দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় পর সাধারণ কর্মীদের মুখোমুখি হলেন তিনি। মুখোমুখি হলেন সাংবাদিকদেরও। ফলে যে প্রশ্নটা খুব অবধারিত ছিল, তার উত্তর দিয়েই শুরু করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
এদিনও সাংবাদিক বৈঠকে পরিষ্কার করেই তিনি বলেন, তিনি নির্ভর করেন সংখ্যায় । বিশ্বাস করেন একটি মন্ত্রে , ‘পারফরম্যান্স’। কর্মদক্ষতা। তিনি মনে করেন, দক্ষ না হলে পদ থেকে সরে যেতে হবে। দলের পদে থাকার এক এবং একমাত্র শর্ত হবে সংশ্লিষ্ট নেতা, কর্মীর দক্ষতা। তাঁর ‘আনুগত্য’ নয়।

সেই নিরিখেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তৃণমূলের অন্দরে বড় ‘রদবদল’-এ প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের সেনাপতি জানিয়েছিলেন, ‘পারফরম্যান্স’ জরিপ করে পুরসভা স্তরে প্রশাসনে এবং সংগঠনে রদবদলের পথে হাঁটবে দল।

যার পটভূমি ছিল, লোকসভা ভোটে শহরাঞ্চলে তৃণমূলের খারাপ ফল। সারা রাজ্যে মোট ৭০টিরও বেশি ‘কর্পোরেশন’ এবং পুরসভা (মিউনিসিপ্যালিটি) এলাকায় তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে ছিল বিজেপি। যার মধ্যে ছিল কলকাতাও। দলের অন্দরে সাংগঠনিক পরিবর্তনের হাওয়া তখন থেকেই বইতে শুরু করেছিল।

বৃহস্পতিবার অভিষেক যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট যে, তৃণমূলে বদলের সেই হাওয়া ঝড়ে পরিণত হতে চলেছে।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এদিনও অভিষেক যে কথা বলেছেন, তা শুধু জেলা বা পুরসভা স্তরের নেতাদের জন্য উদ্বেগের নয়, রাজ্যস্তরের বহু নেতার ঘুম কেড়ে নিতে পারে।

বৃহস্পতিবার অভিষেক বলে দিয়েছেন, ‘‘আপাতত কলকাতায় কোনও বদল হচ্ছে না।’’ তবে পাশাপাশিই তিনি বলে রেখেছেন, ‘‘পরে সেটাও হবে। কারণ, এর পরে পঞ্চায়েত স্তরেও আমাদের রদবদল করতে হবে।’’ অভিষেক আরও এক বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘পারফরম্যান্স’ই তাঁর কাছে শেষকথা। ‘আনুগত্য’ কোনও পদে থাকার সূচক নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আনুগত্য দিয়ে আমি কী করব? ভাল ছেলে। কিন্তু কোনও কাজের নয়। আমার লাভ কী?’’

২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে রদবদল হবে। তার আগেই সেই সংক্রান্ত দলীয় সুপারিশ বা প্রস্তাব নেত্রীর কাছে জমা পড়বে। সেই সময় মেনেই প্রস্তাব জমা পড়েছিল মমতার কাছে। যদিও শারোদোৎসবের জন্য সেই রদবদল করা হয়ে ওঠেনি। উপরন্তু, ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন এসে পড়েছে। অভিষেক অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, উপনির্বাচন মিটলেই রদবদল ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।

শুধু পুরসভার প্রশাসনিক স্তরের পাশাপাশিই একাধিক সাংগঠনিক জেলা সভাপতিও বদল করতে চলেছে তৃণমূল। অভিষেক জানিয়েছেন, অনেকগুলি জেলা সভাপতি পদেই বদল করা হবে। কত জন, সেই সংখ্যা নির্দিষ্ট করে তিনি বলেননি। তবে কমবেশি ১০ জন জেলা সভাপতি বদল করে সংগঠনে বড় ‘ঝাঁকুনি’ দিতে চলেছে শাসকদল। এই সমস্ত বদলেরই ‘মাপকাঠি’ লোকসভা ভোটের ফলাফল। অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ নিয়ে সাংগঠনিক স্তরে কোনও সমীক্ষা করানো হয়নি। ‘সূচক’ লোকসভার ফল। তার ভিত্তিতেই রদবদল করা হবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনে নাড়াচাড়া দিতেই যে বদল, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি।

কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, ভাইফোঁটার পরদিন তথা গত সোমবার রদবদলের ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে অভিষেকের। জেলা ও পুরসভা ধরে ধরে কোথায় কাকে সরানো দরকার বা কাকে দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন, তার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কোনও কৌশলের বদল না হলে এ মাসের মধ্যেই সেই রদবদলের বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।
