখনও বলেছিলাম, প্রমাণ থাকলে দিন, আমি নিজে ফাঁসির কাঠিতে ঝুলে যাব। আজও বলছি।”

২০২৬ সালের টার্গেট বেধে দিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, “বিজেপি যে কীভাবে বাংলাকে কলুষিত করেছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০২১-এ ২১৪টা আসন পেয়েছিলাম, সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে আমাদের ২১৫-রও বেশি আসন নিয়ে চতুর্থবার যাতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে।”

এরপরই সিবিআইয়ের দিকে নিশানা দাগেন অভিষেক।

বুধবার রাজ্য রাজনীতিতে একটি খবরে নতুন করে শিরোনামে উঠে আসে অভিষেকের নাম। এদিন ওই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, “আমার বিরুদ্ধে নাকি সিবিআই চার্জশিট দিয়েছে। ২৮ পাতার চার্জশিটে ২ বার আমার নামটা লিখেছে, কোথাও পরিচয় নেই, বাবার নাম, ঠিকানা কিচ্ছু নেই। বিজেপি নেতারা যেমন ভাব বাচ্যে কথা বলে, তেমনই ইডি, সিবিআইও ভাববাচ্যে কথা বলছে। ওরা ভয় পেয়েছে, এটা ভাল লাগছে আমার।”

খবরে যা বেরয়, একশোতে একশোটাই মিথ্যা। ১২ লক্ষ মানুষকে বাড়ি দিয়েছে আমাদের সরকার, একটা খবর দেখেছেন? একদিনের জন্য সিবিআই দফতরে গিয়েছি, ১০ ঘণ্টা জেরা করেছে। তারপরের দিন আবার বাঁকুড়ায় গিয়ে জনজোয়ার শুরু করেছি। আপনি কী ভাবছেন, ধমকে চমকে দমিয়ে রাখবেন?”

দলীয় কর্মীদেরও ভোকাল টনিক দেন অভিষেক। বলেন, “নিজেদের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখলে হবে না। জননেত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলি নিয়ে যেতে হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত। আমি দলের মুখপাত্র, আমি দলের সাংসদ, আমার কত ক্ষমতা, আমি টাউন চেয়ারম্যান, আমার কত ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে আপনি দলকে ছোট করছেন। যারা এই কাজগুলি করেছেন, তাতে একটা ভাল হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে।”

দলীয় কর্মীদের কাছে আর্জি জানিয়ে দলের সেকেন্ড ইন কম্য়ান্ড বলেন যে ৭০-৭৫টা আসন বিজেপি জিতেছিল, তার মধ্যে ১০টা তো চলে এসেছে। নির্বাচন যখনই হয়েছে, যারা বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসেছেন, মানুষ দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করেছে। আমি অনুরোধ করব, এক বছর সব ভেদাভেদ ভুলে মিলিতভাবে কাজ করুন।

এদিন অভিষেক আরও জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল স্তরের কর্মী প্রত্যেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। ২৬-এর নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী করার লক্ষ্যেই সকলকে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

কর্মীদের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, ‘সর্বস্তরের কর্মীকে নিয়ে কাজে নামতে হবে। কে কবে ফোন করে নির্দেশ দেবে তার পর কাজে নামব, এই অপেক্ষায় না থেকে নিজেরা যাঁরা দলকে ভালোবাসেন, তাঁরা মানুষের কাছে যান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী কর্মসূচি সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। লড়াইয়ে এক ছটাক জমিও ছাড়া যাবে না। বুকের রক্ত দিয়ে আগলে রাখতে হবে দলকে।’

Previous articleTMC Meeting at Netaji Indoorআজ নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের ‘মেগা ইভেন্ট’, রাজ্যের বুথে-বুথে বসছে জায়ান্ট স্ক্রিন  , দলনেত্রীর বার্তা শোনার অপেক্ষায় নেতা-কর্মীরা
Next articleMamata Banerjee’আর ২-৩ বছর আয়ু আছে বিজেপির’ !দিনক্ষণ জানিয়ে ২০২৬-এর টার্গেট বেঁধে দিলেন মমতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here