Abhishek Banerjee: এটা ট্রেলর, এরপর দিল্লির বুকে আন্দোলন হবে,অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

0
504

দেশের সময় , কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে দলের একাধিক মন্ত্রী বিধায়ক, শীর্ষ স্তরের নেতাদের নাম। সঙ্গে গরু ও কয়লা পাচারের কেস তো রয়েইছে। এই পরিস্থিতি দুর্নীতি ইস্যুতে শাসকদলকে বিঁধছেন বিরোধীরা। এখন বিরোধীদের বিঁধতে পাল্টা স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে শাসকদল। তা অবশ্য তৃণমূলের বিগত কয়েকদিনের কর্মসূচিতেই স্পষ্ট হয়েছে।

বুধবার শহিদ মিনারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতে তা আরও স্পষ্ট প্রতীয়মান হল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলের এখন মুখ্য হাতিয়ার তাঁদের দলেরই ভাবমূর্তি। অর্থাৎ অভিযোগ মেনে নিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে, হ্যাঁ দলের কিছু লোকের ভুল হয়েছে। তবে তৃণমূল এমন এক দল যেখানে দুর্নীতিগ্রস্তদের জায়গা নেই। তৃণমূলই একমাত্র দল যেখানে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর দলের এই স্ট্যান্ড পয়েন্টকেই ভালভাবে দলীয় কর্মীদের ‘স্পুন ফিড’ করালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে অভিষেক বললেন, “যখন মানুষের কাছে যাবেন তৃণমূলের ব্যাজ়টা পরে যাবেন। কারণ এই দলই দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেয়।”

চৈত্রের কাঠফাটা রোদেও তৃণমূলের ছাত্র-যুব সমাবেশের জমায়েত শহিদ মিনার ছাপিয়ে গিয়েছে। বুধবার সেই মঞ্চ থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিলেন, বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার যদি আর্থিক অবরোধ জারি রাখে তাহলে দিল্লির বুকে এরপর আন্দোলন হবে।

এদিন অভিষেক বলেন, ‘এটা তো সবে ট্রেলর দেখালাম। এরপর দিল্লির বুকে আন্দোলন করব। প্রতিটি বিষয় দিল্লি থেকে ছিনিয়ে আনব, প্রস্তুত থাকুন।’

বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা, আবাস, সড়ক যোজনা থেকে ১০০ দিনের কাজের মতো পকল্পের টাকা বন্ধ করে রাখার প্রতিবাদেই বুধবার দু’দিনের ধর্না কর্মসূচি শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির নীচে ধর্নায় বসেছেন মমতা। এর ৬০০ মিটার দূরে শহিদ মিনারে এদিন একই ইস্যুতে সভা ডেকেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব তৃণমূল। সেখানেই অভিষেক বলেন, ‘শুধু একশ দিনের কাজ, সড়ক যোজনা বা আবাস যোজনা নয়। এইরকম মোট ১০৬টি প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।’

এদিন ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে দেওয়া নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার প্রসঙ্গও টানেন অভিষেক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সেবার এসে মোদী বলেছিলেন দোনো হাত মে লাড্ডু মিলেগা। এখন দেখা যাচ্ছে ১০০ দিনের কাজ আর আবাস যোজনায় দিল্লি সত্যিই লাড্ডু ধরিয়ে দিয়েছে।’ অভিষেকের স্পষ্ট কথা, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে আসলে গ্রামীণ মানুষের পাতের ভাত কাড়তে চাইছে দিল্লি।

এর পাল্টা আবার শ্যামবাজারের কর্মসূচি থেকে বিজেপির নেতারা বলেছেন, ১০০ দিনের কাজের টাকার মজুরি মেরে দিয়েছে তৃণমূল। সেইসব পাইপয়সার হিসাব না দিলে কেন্দ্র টাকা পাঠাবে কেন? গ্রামীণ মানুষ তৃণমূলের থেকেই হিসাব বুঝে নেবে।

এদিন সভায় অভিষেক আরও বলেন, ” মানুষের কাছে যখন যাবেন মাথা উঁচু করে বুক ঠুকে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী হিসাবে যাবেন। ” উদাহরণ হিসাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। অভিষেক বলেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ৬ দিনের মাথায় সাসপেন্ড করেছি, মন্ত্রিসভা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। কোন দল এমনটা করতে পারে কি? এক মাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।”

যদিও এখানে প্রশ্ন তোলাই যেতে পারে, অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গ। তিনিও তো গুরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত। আপাতত যাঁর তিহাড় জেলই বাসস্থান। তাঁকে কেন জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হল না? প্রশ্ন অবশ্য জিইয়ে রেখেছেন বিরোধীরাই।

বলাই বাহুল্য, এদিনের গোটা সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে দেখা গিয়েছে। তিনি বারবারই উপস্থিত দলীয় কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন, পঞ্চায়েত আগে মানুষের কাছে যেতে হবে তাঁদের, দলীয় ব্যাজ় লাগিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হবে তাঁদের। বলতে হবে তাঁরাই তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক। যে দল দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।

তুলে আনেন সিবিআই ইডি প্রসঙ্গ। ইডি, সিবিআই, যদি কাউকে মিথ্যে মামলায় ডাকে, তাহলে তাঁরা যেন ‘একডাকে অভিষেক-এ’ ফোন করেন, তিনি পাশে দাঁড়াবেন। সারদা, নারদা মামলার প্রসঙ্গ তুলে এনে বলেন, শুরু থেকেই বারবার আক্রমণ ছিল তাঁর দিকে। তিনি আজ বলেন, কোনও দুর্নীতিতে ইডি সিবিআই, বা কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যদি তাঁর যোগ সাজশ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে শহিদ মিনারে এসে মৃত্যুবরণ করবেন। বক্তব্যের শেষভাগে এসে তিনি বলেন, ‘দিল্লি অচল করে দেখাব, এটা আমার প্রতিজ্ঞা।’ এপ্রিলে মানুষকে সংগঠিত করতে জেলায় জেলায় কর্মসূচি রয়েছে অভিষেকের। আজ নিজে সেকথা জানান তিনি। বলেন প্রয়োজনে আরও বেশি করে যাবেন মানুষের কাছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আসলে এই ‘দুর্নীতি’ নামক শব্দটি হাতিয়ার করেই দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও রুখে দাঁড়ানোর প্রয়াসে নেমেছে তৃণমূল। এদিনের অভিষেকের সভা তারই ‘ট্রেলর’দেখাল।

Previous articleMamata Banerjee Dharna: ‘এটা দলের প্রোগ্রাম’, ধরনা মঞ্চ থেকে বিভ্রান্তি কাটালেন মমতা
Next articleMamata Banerjee: ধর্না মঞ্চে দ্বিতীয় দিনে মাইক হাতে মমতা গলা মেলালেন রবীন্দ্র সংগীতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here